খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ আদালতের

ঢাকা, ৩১ জুলাই (হি.স.) : জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপার্সন তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করল আদালত। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেয়। গতকাল মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জামিনের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলেন। আজ বুধবার রাষ্ট্রপক্ষ তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করে। এর পর আদালত খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন বরিষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন ও ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। এ সময় বিএনপির আইনজীবী নিতাই রায় চৌধুরি, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও মীর হেলাল উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের শুনানি করেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।

মঙ্গলবার জামিন আবেদনের শুনানিকালে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদিন বলেছিলেন, খালেদা জিয়া এ মুহূর্তে গুরুতর অসুস্থ। এ মামলায় তাকে সর্বোচ্চ সাজা দেয়া হয়েছে। তিনি তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাকে এ মামলায় আসামি করে সাজা দেয়া হয়। আমরা সাজার বিরুদ্ধে (কথা বলব না) যাব না। শুধু জামিনের বিষয়ে কথা বলব। জয়নুল আবেদীন বলেন, মামলার বাদী এজাহারে আসামি হিসেবে খালেদা জিয়াকে অভিযুক্ত করেননি। তিনি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে টাকা আত্মসাৎ করেছেন এ ধরনের কোনো কথাও বলেননি। কিন্তু এ মামলার তৃতীয় তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগ গঠনের সময় খালেদা জিয়াকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আদালত তা গ্রহণ করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে সর্বোচ্চ সাজা দিয়ে দিলেন। কী চার্জ হল, কী সাক্ষ্য হল, আর কী জাজমেন্ট হল? যেখানে বাদী নিজে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া টাকা আত্মসাৎ করেননি। জয়নুল আবেদীন বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল  ট্রাস্ট ছিল রেজিস্ট্রিকৃত ট্রাস্ট। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। ট্রাস্টের টাকা ট্রাস্টে আছে। ডা. ফারজানা নামে একজন ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক মামলা করল। অথচ তাকে সাক্ষী হিসেবে দেখানো হয়নি। এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য করা হয়েছে। পার্টির লোকজন এখানে টাকা জমা দিয়ে থাকে। আমরা এসব আপিল শুনানিকালে বলব। তবে কয়েকটি যুক্তিতে জামিন চাই। তা হলো- খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে প্রায় অচল হয়ে গেছেন। তার ডায়াবেটিস ১৬ থেকে কমে আসছে না। বেশিরভাগ সময় ২২ থেকে ২৭ পর্যন্ত থাকে। এ ছাড়া মামলার বাদী এবং প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা নিজেই বলেছেন, খালেদা জিয়া কোনোরূপ টাকা আত্মসাৎ করেননি। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহারও করেননি। এর আগে সাত বছর সাজাপ্রাপ্ত অনেক আসামিকে আপনারা জামিন দিয়েছেন। এ ধরনের কয়েকটি মামলার রেফারেন্স দিলাম। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তাররা চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু তারা বলছেন, এখানে খালেদা জিয়ার পর্যাপ্ত চিকিৎসা সম্ভব নয়। আমরা খুবই বিনয়ের সঙ্গে বলছি, তাকে যেন জামিন দেয়া হয়। এর পর খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন আদালতকে বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ট্রাস্টের টাকা ট্রাস্টে রয়েছে। আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। একজন অফিসার্স অব দ্য কোর্ট হিসেবে আমাদের বিশ্বাস করতে পারেন। এ মুহূর্তে খালেদা জিয়ার বাঁ হাত বিকল হয়ে বাঁকা হয়ে গেছে। একটি ৭৫ বছরের বৃদ্ধাকে এ বয়সে কারাগারে রাখা অমানবিক। তিনি নিজে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। বসতে পারেন না। তাকে ধরে ধরে বসাতে হয়। বাথরুমে ধরে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের ছোট্ট একটি সিটে তাকে রাখা হয়েছে। তিনি নড়াচড়া করতে পারেন না। আদালত মানবিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকে জামিন দিতে পারেন।

২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল  ট্রাস্ট মামলায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদন্ড ও ১০ লাখ টাকার অর্থদন্ড দেয় আদালত। এর পর ওই বছরের ১৮ নভেম্বর বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জামিন ও খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা রয়েছে।

এর মধ্যে দুর্নীতির মামলা ৫টি- জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, নাইকো, গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতির মামলা। এ ৫টি মামলাই সাবেক তদারকি সরকার আমলের। অন্য ৩১টি মামলা ২০১৪ সালের পর হয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি ঢাকায়, কুমিল্লায় ৩টি এবং পঞ্চগড় ও নড়াইলে একটি করে। মূলত রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যা, ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তি, ভুয়া জন্মদিন পালন ও ঋণখেলাপির অভিযোগে এসব মামলা হয়েছে। এসব মামলার মধ্যে দুটি ছাড়া সবকটি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর হয়েছে। জিয়া চ্যারিটেবল ও অরফানেজ ট্রাস্ট মামরায় জামিন পেলেই খালেদা জিয়ার মুক্তির আশা করছেন তার আইনজীবীরা। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *