পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল ঘিরে বিজেপি-আইপিএফটি সংঘর্ষ কল্যাণপুরে, কৈলাসহরে জমায়েতে পুলিশের লাঠিচার্জ, আহত ছয়

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩১ জুলাই৷৷ ফলাফলকে ঘিরেও কল্যাণপুর শরিকি সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়েছে ও কৈলাসহরে৷ আজ ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরপরই শরিকি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে খোয়াই জেলার কল্যাণপুরে৷ পঞ্চায়েত উপনির্বাচনে কল্যাণপুর বিধানসভা এলাকায় পশ্চিম দ্বারিকাপুর গাঁও সভায় দখল নিয়েছিল আইপিএফটি দল৷ এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে শরিক দল আইপিএফটির হাত থেকে ওই গাঁওসভাটি ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি৷ এনিয়েই সংঘর্ষের সূত্রপাত৷


অভিযোগ, আইপিএফটির কিছু উত্তেজিত কর্মীসমর্থক বিজেপি কর্মী সমর্থকদের উপর হামলা চালিয়েছে৷ শুধু তাই নয় গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে৷ হামলার ঘটনায় এক বিজেপি কর্মী গুরুতর ভাবে আহত হয়েছেন৷ তার নাম তরুণ দেবনাথ৷ তাকে প্রথমে কল্যাণপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷ অবস্থা সংকট জনক হওয়ায় সেখান থেকে তাকে জিবি হাসপাতালে স্থানান্তর করেছেন চিকিৎসকরা৷


স্থানীয় বিজেপি নেতার কথায়, আইপিএফটি সমর্থকরা টিআর-০১-এজি-০৫৩০ নম্বরের মারুতি গাড়িটি ভাঙচুর করেছেন৷ এদিকে, সংঘর্ষের ঘটনার খবর পেয়ে কল্যাণপুর থানার পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীরা দ্রুত পশ্চিম দ্বারিকাপুর গাঁওসভায় ছুটে যান৷ এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে৷ ফের যেকোন সময় শরিকি সংঘর্ষ আরও চরম আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশ৷ খোয়াই জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, পুলিশ সতর্কতা অবলম্বন করেছেন৷ তাছাড়া, পরিস্থিতির উপর কড়া নজরদারি রাখা হয়েছে৷


উল্লেখ্য, কল্যাণপুর বিধানসভা এলাকায় জেলা পরিষদের ৭/৮ ও ৯নং আসনে এবং পশ্চিম দ্বারিকাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫ টি আসনে এবং দ্বারিকাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪টি আসনে বিজেপি প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী হয়৷ পঞ্চায়েত সমিতির ২টি আসনেও বিজেপি প্রার্থীরাই জয়ী হয়েছেন৷ এই এলাকায় আইপিএফটির শক্ত ঘাটি রয়েছে৷ তা সত্ত্বেও পঞ্চায়েত নির্বাচনে আইপিএফটিকে সূচনীয় ভাবে পরাজিত করে বিজেপি জয়ী হওয়ায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ওই এলাকা৷ আইপিএফটি কর্মী সমর্থকরা বিজেপির এই জয় সহজেই মেনে নিতে পারছেননা৷ বিজেপি পরিকল্পিতভাবে রিগিং করে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছন স্থানীয় আইপিএফটি নেতৃবৃন্দ৷ অবশ্য বিজেপি এই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে৷


এদিকে, আজই বিজেপির বিপুল জয়ে কল্যাণপুরে বিজয় মিছিল করা হয়েছে৷ মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন বিধায়ক পিনাকী দাস চৌধুরী, যুব নেতা সুমেন গোপ প্রমুখ৷ বিজয় মিছিলটি এলাকার বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করেছে৷ বিধায়ক পিনাকী দাস চৌধুরী এলাকার শান্তি সম্প্রতির পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷
এদিকে, রাজ্যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে ফলাফলকে ঘিরে কৈলাসহরে উত্তেজনায় পুলিশের লাঠিচার্জে ৬ জন আহত হয়েছেন৷ তবে, এই ঘটনার জন্য প্রশাসনকেই দায়ি করা হচ্ছে৷ কংগ্রেস নেতা বীরজিৎ সিনহার অভিযোগ, আগাম ঘোষণা ছাড়াই ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে৷ তাছাড়া, গত বছর ১৪৪ ধারা গণনা কেন্দ্রের ১০০ মিটার এলাকায় বলবৎ করা হয়েছিল৷ এবছর তা বাড়িয়ে ২০০ মিটার করা হয়েছে৷ ফলে, জমায়েতকে ঘিরে পুলিশের ভূমিকায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে৷ তাতে, লাঠিচার্জে কয়েকজন আহত হয়েছেন৷


আজ পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় কৈলাসহর কোর্ট চত্ত্বরে উত্তেজনায় শাসক-বিরোধী উভয় শিবিরের কর্মীরা পুলিশের মার খেয়েছেন৷ তবে, বিজেপি কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে৷ অভিযোগ, নির্বাচনী ফলাফল কংগ্রেসের অনুকূলে দেখেই বিজেপি যুব মোর্চার কর্মীদের উপর চড়াও হন কংগ্রেস কর্মীরা৷ তাতে, বিজেপি ঊনকোটি জেলা যুব মোর্চা সভাপতি আহত হয়েছেন৷
এই ঘটনায় পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীরা ছুটে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন৷ তাতে, রাজনৈতিক দলের কর্মীরা যেখানে জমায়েত হয়েছিলেন সেখান থেকে তাদের সরিয়ে দেয় পুলিশ৷

মূলত, ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকায় গণনা কেন্দ্রের ২০০ মিটার এলাকায় জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন৷ অথচ, এ-বিষয়ে কোন রাজনৈতিক দলই অবগত ছিল না৷ ফলে, তখন পুলিশের রাজনৈতিক দলের কর্মীদের খন্ডযুদ্ধ বেঁধে যায়৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঊনকোটি জেলা পুলিশ সুপার লাকি চৌহান লাঠিচার্জের নির্দেশ দেন৷ তাতে, কংগ্রেস ও বিজেপি দলের ছয়জন কর্মী আহত হয়েছেন৷
এ-বিষয়ে ঊনকোটি জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷ জমায়েতকে ঘিরে উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল৷ কিন্তু, নিরাপত্তা কর্মীদের হস্তক্ষেপে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে৷ তিনি জানান, এলাকায় পুলিশ, টিএসআর সহ সিআরপিএফ জওয়ানদের মোতায়েন করা হয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *