![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2017/01/West-Bengal-Police.jpg)
মেদিনীপুর, ৬ আগস্ট (হি. স.) : পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে পুলিশের বিরুদ্ধে বিজেপির ক্ষোভ জমেছে পুলিশী অত্যাচারের বিরুদ্ধে ৷ বিজেপি কর্মীদের মিথ্যা মামলাতে ফাঁসানো থেকে পুলিশী অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সোমবার মেদিনীপুর পুলিশ অফিস ঘেরাও এর ডাক দিয়েছিল বিজেপি ৷ সেই প্রতিবাদ মিছিল পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে এগোতেই অতর্কিত পুলিশী হামলা।
বিজেপির অভিযোগ- কোনো বিধিবদ্ধ নিয়ন না মেনেই পুলিশ গুলি চালিয়েছে,জল কামান ব্যাবহার না করেই এলোপাথাড়ি টিয়ার গ্যাস ,লাঠি চার্জ করে ৪০ জনের বেশি বেজেপি কর্মীকে জখম করা হয়েছে ৷ অন্যদিকে পুলিশের ওপরে ইঁট ছোঁড়ার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে ৷ পুলিশের ৭ জন জখম হয়েছেন ৷ আটক করা হয়েছে ৪০ জনের বেশি বিজেপি কর্মীদের ৷ এই কান্ডে উপস্থিত বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষও জখম হয়েছেন , এক বিজেপি কর্মীর চোখ প্রায় নষ্ট হয়েছে,আরও একজনকে টিয়ার গ্যাসের সেল লেগে গুরুতর জখম হয়েছেন ৷
সোমবারের এই কর্মসুচীতে বিজেপির সাতা হাজারের বেশি কর্মী সমর্থক হাজির হয়েছিলেন মেদিনীপুর শহরে ৷ কর্মসুচীর নেতৃত্বে ছিলেন প্রাক্তন পুলিশ সুপার তথা বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষ,বিজেপির রাজ্য সম্পাদক সায়ন্তন বসু,সহ তুষার মুখোপাধ্যায়, পর্যবেক্ষক বিজয় বন্দোপাধ্যায়, জেলা সভাপতি সমিত দাশ ও অন্যান্যরা ৷মেদিনীপুর শহরের ওল্ড এলআইসি মোড়ে প্রথমে কর্মীদের নিয়ে সভা করে বিজেপি। সেখানে পুলিশ তৃনমূলের দলদাসে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগও তোলেন তারা। বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু তো এও হুমকি দেন যে জম্মু কাশ্মীরের মতো পরিস্থিতি এখানেও তৈরি হতে পারে। জম্মু কাশ্মীর ও লাদাখকে ভাগ করে যেমন সেখানকার পুলিশ দিল্লীর কথায় চলবে, বেশী বাড়াবাড়ি করলে তেমন ঘটনা পশ্চিমবঙ্গেও ঘটতে পারে। তিনি পুলিশ আধিকারিকদের শুধরে যাওয়ারও পরামর্শ দেন। নরমে গরমে বক্তব্য রেখেছেন ভারতী ঘোষও। তিনিও বলেন- পুলিশ ও তৃণমূলের যৌথ সন্ত্রাস চলছে পশ্চিমবঙ্গে। তৃনমূলের এক্সপায়ারী ডেট পেরিয়ে গিয়েছে । বর্তমান প্রশাসন রাক্ষসের প্রশাসন ৷ শুধু মানুষের রক্তখায় ৷
জনসভা পর্যন্ত সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু তাল কাটল পুলিশ সুপারের অফিস অভিযানকে কেন্দ্র করে। নেতাকর্মীরা পুলিশ সুপার অফিস অভিযান করবেন এজন্য আগে থেকেই প্রচুর পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল গোটা এলাকায়। দুটি অস্থায়ী ব্যারিকেডও গড়া হয়েছিল। ভারতীদেবী, সায়ন্তনবাবুদের নেতৃত্বেই মিছিল এগিয়ে চলছিল পুলিশ সুপার অফিসের দিকে। প্রথম ব্যারিকেডের কাছে নেতারা থমকে গেলেও দমেননি কর্মীরা। তারা প্রথম ব্যারিকেড ভেঙে দ্বিতীয় ব্যারিকেড ভাঙতে শুরু করেন। তখনই উত্তেজনা তৈরী হয় দুই পক্ষের ৷ বিজেপি কর্মীদের ঠেলে ব্যারিকেড থেকে নামানোর চেষ্টা হতেই শুরু হয়ে যায় ইঁট বৃষ্টি ৷ এরপরই হঠাত কোনো হুশিয়ারী ছাড়াই টিয়ার গ্যাস ফাটানো শুরু করে পুলিশ , সেই সঙ্গে শুরু হয় লাঠিচার্জ। ছত্রভঙ্গ অবস্থায় ছোটাছুটি করতে থাকেন বিজেপি কর্মীরা। ইঁটের টুকরোয় ছেয়ে যায় শহরের রাজপথ। ভারতী ঘোষ, সায়ন্তন বসুরা দাবি করেছেন, মহিলা কর্মীদের উপরও পুলিশি অত্যাচার করা হয়েছে। গুলি করা সহ বোম মারা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। এক কর্মীর চোখ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। ৪০ জন আহত। তাদের মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিত্সা করাতে হয় ভারতী ঘোষকেও৷
এদিন সায়ন্তন বসু বলেছেন, আমরা চাইলে এদিন এসপি অফিস জ্বালিয়ে দিতে পারতাম কিন্তু আমরা তা করিনি। কর্মীদের নিয়ন্ত্রন করেছি। কিন্তু পুলিশ বিনা প্ররোচনাতেই লাঠিচার্জ করেছে।ভারতী ঘোষ বলেন- প্রশিক্ষনের সময়েই পুলিশ কর্তাদের শেখানো হয় প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যাবহারের আগে বিধিবদ্ধ নিয়মানুসারে মাইকিং করে জনতাকে হুশিয়ারি দিতে হয় যে আমরা এগুলো প্রয়োগ করবো ৷ এখানে তা করেন নি ৷ হঠাত করে এই অস্ত্র প্রয়োগ করে বয়স্ক থেকে বালক,মহিলা সকলের ওপরে অত্যাচার করা হয়েছে ৷ গুলি চলেছে, রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস ব্যাবহার করা হয়েছে জলকামান থাকা সত্বেও ৷ দায়ীত্বে থাকা পুলিশ সুপারকে প্রমান করতে হবে উনি এই নিয়ম মেনেছিলেন ৷ আমরাও ভিডিও করেছি ৷ এই ঘটনার তদন্ত করিয়ে আইনী পথে শাস্তি পেতে হবে ওনাদের ৷
যদিও পুলিশ সুপার দিনেশ কুমার দাবি করেন মারমুখী হয়ে বিজেপি কর্মীরাই প্রথম পুলিশের উপর আক্রমন করে। নয়জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের সকলকেই এখান থেকে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।যেখানে রয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ডিএসপি এডাম সহ অনেকেই ৷ ওরা উত্তেজনা পুর্ন কথাবার্তা বলে পুলিশকে আক্রমণ করেছিল৷ তাই সমস্ত পদক্ষেপ নিয়ম মেনে নেওয়া হয়েছে ৷