নয়াদিল্লি, ৫ আগস্ট (হি.স.): নতুন করে জম্মু ও কাশ্মীর ‘পুনর্গঠন’-এর পথে নরেন্দ্র মোদী সরকার| সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে, জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করল কেন্দ্রীয় সরকার| ফলে নতুন করে সূচনা হতে চলেছে জম্মু ও কাশ্মীরের ইতিহাস| একইসঙ্গে কাশ্মীর থেকে লাদাখকে পৃথক করে দেওয়ারও প্রস্তাব করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ| দু’টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হতে চলেছে জম্মু ও কাশ্মীর ও লাদাখ| জম্মু ও কাশ্মীর ও লাদাখ দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলেই নিয়োগ করা হবে দু’জন লেফটেন্যান্ট গর্ভনরকে| কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা থাকবে, তবে লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিধানসভা থাকবে না| জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে এআইএডিএমকে, বিজু জনতা দল (বিজেডি), শিবসেনা এবং বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি)| তবে, ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের প্রস্তাবকে বিরোধিতা করেছে কংগ্রেস, নীতীশ কুমারের জনতা দল (ইউনাইটেড), ডিএমকে, এমডিএমকে এবং শিবসেনা| কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ‘বেদনাদায়ক’ আখ্যা দিয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা ন্যাশনাল কনফারেন্স-এর সহ-সভাপতি ওমর আবদুল্লা|

কিছুদিন আগেই আচমকাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল অমরনাথ যাত্রা, পুন্যার্থীদের পাশাপাশি কাশ্মীর উপত্যকা ছাড়তে অনুরোধ করা হয়েছিল পর্যটকদেরও| এরইমধ্যে কাশ্মীরে বাড়ানো হয় আধাসেনার বহর| উদ্বেগ-উত্কণ্ঠার মধ্যেই রবিবার মধ্যরাত থেকে অনির্দিষ্টকালের জম্মু ও কাশ্মীরে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা| জম্মু ও কাশ্মীরের সর্বত্র ১৪৪ ধারা জারি করা হলেও, শুধুমাত্র লাদাখ রিজিওনের ১৪৪ সিআরপিসি ধারা জারি করা হয়নি| তার আগে রবিবার রাত থেকেই দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এবং মেহবুবা মুফতিকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়| গৃহবন্দি করা হয় প্রাক্তন বিধায়ক সাজ্জাদ লোহ-কেও| গ্রেফতার করা হয় সিপিএম নেতা ইউসুফ তারিগামি এবং কংগ্রেস নেতা উসমান মজিদকে| এরপর কী হবে এই উদ্বেগের মধ্যেই ছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষজন| ভূস্বর্গের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগে ছিলেন দেশের অন্যান্য রাজ্যের মানুষজনও|
সোমবার এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজেই| জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করল কেন্দ্রীয় সরকার| সোমবার সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ| স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই প্রস্তাবের পরই উত্তাল হয় রাজ্যসভা| স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন, বিরোধীদের সমস্ত প্রশ্নের জবাব দিতে তিনি প্রস্তুত রয়েছেন| কী হতে চলেছে কাশ্মীরে, তা নিয়ে উদ্বেগ ক্রমশই বাড়ছিল| এই আবহেই সোমবার সকালে ৭ লোক কল্যাণ মার্গে বিশেষ বৈঠক করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা| সোমবার সকাল ৯.৩০ মিনিট থেকে ৭ লোক কল্যাণ মার্গে শুরু হয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক| বৈঠক শেষে ৭ লোক কল্যাণ মার্গ থেকে সোজা সংসদে চলে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ| এরপর বেলা এগারোটা নাগাদ সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ|
কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এদিন রাজ্যসভায় কংগ্রেস সাংসদ গুলাম নবি আজাদ বলেছিলেন, ‘কাশ্মীর উপত্যকা জুড়ে কারফিউ জারি রয়েছে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী-সহ রাজনৈতিক নেতাদের গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে| কাশ্মীরে এখন যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি, তাই এই বিষয়টির উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত|’ এরপরই জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, ‘সমস্ত ধরনের আলোচনার জন্য আমি প্রস্তুত রয়েছি| কাশ্মীর ইসু্যতে সমস্ত বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করতে আমি প্রস্তুত রয়েছি| সমস্ত প্রশ্নের জবাব দিতেও প্রস্তুত রয়েছি|’ কিন্তু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই প্রস্তাবের পরই উত্তাল হয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা| বিরোধীদের তুমুল হই হট্টগোলের মধ্যেও রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সই করা নির্দেশনামা পড়ে শোনান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ| সংশোধিত কাশ্মীর সংরক্ষণ বিল পেশ করে সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপের প্রস্তাব করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী| স্বাভাবিকভাবেই এই ধারার অধীনে ৩৫-এ ধারাও বিলুপ্তি হতে চলেছে| স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কাশ্মীরের উন্নয়নের জন্য ৩৭০ ধারা বিলোপ করার প্রস্তাব| তুলে নেওয়া হল জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা| আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা পাচ্ছে জম্মু ও কাশ্মীর| জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা থাকবে| লাদাখও পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হবে| রবিবার পর্যন্তও জম্মু ও কাশ্মীর ছিল বিশেষ মর্যাদাপ্রাপ্ত রাজ্য। কিন্তু, সোমবার থেকে সেটাই পাল্টে গিয়ে হয়ে গেল আর পাঁচটা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মতো। সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করল কেন্দ্র। এই ধারায় জম্মু কাশ্মীরকে যে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিল ভারতীয় সংবিধান, তার বিলুপ্তি ঘটল। উপত্যকাবাসীও ঢুকে পড়লেন আম ভারতীয়দের তালিকায়।
জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এদিন বলেছেন, ‘৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের জন্য এক সেকেন্ডেরও বিলম্ব হওয়া উচিত নয়|’ কংগ্রেসকে তিরস্কার করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘এটাই প্রথম নয়, ১৯৫২ এবং ১৯৬২ সালে অনুরূপ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ৩৭০ ধারা সংশোধন করেছিল কংগ্রেস| তাই প্রতিবাদ করার পরিবর্তে, দয়া করে আমাকে কথা বলতে দিন এবং আলোচনার সুযোগ দিন| আপনাদের সমস্ত সন্দেহ ও বিভ্রান্তি পরিষ্কার হয়ে যাবে| আমি আপনাদের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত রয়েছি|’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘৩৭০ ধারার ছাতার তলায় থেকে তিনটি পরিবার বহু বছর ধরে জম্মু ও কাশ্মীরকে লুট করেছে| বিরোধী নেতা (গুলাম নবি আজাদ) বলছেন, ৩৭০ ধারা জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করেছে, এটা মোটেও সঠিক কথা নয়| ১৯৪৭ সালের ২৭ অক্টোবর জম্মু ও কাশ্মীর ইনস্ট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশন সই করেছিলেন মহারাজা হরি সিং, কিন্তু জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা এসেছিল ১৯৫৪ সালে|’
সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের এই প্রস্তাবের পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন কংগ্রেস, পিডিপি-সহ বিরোধী সাংসদরা| সর্বাধিক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জম্মু ও কাশ্মীর পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি)-র সাংসদ মীর মহম্মদ ফায়াজ এবং নাজির আহমেদ লাবাই| তাঁরা এতটাই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন যে, সংবিধানের কপি ছিঁড়ে ফেলেন| তখনই বিক্ষুব্ধ পিডিপি সাংসদদের রাজ্যসভা থেকে বেরিয়ে যেতে নির্দেশ দেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান এম বেঙ্কাইয়া নাইডু| রাজ্যসভা থেকে বেরোনোর পর নিজের পরণে থাকা কুর্তাও ছিঁড়ে ফেলেন পিডিপি সাংসদ মীর মহম্মদ ফায়াজ| পিডিপি সাংসদদের এই আচরণের তীব্র নিন্দা করেছে কংগ্রেস| রাজ্যসভার কংগ্রেস সাংসদ গুলাম নবি আজাদ জানিয়েছেন, ‘সাংসদদের (পিডিপি-র দু’জন সাংসদ) এই আচরণের তীব্র নিন্দা করছি আমি| ভারতীয় সংবিধান রক্ষার স্বার্থে নিজেদের জীবনও উত্সর্গ করব আমরা, কিন্তু আজ সংবিধানের হত্যা করল বিজেপি|’
প্রসঙ্গত, জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছে কেন্দ্রীয় সরকার| এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে পিডিপি, কংগ্রেস, জেডি (ইউ), এমডিএমকে ও ডিএমকে-সহ বেশ কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দল| তবে, মায়াবাতীর বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে| বিএসপি-র রাজ্যসভার সাংসদ সতীশ চন্দ্র মিশ্র জানিয়েছেন, ‘আমাদের দল পূর্ণ সমর্থন করবে| আমরা চাই এই বিল পাশ হোক| আমাদের দল ৩৭০ ধারা বিল অথবা অন্য কোনও যে কোনও বিল নিয়ে বিরোধিতা করবে না|’ বিএসপি ছাড়াও সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছে এআইএডিএমকে, বিজু জনতা দল-সহ বেশ কয়েকটি দল| এআইএডিএমকে-র রাজ্যসভার সাংসদ এ নবনীতাকৃষ্ণণ জানিয়েছেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার জন্য সুপরিচিত ছিলেন আম্মা (জয়ললিতা)| তাই পুনর্গঠন ও সংরক্ষণ বিলকে সমর্থন করবে এআইএডিএমকে|’ রাজ্যসভায় বিজু জনতা দল (বিজেডি)-এর সাংসদ প্রসন্ন আচার্য্য জানিয়েছেন, ‘প্রকৃত অর্থে, জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ| আমাদের দল এই প্রস্তাবকে সমর্থন করবে| আঞ্চলিক দল হলেও, আমাদের কাছে দেশই সর্বাগ্রে|’ শিবসেনার রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় রাউত জানিয়েছেন, ‘আজ জম্মু ও কাশ্মীর নেওয়া হয়েছে, কাল বালুচিস্তান, পাক অধিকৃত কাশ্মীর নেওয়া হবে| আমার বিশ্বাস দেশের প্রধানমন্ত্রী অখণ্ড ভারতের স্বপ্নকে পূরণ করবেন|’
তবে, এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নীতীশ কুমারের জনতা দল (ইউনাইটেড)| জেডি (ইউ) নেতা কে সি ত্যাগী জানিয়েছেন, ‘জে পি নারায়ণ, রাম মনোহর লোহিয়া ও জর্জ ফার্নান্ডেজের ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে আমাদের প্রধান নীতীশ কুমারজী| তাই রাজ্যসভায় আমাদের দল এই বিলকে সমর্থন করবে না| আমাদের ভিন্ন চিন্তাভাবনা| ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার না করা হোক, এটাই আমরা চাইছি|’ ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে এআইএডিএমকে, এ প্রসঙ্গে এআইএডিএমকে-কে তীব্র ভ্যত্সর্না করে ডিএমকে প্রেসিডেন্ট এম কে স্ট্যালিন বলেছেন, ‘জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষজনের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা না করে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করা হচ্ছে| আজ গণতন্ত্রের হত্যা করা হল| এআইএডিএমকে এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়|’
এদিকে, রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ৩৭০ প্রত্যাহারের প্রস্তাব পেশ করার পরই ভারতীয় সেনাবাহিনী ও ভারতীয় বায়ুসেনাকে অ্যালার্ট করা হয়েছে| পাশাপাশি উত্তর প্রদেশ, ওডিশা, অসম ও দেশের অন্যান্য রাজ্য থেকে কাশ্মীর উপত্যকায় পাঠানো হচ্ছে প্রায় ৮,০০০ আধা সেনা|
প্রসঙ্গত, ৩৭০ ধারা ভারতীয় সংবিধানের একটি অস্থায়ী সংস্থান (‘টেম্পোরারি প্রভিশন’)। এই ধারায় জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা ও বিশেষ স্বায়ত্ত্বশাসন দেওয়া হয়েছিল। সংবিধানের ১১ নম্বর অংশে অস্থায়ী, পরিবর্তনশীল এবং বিশেষ সংস্থানের কথা বলা হয়েছে। সেই অনুযায়ীই জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ সংবিধানের ধারাগুলি অন্য সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও জম্মু ও কাশ্মীরের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নাও হতে পারে। ৩৭০ ধারা অনুযায়ী প্রতিরক্ষা, বিদেশ, অর্থ এবং যোগাযোগ ছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে জম্মু ও কাশ্মীরে হস্তক্ষেপের অধিকার ছিল না কেন্দ্রের। এমনকি, কোনও আইন প্রণয়নের অধিকার ছিল না কেন্দ্র বা সংসদেরও। আইন প্রণয়ন করতে হলে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের সহমত নিতে হত।
৩৭০ ধারার অধীনেই ছিল ৩৫-এ ধারা। এই ৩৫-এ ধারা অনুযায়ী কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দারাও বিশেষ সুবিধা পেতেন। স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া অন্য রাজ্যের কেউ সেখানে স্থাবর সম্পত্তি কিনতে পারতেন না। কিনতে হলে অন্তত ১০ বছর জম্মু ও কাশ্মীরে থাকতে হত। এ বার যে কোনও রাজ্যের বাসিন্দা সেখানে জমি কিনতে পারবেন। স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া জম্মু ও কাশ্মীরে অন্য রাজ্যের কেউ সেখানে চাকরির আবেদন করতে পারতেন না। দিতে পারতেন না ভোটও। কে স্থায়ী বাসিন্দা এবং কে নয়, তা নির্ধারণ করার অধিকার ছিল রাজ্য বিধানসভার উপরেই ন্যস্ত। এই ধারা অনুযায়ী রাজ্য অর্থাৎ জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভাই ঠিক করতে পারত, রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা কারা এবং তাঁদের বিশেষ অধিকার কী ধরনের হবে। জম্মু ও কাশ্মীরের কোনও মহিলা রাজ্যের বাইরে কাউকে বিয়ে করলে তিনি সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হতেন। অর্থাৎ তাঁর সম্পত্তিতে আর কোনও অধিকার থাকত না। এমনকি, তাঁর উত্তরাধিকারীরাও ওই সম্পত্তির মালিকানা বা অধিকার পেতেন না।

