জনজাতি অংশের জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে ঃ মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৬ আগস্ট৷৷ বনাধিকার আইনে পাট্টাপ্রাপ্ত জমির চিহ্ণিতকরণের কাজটি মিশন মুড়ে সম্পন্ন করার জন্য রাজস্ব ও বন দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ পাশাপাশি পাট্টাপ্রাপ্ত জমির সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে জনজাতিদের আর্থিক মান উন্নয়ন করার জন্যও বন দপ্তরকে পরিকল্পনা নিতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ প্রজ্ঞাভবনে বন দপ্তর আয়োজিত ‘পাট্টাপ্রাপ্ত জমির সর্বোত্তম ব্যবহার’ শীর্ষক একদিনের কর্মশালার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এই নির্দেশ দিয়েছেন৷  মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জনজাতি অংশের মানুষ বহু আগে বনাধিকার আইনে পাট্টাপ্রাপ্ত জমি পেলেও বিগত সরকার তা চিহ্ণিতকরণের কোনও ব্যবস্থা নেয়নি৷ ফলে পাট্টাপ্রাপ্ত জমির মালিকদের জমি চিহ্ণিত না হওয়ার কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কিষাণ সম্মান বিধি প্রকল্পের সুযোগ পেতে অসুবিধা হচ্ছিলো৷

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান বিধির নিয়ম কিছুটা শিথিল করার অনুরোধ করা হয়৷ সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক শুধু ত্রিপুরার ক্ষেত্রে নয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমস্ত পাট্টাপ্রাপ্ত জমির মালিকরা প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পের সুবিধা পাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে এখন পর্যন্ত ১ লক্ষ ৩০ হাজার পরিবারকে মোট ১ লক্ষ ৮৬ হাজার হেক্টর জমির পাট্টা দেওয়া হয়েছে৷ পাট্টাপ্রাপ্ত এই জমিতে কিভাবে দ্রুত চিহ্ণিতকরণ করা যেতে পারে সে বিষয়ে রাজস্ব ও বন দপ্তরকে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, পাট্টাপ্রাপ্ত জমির মালিকদের মধ্যে অধিকাংশই জনজাতি অংশের লোক৷ বনাধিকারে পাট্টাপ্রাপ্ত জমিতে কি কি উৎপাদন করলে তারা লাভবান হবেন সেই বিষয়ে জনজাতি  অংশে জনগনের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত হবে৷ আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে অল্প সময়ে কিভাবে ফসল উৎপাদন করা যায় সেই বিষয়েও তাদেরকে পরামর্শ দিতে হবে৷

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে জনজাতি এলাকায় সবচেয়ে বেশি আনারস চাষ হয়ে থাকে৷ সেই আনারস বর্তমানে বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে৷ ভবিষ্যতে পাট্টাপ্রাপ্ত জমিতে আনারস চাষ কিভাবে বেশি পরিমাণে করা যায় সেই বিষয়েও পরিকল্পনা নিতে হবে৷ বন দপ্তরের আধিকারিকদের তাদের নিজ এলাকার পাট্টাপ্রাপ্ত জমির মালিকদের জমির সর্র্বেত্তম ব্যবহারের জন্য উজ্জীবিত করতে হবে৷ এছাড়াও বন দপ্তরের জাইকা প্রকল্পে যেসব সামগ্রী উৎপাদন হবে সেগুলির বাজারজাত করণের উপরও গুরুত্ব দিতে হবে৷

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার রাজ্যের জনজাতি অংশের জনগণের অর্থনৈতীক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে৷ রাজ্যের ১২টি জনজাতি অধ্যুষিত ব্লককে আদর্শ ব্লক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ জেলাশাসক, মহকুমা শাসক এবং সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিডিওদের রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি রূপায়ণে আরও দৃঢ়তার সঙ্গে কার করার জন্য বলা হয়েছে৷ তিনি বলেন, জাইকার দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্প সম্পূর্ণ রোজগার ভিত্তিক করা হয়েছে৷ জাইকা ও রেগার মাধ্যমে পাট্টাপ্রাপ্ত জমিগুলির সঠিক ও সফল রূপায়ণের মাধ্যমে জনজাতি অংশের জনগণের আর্থিক মনোন্নয়ন ঘটাতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকদের আরও গুরুত্ব সহকারে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী৷

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির ভাষণে বনমন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া বলেন, জাইকা প্রকল্পে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজে মূল লক্ষ্য হবে বনের উন্নয়ন৷ বনকে রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং বনকে সবুজ করা৷ রাজ্যের নতুন সরকার বনাকিার আইনে পাট্টাপ্রাপ্ত জমিকে সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে কিভাবে আর্থিক মনোন্নয়ন ঘটানো যায় সে বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে৷ জাইকা প্রকল্পের মাধ্যমে আগর গাছের চাষের উপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ এখন পাট্টাপ্রাপ্ত জমির পাশাপাশি এলাকার জাইকা প্রকল্পে যেসব কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে তা যাতে সফল হয় সেই বিষয়ে ঐ এলাকার জনগণকে সচেতন হওয়া আহ্বান জানান বনমন্ত্রী৷

অনুষ্ঠানে বন দপ্তরের প্রধান মুখ বন সংরক্ষক ড. অলিন্দ রস্তোগী বলেন, রাজ্যে যে সকল পরিবারকে পাট্টাপ্রাপ্ত জমি দেওয়া হয়েছে তা কিভাবে সদ্ব্যবহার করা যেতে পারে সেই বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েই আজকের কর্মশালায় আলোচনা করা হবে৷ পাট্টাপ্রাপ্ত জমিতে বাঁশ, আগর বিভিন্ন ঔষধী গাছ যাতে বেশি পরিমাণে চাষ করা যায় সে বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে৷

অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন মুখ্যসচিব ইউ ভেস্কটেশ্বরলু এবং ত্রিপুরা জাইকা প্রকল্পের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক অংশুমান দে৷ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত মুখ্যসচিব মনোজ কুমার এবং রাজস্ব  দপ্তরের প্রধান সবিচ বি কে সাহু৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *