নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৬ আগস্ট৷৷ প্রাণঘাতী হামলায় গুরুতর আহত ব্যাঙ্ক ম্যানেজার বোধিসত্ত্ব দাস আজ, শুক্রবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন৷ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি৷ গত ৪ আগস্ট গভীর রাতে ত্রিপুরার রাজধানী শহর আগরতলায় জেকশন গেট এলাকায় তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছিল পুলিশ৷ তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ৭ আগস্ট উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে কলকাতায় স্থানান্তর করেছিলেন জিবি হাসপাতালের চিকিৎসকরা৷ কিন্তু, আজ সকাল ৯-টা ৪০ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয়েছে৷ ময়না তদন্তের পর আগামীকাল তাঁর দেহ আগরতলায় আনা হবে৷
গত ৪ আগস্ট গভীর রাতে রাজধানীর জ্যাকশন গেট সংলগ্ণ এলাকা থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় ব্যাঙ্ক ম্যানেজার বোধিসত্ত্ব দাসকে উদ্ধার করেছিল পুলিশ৷ গভীর রাতে দমকল বাহিনীর কর্মীরা আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে জিবি হাসপাতালে নিয়ে যান৷ তিনি ইউকো ব্যাঙ্কের ধর্মনগর শাখায় কর্মরত ছিলেন৷
এদিকে, হাসপাতালে পুলিশ বোধিসত্ত্ব দাসের বয়ান রেকর্ড করেছিল৷ বয়ানে তিনি বলেছিলেন, আগরতলায় কালিকা জুয়েলার্সের কর্ণধারের ছেলে সুমিত চৌধুরী তাঁকে বোতল ভেঙে পেট এবং শরীরে আঘাত করেছিল৷ ওই সময় মসজিদপট্টি এলাকার বাসিন্দা ওমর শরিফ ওরফে সোয়েব মিয়াঁও ছিলেন৷ ঘটনার পরের দিন আক্রান্ত ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল৷ ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে নেমে পুলিশ সুমিত চৌধুরী এবং সোয়েব মিয়াঁকে আটক করে৷
তাদের পুলিশ রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে পুলিশ জানতে পারে, এই ঘটনার সাথে যুক্ত রয়েছেন ট্রাফিক ইনস্পেক্টর সুকান্ত বিশ্বাস৷ যথারীতি গত ৭ আগস্ট তাকে গ্রেফতার করে পশ্চিম আগরতলা থানার পুলিশ৷
ট্রাফিক ইনস্পেক্টর সুকান্ত বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে পুলিশ জানতে পারে এই ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছে সুমিত বণিক নামের আরও একজন৷ তাকেও পশ্চিম আগরতলা থানার পুলিশ গ্রেতার করে৷ সদর এসডিপিঁও ধ্রুব নাথ জানান, এখন পর্যন্ত এই ঘটনার সাথে যুক্ত থাকার দায়ে মোট ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ তাদের বিরুদ্ধে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে ৩০৭, ৩২৬ এবং ৩৪১ ধারায় মামলা করা হয়েছে৷ ধৃতরা বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছেন৷ আগামী ১৯ আগস্ট পুনরায় তাদের আদালতে তোলা হবে৷
এরই মধ্যে ওই ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের মৃত্যুতে মামলা আরও জটিল হয়ে উঠেছে৷ ইউকো ব্যাঙ্কের জনৈক আধিকারিক দীপঙ্কর দাস জানিয়েছেন, বোধিসত্ত্ব দাসের বাবা বছর দুয়েক আগেই প্রয়াত হয়েছেন৷ মা-কে নিয়ে অভয়নগরে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন তিনি৷ বর্তমানে ধর্মনগরের চন্দ্রপুর ব্রাঞ্চে ম্যানেজার পদে কর্মরত ছিলেন তিনি৷ দীপঙ্করবাবু জানান, আজ সকালে তাঁর মৃত্যুর খবর ভীষণ মর্মাহত তাঁরা৷ কারণ, কাজের প্রতি খুবই নিষ্ঠাবান ছিলেন বোধিসত্ত্ব৷
এসডিপিও সদর ধ্রুব নাথ জানিয়েছেন, ওই মামলার তদন্তকারী অফিসার বর্তমানে কলকাতায় রয়েছেন৷ আজ সেখানেই বোধিসত্ত্ব দাসের মৃতদেহের ময়না তদন্ত করা হয়েছে৷ আগামীকাল তাঁর দেহ আগরতলায় আনার চেষ্টা করা হবে৷
এদিকে, ঘটনার পেছনে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিষয় থাকতে পারে বলে পুলিশের অনুমান৷ ধারণা করা হচ্ছে, ধৃত ট্রাফিক ইনস্পেক্টর সুকান্ত বিশ্বাসের সাথে ওই ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের আর্থিক লেনদেন ছিল৷ এর সাথে কালিকা জুয়েলার্সের মালিকের ছেলেও যুক্ত৷ তবে পুলিশ তদন্তের স্বার্থে কিছুই বলতে চাইছে না৷