জিআরএস পদে নতুন নিয়োগ নিয়ে বিধানসভায় ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্য ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর বাদানুবাদ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩ সেপ্ঢেম্বর৷৷ জিআরএস পদে নতুন করে নিয়োগের ক্ষেত্রে পুরনোদের ছাঁটাই না করার আবেদন জানিয়েছেন ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্য সুদীপ রায়বর্মণ ৷ এ-বিষয়ে উপমুখ্যমন্ত্রী তথা গ্রামোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মার দাবি, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পুরনোরাও সুযোগ নিতে পারবেন৷ তাঁদের বয়সে এককালীন ছাড় দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হবে না ৷ এতে সুদীপবাবুর বক্তব্য, অযোগ্যদের শাস্তি দিতে গিয়ে সমস্ত জিআরএসদের কর্মচ্যুতির পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করানো উচিত হবে না ৷ মঙ্গলবার ত্রিপুরা বিধানসভা বর্ষাকালীন অধিবেশনের অন্তিম দিনে স্বল্পকালীন প্রশ্ণের জবাবে ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্য এবং উপমুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ হয়েছে ৷
এদিন ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্য সুদীপ রায়বর্মণের ডাবল তারকাচিহ্ণ যুক্ত প্রশ্ণের জবাবে উপমুখ্যমন্ত্রী তথা গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জানান, বর্তমানে রেগা প্রকল্পে ১,৯৬২ জন জিআরএস কর্মরত রয়েছেন ৷

তবে, আরও জিআরএস নিযুক্তির কোনও পরিকল্পনা নেই ৷ কিন্তু নতুন করে ১,৯৬২ জন জিআরএস নিযুক্তির বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে ৷ তখন সুদীপবাবু বলেন, একই পদে সমসংখ্যক জিআরএস নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট, পুরনো জিআরএসদের ছাঁটাই করা হবে৷ ফলে সব-কা সাথ, সব-কা বিকাশ এবং সব-কা বিশ্বাস, এই মূলমন্ত্র থেকে আমরা সরে আসছি বলেই মনে হচ্ছে৷ তাঁর বক্তব্য, কোনওভাবেই পূর্বতন সরকারের মতো দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত নয়৷ তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে চাইছি না৷ তাই, পুরনো জিআরএসদের ছাঁটাই করে নতুন নিয়োগে সারা ত্রিপুরায় ভুল বার্তা যাবে বলে সুদীপবাবু দাবি করেন৷ তাঁর দাবি, পুরনো জিআরএসদের ছাঁটাই না করে পদ্ধতি খুঁজে বের করে নতুন নিয়োগ করা হোক৷


এ-বিষয়ে উপমুখ্যমন্ত্রী তথা গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, অযথা বিভ্রান্ত হওয়ার কোনও কারণ নেই৷ জিআরএস পদে নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে পুরনোরাও এই সুযোগ নিতে পারবেন৷ তারাও পরীক্ষায় বসতে পারবেন৷ তাতে তারা উত্তীর্ণ হলে জিআরএস পদে তাঁদের চাকরি বহাল থাকবে৷ এক্ষেত্রে পুরনো জিআরএসদের বয়োসীমায় এককালীন ছাড় দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপমুখ্যমন্ত্রী৷
তাঁর কথায়, রেগা প্রকল্পে গড় শ্রমদিবস বিগত বছরের তুলনায় ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে৷ ২০১৭ সালে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের আধিকারিকরা রাজ্যে এসে রেগা প্রকল্পের কাজের গুণমান নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজ্যে কেবলমাত্র ৩৪ এবং ৪৫ গড় শ্রমদিবস কাজ হয়েছে৷ তাতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় ওই বছরগুলিতে শ্রমদিবস হ্রাস পেয়েছে৷ তাই, কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজ্যের অনুমোদিত শ্রম বাজেট ৪৫০.৮৫ লক্ষ থেকে কমিয়ে ২৮৭.৫৩ লক্ষ শ্রমদিবস করে দিয়েছে৷ তিনি বলেন, বর্তমান অর্থবছরে ত্রিপুরার অনুমোদিত শ্রম বাজেট হল ৪৯ গড় শ্রমদিবস৷


উপ-মুখ্যমন্ত্রী এদিন রেগা প্রকল্পে অসন্তোষজনক কাজের জন্য জিআরএসদের দায়ী করেছেন৷ তাঁর সাফ কথা, জিআরএসদের গাফিলতির কারণেই কেন্দ্রীয় সরকার শ্রম বাজেট কমিয়ে দিয়েছে৷ এতে ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্য সুদীপ বর্মণ বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অযোগ্যতার অভিযোগ রয়েছে তাদের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সুযোগ দেওয়া উচিত হবে না৷ তাঁর মতে, যারা রেগা প্রকল্পে অনিয়মের সাথে যুক্ত রয়েছেন তাদের চিহিণত করে ছাঁটাই করুন৷ কিন্তু একাংশ জিআরএস-এর দোষের ভার সকলের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া উচিত হবে না৷ সুদীপবাবু এদিন জিআরএস পদে নতুন নিয়োগে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছেন৷ তবে, এই আবেদন স্বীকার করা হবে না তা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে গেছে৷