
নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২ সেপ্ঢেম্বর৷৷ ক্যাবিনেট মেমোর সাথে পূর্ত দফতরের প্রধানসচিবের নোটের অমিল রয়েছে৷ তাতে ৮৬৬ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকার কাজে অনিয়ম হয়েছে বলে অনুমানে প্রাক্তন পূর্তমন্ত্রী বাদল চৌধুরীর বিরুদ্ধে ভিজিল্যান্স তদন্ত চলছে৷ সোমবার রাজ্য বিধানসভার বর্ষাকালীন অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে সিপিএম বিধায়ক সুধন দাসের উল্লেখপর্বে আনা নোটিশের জবাবে এ-কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷
তাঁর কথায়, ২০০৮-২০০৯ অর্থবর্ষে মন্ত্রিসভার অনুমোদিত খরচ সংযোজন ১০ শতাংশের বদলে ৩৫.৭৩ শতাংশ অধিক খরচ ধরা হয়েছে৷ অথচ, এ-বিষয়ে মন্ত্রিসভার কোনও অনুমোদন নেওয়া হয়নি৷ বরং, তৎকালীন পূর্ত দফতরের প্রধানসচিবের নোটে বিষয়টি মন্ত্রিসভার জ্ঞাতসারে হচ্ছে বলে উল্লেখ রয়েছে৷ সন্দেহজনক ওই কাজের ভিজিল্যান্স তদন্ত দেওয়া হয়েছে, জানান মুখ্যমন্ত্রী৷
তিনি জানান, ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে ত্রিপুরায় পূর্ত দফতর বিভিন্ন পরিকাঠামোগত উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নে অনুমোদিত ব্যয়ের ১০ শতাংশ পর্যন্ত খরচ সংযোজন পদ্ধতিতে দরপত্র চূড়ান্তকরণ প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল৷ বিষয়টি মন্ত্রিসভা অনুমোদনও দিয়েছিল৷ কিন্তু, ২০০৮ সালে পূর্ত দফতরের নির্ধারিত মূল্য তালিকা অনুযায়ী ১০ শতাংশ খরচ সংযোজন পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বানের বিষয়টিই টেকনিক্যাল এবং ফিনানশিয়াল দরপত্রের নথিতে উল্লেখ করা হয়নি৷ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ওই সময় একই কাজের জন্য দুটি দরপত্র একই সাথে আহ্বান করা হয়৷
কিন্তু, ওই দুটি দরপত্র ভিন্ন তারিখে খোলা হয়, যা কোনওভাবেই ন্যায়সঙ্গত নয়৷ তিনি বলেন, পরবর্তীতে দুটি দরপত্র একত্রিত করে পূর্ত দফতর ১৩টি প্যাকেজ সংবলিত ৮৬৬ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা মূল্যের দরপত্রের প্রস্তাব ওয়ার্ক অ্যাডভাইজারি বোর্ডের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠায়৷ তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ওই দরপত্র সম্ভাব্য প্রকল্পের মূল্য ৬৩৮ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা থেকে ৩৫.৭৩ শতাংশ খরচ সংযোজন হিসেবে বেশি ছিল৷ কিন্তু, এ-বিষয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে কিছুই উল্লেখ ছিল না৷
মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, প্রস্তাবিত মূল্যের ওপর ১০ শতাংশ বৃদ্ধি বা হ্রাস সম্পর্কিত মূল্য পরিবর্তনের বিষয়েও মন্ত্রিসভার অনুমোদন নেওয়া হয়নি৷ অথচ ওয়ার্ক অ্যাডভাইজারি বোর্ডের বৈঠকে পরিচ্ছদটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, ২০০৮ সালের ২৮ নভেম্বর ওয়ার্ক অ্যাডভাইজারি বোর্ডের বৈঠকে মূল্য পরিবর্তন-সহ প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়৷ পাশাপাশি ওই বৈঠকে পূর্ত দফতরের আবেদনে পদ্ধতিগত ত্রুটির এককালীন ছাড় দেওয়ার বিষয়টিও অনুমোদিত হয়৷
তাঁর বক্তব্য, সমগ্র বিষয়টি পূর্ত দফতরের জ্ঞাতসারে হওয়া সত্বেও তা মন্ত্রিসভার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়নি৷ এই সমস্ত ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলি রাজ্যের বর্তমান সরকারের নজরে আসার পরই সংগঠিত ওই অনিয়মের ভিজিল্যান্স তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ প্রাক্তন পূর্তমন্ত্রী বাদল চৌধুরীকে ওই অনিয়মের জন্যই ভিজিল্যান্স জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷
এদিকে, প্রাক্তন পূর্তমন্ত্রী তথা বর্তমান বিরোধী উপ-নেতা বাদল চৌধুরী দাবি করেন, ওই সময় সমস্ত কাজ সঠিক পদ্ধতি মেনেই হয়েছে৷ শুধু তা-ই নয়, ভিজিল্যান্স তদন্তে তিনি সবরকম সাহায্য করবেন বলেও জানিয়েছেন৷

