নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩১ জুলাই৷৷ ই-রিকশা নিয়ে শাসক-বিরোধী তরজার লড়াই চরমে উঠেছে৷ তবে, রাজ্য সরকার ই-রিকশা চালকদের বিরুদ্ধে নয়, আশ্বস্ত করেছেন পরিবহণ মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায়৷ কিন্তু, বেআইনিভাবে ই-রিকশা চলাচলে বিধিনিষেধে কোনও বদল করা হবে না বলে সাফ জানিয়েছেন তিনি৷
১ আগস্ট থেকে অনুমোদনহীন ই-রিকশায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ত্রিপুরা সরকার৷ ফলে, এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে ই-রিকশা চালকদের মধ্যে৷ তাঁদের বক্তব্য, রাজ্য সরকার ব্যবসা করার অনুমতি দিয়েছে, তাই ডিলারদের কাছ থেকে ই-রিকশা ক্রয় করেছেন তাঁরা৷ ওই ই-রিকশায় অনুমোদন রয়েছে কিনা তা তাঁরা যাচাই করেননি৷ কারণ, এই সব আইনি বিষয়গুলি রাজ্য সরকারই খতিয়ে দেখে৷ ই-রিকশা চালকদের বক্তব্য, বাম জমানায় এমন কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি৷ তাছাড়া, অনুমোদনহীন ই-রিকশা বিক্রেতাদের বিরুদ্ধেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি৷ তাই, এখন তাঁদের বিকল্প ব্যবস্থা করে তবেই এ-ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করুক রাজ্য সরকার৷
আজ সাংবাদিক সম্মেলনে প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রী মানিক দে বলেন, ই-রিকশার ব্যাপারে ২০১৪ সালে ত্রিপুরা সরকার একটি রুলসতৈরি করেছিল৷ কিন্তু, পরবর্তী সময়ে দিল্লি হাইকোর্টের মামলার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার মোটর ভেহিক্যাল অ্যাক্টের অধীন অন্তর্ভুক্ত করে ই-রিকশাকে৷ ফলে, রাজ্যের ওই রুলস বাদ দেওয়া হয়৷ তিনি বলেন, পূর্বতন সরকারের আমলে অনুমোদনহীন ই-রিকশা বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল৷ তিনজনকে গ্রেফতারও করেছিল পশ্চিম আগরতলা থানার পুলিশ৷
তাঁর দাবি, অনুমোদনহীন ই-রিকশা বিক্রিতে পূর্বতন সরকার কখনও উৎসাহিত করেনি৷ কিন্তু, প্রচুর বেকার এই ই-রিকশার সাথে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছেন৷ তাতে, তাঁদের রোজগার হচ্ছে৷ তাই, আইনি বিধান মেনে ওই ই-রিকশা চালকদের জন্য পথ খুঁজে বের করা হোক, আবেদন জানান মানিক দে৷ তাঁর বক্তব্য, আইনে পরিবর্তন কিংবা পরিবর্ধন প্রয়োজনের ভিত্তিতে সরকারই করে থাকে৷
ফলে, অনুমোদনহীন ই-রিকশার জন্য এখন যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তার স্থায়ী সমাধান খঁজে বের করা খুবই জরুরি৷ তাঁর কথায়, কেন্দ্র ও রাজ্যে একই দলের সরকার রয়েছে৷ ফলে, আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান বের করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন৷ তাঁর আবেদন, সহানুভূতির সাথে এই বিষয়টি বিবেচনা করা হোক৷ সাথে যোগ করেন, রাজ্য সরকার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিষয়টি দেখবে বলে তাঁর বিশ্বাস৷
এদিকে ত্রিপুরা সরকারের পরিবহণ মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় আজ ই-রিকশা নিয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন৷ তাঁর কথায়, কোনও বেআইনি কাজে রাজ্য সরকার চুপচাপ বসে থাকতে পারে না৷ ফলে, ১ আগস্ট থেকে ই-রিকশায় নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্তে কোনও বদল আনা হবে না৷ তাঁর বক্তব্য, অন্তত ৭ মাস ধরে এই সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷ কিন্তু, অনেক ই-রিকশা পরিবহণ দফতরের অধীনে নথিভুক্ত হয়নি৷ তাঁর কথায়, অনুমোদন ছাড়া ই-রিকশা চলাচলে জননিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ণ উঠেছে৷ ফলে, জনগণের নিরাপত্তার সাথে কোনও আপস করা সম্ভব হবে না৷ কারণ, অনুমোদনহীন ই-রিকশা দুর্ঘটনার কবলে পড়লে যাত্রীরা বিমার সুযোগ পাবেন না৷ তাছাড়া, ওই ই-রিকশা চালকের বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া যাবে না৷
এদিন তিনি প্রাক্তন পরিবহন মন্ত্রীকে বিঁধে বলেন, অনেক দেরিতে তাঁর বোধগম্য হয়েছে৷ তবে, আগে এ-নিয়ে চিন্তা করলে আজ ওই ই-রিকশা চালকরা সমস্যায় পড়তেন না৷ প্রণজিৎ সিংহরায়ের কথায়, পূর্বতন বাম সরকার বেআইনি ব্যবসাকে উৎসাহ দিয়ে মানুষের অনেক ক্ষতি করেছে৷ তার খেসারত এখন আমাদের দিতে হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরা সরকারও ই-রিকশা চালকদের নিয়ে চিন্তিত৷ কারণ, আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে নই৷ তবে বেআইনি কোনও কিছুই বরদাস্ত করা হবে না, সাফ জানালেন তিনি৷
তাঁর কথায়, আগামীকাল থেকে অনুমোদনহীন ই-রিকশা নিয়ে প্রশাসন আইন মেনে ব্যবস্থা নেবে৷ ফলে, ওই ই-রিকসা চালকদের যানবাহন নিয়ে রাস্তায় বের না হওয়াই উচিত৷ তিনি জানিয়েছেন, আগামীকাল থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রশাসন সব রকম ব্যবস্থা নিয়েছে৷