![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2019/08/SAVE_20190819_202150-1024x683.jpeg)
নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৯ আগস্ট৷৷ রাজ্যের প্রসিদ্ধ চা বাংলাদেশে রপ্তানী করার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এবিষয়ে প্রয়োজনীয় কথাবার্তাও হয়েছে৷ আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে ত্রিপুরার মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুরের ১১১ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত সাংস্ক’তিক সন্ধ্যার সূচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন৷ অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্ক’তি দপ্তর এবং ট্রিভেগ হেরিটেজ সংস্থা৷ উদ্বোধকের ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, মহারাজা বীর বিক্রম ছিলেন আধুনিক ত্রিপুরার রূপকার৷ তিনি তার স্বল্পকালীন শাসন কালের মধ্যেই ত্রিপুরার প্রথম বিমানবন্দর, ব্যাংক, শিল্প এবং সুকল কলেজ স্থাপন করেছিলেন৷ যদি কোন ব্যক্তির মধ্যে প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকে তাহলে সে যেকোন কাজ সফলভাবে করতে পারে৷ এর প্রক’ত উদাহরণ হল মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরার রাজা মহারাজারা প্রজাবৎসল ছিলেন৷ প্রজাদের উন্নয়নেই তারা কাজ করে গেছেন৷ বিগত সরকার যদি ত্রিপুরার রাজা মহারাজাদের আদর্শকে অনুসরণ করে রাজ্যকে পরিচালনা করতেন তাহলে ত্রিপুরা অনেক আগেই মডেল রাজ্যে পরিণত হতে পারত৷ বর্তমান সরকার মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্যের আধুনিক ত্রিপুরার গঠনের স্বপকে বাস্তবায়ণ করার লক্ষ্যেই কাজ করছে৷ তিনি বলেন, কোনো রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা একান্ত প্রয়োজন৷ বর্তমানে রাজ্যের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৬ শতাংশ, যা বিগত সরকারের আমলে ছিল মাত্র ৯.৮ শতাংশ৷ রাজ্যের বেকারদের স্বরোজগারী হওয়ার লক্ষ্যে ব্যাঙ্ক থেকেও অধিক পরিমাণে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ ফলে রাজ্যের সি ডি রেশিও ৪৯ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৬৬ শতাংশে পৌছেছে৷ স্বনির্ভর ত্রিপুরা গড়ার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় পদক্ষেপ৷ পাশাপাশি স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকারী চাকুরী প্রদান প্রক্রিয়াও চলছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে রাজ্য সরকার ’সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ ও ’সবকা সাথ সবকা বিশ্বাস’ এই দুটি মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েই রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছে৷ রাজ্যের প্রতিটি পরিবারে বিনামূল্যে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে অটল জলধারা মিশন নামে একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে৷ রাজ্যে দর্শনীয় স্থান নীরমহল, ছবিমুড়া, ঊনকোটি, মাতাবাড়ি, পিলাক প্রভ’তি উন্নয়নের মাধ্যমে রাজ্যের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজ্য সরকার কাজ করছে৷ রাজ্যের মহিলাদের সশক্তিকরণেও রাজ্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এক সময় ত্রিপুরাকে পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল৷ মহারাণী কা’নপ্রভা দেবী সর্দার বল্লবভাই প্যাটেলের সহযোগিতায় ত্রিপুরাকে পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত হতে বাধা দেন৷ এতে রাজ পরিবারের রাষ্ট্রপ্রেমও পরিলক্ষিত হয়৷ মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুরের আদর্শকে কর্মপাথেয় করেই বর্তমান রাজ্য সরকার ত্রিপুরাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে৷
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির ভাষণে বিশিষ্ট সমাজসেবী সুুনীল দেওধর বলেন, যে কোনো ব্যক্তি তার কর্মের মাধ্যমেই মহান হয়৷ মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য তাঁর স্বল্পায়ুর মধ্যেই গরীবদের উন্নয়নের জন্য কাজ করে গেছেন৷ দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজীও গরীবদের কল্যাণে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন৷ তিনি বলেন, বিগত সরকার ত্রিপুরার রাজ পরিবারকে সব সময় উপেক্ষা করে গেছেন৷ কিন্তু বর্তমান কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার ত্রিপুরার জনজাতিদের উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে৷ দেশের প্রাক্তন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীই প্রথম উত্তর পূর্বা’ল থেকে গোপীনাথ বরদলুইকে ভারতরত্ন উপাধিতে ভূষিত করেন৷ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও উত্তর পূর্বা’লের রাজ্যগুলির উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন৷
অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণে তথ্য ও সংস্ক’তি দপ্তরের সচিব মানিক লাল দে বলেন, রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে গত বছর থেকেই সরকারীভাবে মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুরের জন্মবার্ষিকী পালন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়৷ এর উদ্দেশ্য মহারাজার রাজ্যের উন্নয়নে যে দৃষ্টিভঙ্গী ছিল তা বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা৷
অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন রাজ্যভিত্তিক সাংস্ক’তিক উপদেষ্টা কমিটির সহ সভাপতি সুুভাষ দেব এবং ট্রিভেগ হেরিটেজ সংস্থার সম্পাদক ড. এস দেববর্মা৷ অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সংস্ক’তি দপ্তরের অধিকর্তা রতন বিশ্বাস, ত্রিভেগ হেরিটেজ সংস্থার সভাপতি সৌভিক দেববর্মা, খাদি ও গ্রামোদ্যোগ পর্ষদের চেয়ারম্যান রাজীব ভ-াচার্য প্রমুখ৷
অনুষ্ঠানে ত্রিভেগ হেরিটেজ সংস্থার পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রী এবং দেশের বিশিষ্ট উচ্চাঙ্গ সংগীত শিল্পী উস্তাদ রশিদ খান ও তার দলকে সংবর্ধণা প্রদান করা হয়৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর মে’ কত্থক নৃত্য, মণিপুরী নৃত্য এবং হিন্দস্থানী উচ্চাঙ্গ সংগীত পরিবেশন করেন রাজ্য ও বহির্রাজ্যের বিশিষ্ট শিল্পীগণ৷