গুয়াহাটি, ২৯ জুলাই (হি.স.) : রাজ্যের বর্তমান সরকার কোনও ধরনের সিন্ডিকেটকে প্ৰশ্রয় দেয় না। গরু, সার, কয়লা, সুপারি প্রভৃতি সামগ্রী চোরাকারবারের বিরুদ্ধে অতিশয় কঠোর ব্যবস্থা গ্ৰহণ করা হয়েছে এবং আগামীতেও তা চলবে। এক কথায় মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়ালের কাৰ্যকালে অসমে কোনও ধরনের সিন্ডিকেট চলতে দেওয়া হবে না, মন্তব্য সংসদীয় পরিক্রমা, পরিবহণ মন্ত্ৰী চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারির। অসম বিধানসভার গ্ৰীষ্মকালীন অধিবেশনের তৃতীয় দিন সোমবার কংগ্ৰেসের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থের বরাক উপত্যকায় সিন্ডিকেটরাজ চলছে বলে এক অভিযোগ তুললে এর জবাবে মন্ত্ৰী পাটোয়ারি এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
সদনের কাৰ্য পরিচালনার ৫৪ নম্বর নিয়মের অধীনে বরাকে সিন্ডিকেটরাজ কায়েম প্ৰসঙ্গ উপস্থাপন করেছিলেন উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ। সরকারের দৃষ্টি আকৰ্ষণ করে তিনি বলেন, সরকার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্ৰহণ করেছে বলে শোনানো হলেও বাস্তবে বরাক উপত্যকায় দেদার সিন্ডিকেটরাজ চলছে। বিশেষ করে সার, সুপারি এবং কয়লার অবৈধ সরবরাহ চলছে সিন্ডিকেটের বলে। আর এই সব সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত ক্ষমতাসীন বিজেপির বিধায়ক নেতা-কর্মীরা।
সিন্ডিকেটের সঙ্গে শাসক দলের নেতারা জড়িত বলে অভিযোগ তোলার সঙ্গে সঙ্গে কমলাক্ষকে চেপে ধরেন বিজেপি বিধায়করা। শুরু হয় হইহট্টোগল। অসমে কারা সিন্ডিকেটরাজ কায়েম করেছিল বলে এক এক করে প্ৰশ্নবাণে হামলা করেন বিজেপি বিধায়করা। শাসক-বিরোধীর বাকবিতণ্ডায় সদনের পরিবেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। এরই মধ্যে বর্তমান বিধানসভার প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ তথা শিলচরের শাসকদলীয় বিধায়ক দিলীপ পাল সিন্ডিকেটের সঙ্গে বিজেপির কোনও এক নেতা বা কৰ্মীর নাম প্রকাশ করতে চ্যালেঞ্জ জানান কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থকে। একইভাবে বিধায়ক বিমল বরাও বলেন, সহজে অর্থ উপার্জনের মানসিকতায় এই সিন্ডিকেটরাজ কংগ্ৰেসের আমলে সূচনা হয়েছিল, যা পরে তদানীন্তন সরকারের আমলে সর্বক্ষেত্রে সৰ্বগ্ৰাসী হয়ে উঠেছিল।
এদিকে পরিবহণ মন্ত্ৰী চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারি সিন্ডিকেট প্ৰসঙ্গে জবাব দিতে গিয়ে বলেন, রাজ্যের বৰ্তমান সরকার কোনও ধরনের সিন্ডিকেট গঠনকে প্রশ্রয় দেয় না। বলেন, বরাক উপত্যাকার কাছাড়, হাইলাকান্দি এবং করিমগঞ্জ জেলায় এখন কোনও কয়লা, সারা এবং সুপারির অবৈধ পাচার হচ্ছে না। এ-ধরনের অবৈধ কাৰ্যকলাপ রোধ করতে বৰ্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। এই সরকারের প্ৰথম ক্যাবিনেট বৈঠকে রাজ্যে বিগত সময়ে প্রচলিত সকল অবৈধ চেকগেট বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সে অনুযায়ী অসমের ১৬০টি অবৈধ তালাশি চৌকির নামে অবৈধ চেক গেট উৎখাত করা হয়েছিল।
মন্ত্রী বলেন, এছাড়া জেলা প্ৰশাসনের তরফ থেকে নিয়মিতভাবে পুলিশ, পরিবহণ, শ্ৰম, কর, বন, পশু-পালন ইত্যাদি বিভাগের আধিকারিকদের নিয়ে গঠিত টহলদারি দল তালাশি চালাচ্ছে। এই তালাশি অভিযানে অবৈধ সামগ্ৰীর পাশাপাশি এ-সব পরিবাহী গাড়ি এবং সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের আটক করে প্রয়োজনীয় কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, একইভাবে গরুর চোরাকারবার ও পাচার রোধেও কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত মূল অভিযুক্ত মহম্মদ সরফরাজকে অসম পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গুয়াহাটির বশিষ্ঠ থানায় ১৫৫৯/১৮ নম্বরে তার বিরুদ্ধে মামলা করে ইতিমধ্যে জেলে পোরা হয়েছে। তিনি জানান, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ-সহ প্রতিবেশী রাজ্য থেকেও কোনও অবৈধ সামগ্ৰী পরিবাহী কোনও গাড়ি যাতে অসমে প্ৰবেশ করতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির পুলিশ-প্রধান স্তরে আলোচনা করে সম্মিলত পদক্ষেপ গ্ৰহণ করেছে বর্তমান সরকার।
সিন্ডিকেট প্ৰসঙ্গে তীব্ৰ বাদানুবাদ, অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগে সদন যখন উত্তাল তখন ক্ষমতাসীন দলের বিধায়করা তদানীন্তন কংগ্ৰেস আমলে সর্বগ্রাসী এই অবৈধ প্রচলন শুরু হয়েছিল বলে হামলা চালান। মন্ত্ৰী চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারি কংগ্ৰেসের উত্থাপিত অভিযোগের উত্তর দিতে গিয়ে তদানীন্তন কংগ্রেসি নেতা-কৰ্মীদের সিন্ডিকেটের সঙ্গে কোন কোন নেতা কর্মী জড়িত সে-সবের দলিল ২০১৩ সালে গুয়াহাটি থেকে প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদপত্র বিধানসভায় তুলে ধরেন। সঙ্গে ডিম, পান, আলু, পেঁয়াজ, কয়লা, আদা, মাছ, আম, আনারস ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে সিন্ডিকেট চলছিল, কেবল মানুষ বিক্রির সিন্ডিকেট সে সময় চালাতে পারেনি বলে এক এক করে জ্বালামুখি তথ্য তুলে ধরেন পরিবহণমন্ত্রী পাটোয়ারি।
পাটোয়ারির জ্বালামুখি ভাষণে বরাবরের মতো রে-রে করে ওঠেন বিরোধীরা। শুরু হয় তীব্ৰ হুলস্থুল। অবশ্য অধ্যক্ষ হিতেন্দ্ৰনাথ গোস্বামীর দৃঢ় হস্তক্ষেপে মন্ত্ৰী ও বিধায়করা শান্ত হন।