নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৩ জুলাই ৷৷ হাতির মৃত্যু এবং হাতির পায়ের তলায় পিষে মানব-হত্যার ঘটনায় পূর্বোত্তরে শীর্ষে রয়েছে অসম৷ গত পাঁচ বছরের হিসাব ঘেঁটে এই চিত্র উঠে এসেছে৷ একইসাথে মিজোরাম এবং মণিপুরে এধরনের একটি ঘটনাও ঘটেনি, এই তথ্যও জানা গিয়েছে৷ এদিকে, সর্বশেষ হাতীসুমারী অনুযায়ী অসমে সবচেয়ে বেশী হাতি রয়েছে৷ সাংসদ প্রতিমা ভৌমিকের তারকাচিহ্ণবিহীন প্রশ্ণের জবাবে লোকসভায় কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ো এই তথ্য দিয়েছেন৷

কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কথায়, ২০১৭ সালে সর্বশেষ গণনা অনুযায়ী সারা দেশে ২৯,৯৬৪টি হাতী রয়েছে৷ মূলত, হাতীবহুল রাজ্যগুলি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই হাতির সংখ্যা নিরূপণ করা হয়েছে৷ তিনি জানান, ২০১২ সালে হাতীসুমারী অনুসারে হাতীর সংখ্যা ছিল ২৯,৩৯১-৩০,৭১১৷ তাতে স্পষ্ট, গত পাঁচ বছরে হাতির সংখ্যা স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে, বলেন তিনি৷
এদিন তিনি লোকসভায় জানান, ২০১৭ সালের সর্বশেষ গণনা অনুসারে পূর্বোত্তরে অন্য রাজ্যের তুলনায় অসমে সবচেয়ে হাতি পাওয়া গিয়েছে৷ অসমে ৫৭১৯টি হাতী রয়েছে৷ তাছাড়া, মেঘালয়ে ১৭৫৪টি, অরুনাচল প্রদেশে ১৬১৪টি, নাগাল্যান্ডে ৪৪৬টি, ত্রিপুরায় ১০২টি মণিপুরে ৯টি এবং মিজোরামে ৭টি হাতী পাওয়া গিয়েছে৷ তাঁর কথায়, পূর্বোত্তরে হাতীর প্রজনন হার স্বাস্থ্যকর৷
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানান, পূর্বোত্তরে রাজ্যগুলির মধ্যে হাতির প্রজনন অসমে সবচেয়ে ভাল৷ কিন্তু, তার বিপরীত চিত্রও অসমে খুবই করুন৷ তাঁর কথায়, অসমে সবচেয়ে বেশী পাওয়া গিয়েছে৷ তেমনি, হাতির মৃত্যুতে এবং হাতির পায়ের তলায় পিষে মান-হত্যার ঘটনাতেও অসম শীর্ষস্থানে রয়েছে৷ গত বছরে অসমে বছরভিত্তিক ঘটনার তথ্য তুলে ধরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানান, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২০টি, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৮টি, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৭টি, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৪টি এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৯টি হাতীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটনা ঘটেছে৷ বিভিন্ন কারণে হাতির মৃত্যুর ঘটনা অসমে সবচেয়ে বেশি হয়েছে৷ তার মধ্যে অন্যতম ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু অসমে সবচেয়ে বেশি বলে জানা গিয়েছে৷ রেল লাইন পার হওয়ার ট্রেনের ধাক্কায় হাতীর মৃত্যুর বহু ঘটনা ঘটেছে অসমে৷
পূর্বোত্তরের অন্য রাজ্যগুলিতেও হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে৷ তবে, অসমের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম হাতির মৃত্যু হয়েছে ওই রাজ্যগুলিতে৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুসারে, গত পাঁচ বছরে মেঘালয়ে ১১টি, নাগাল্যান্ডে ৯টি এবং ত্রিপুরায় ১টি হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, অরুনাচল প্রদেশ, মিজোরাম এবং মণিপুরে গত পাঁচ বছরে একটিও হাতী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি৷
এদিন তিনি আরও জানান, হাতির পায়ের তলায় পিষে মান-হত্যার ঘটনায়ও অসম শীর্ষে রয়েছে৷ বছরভিত্তিক হিসেব তুলে ধরে তিনি বলেন, অসমে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৫৪ জন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩১ জন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৯১ জন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭২ জন এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ তাঁর কথায়, পূর্বোত্তরের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অসমে হাতির পায়ের তলায় পিষে মানব-হত্যার ঘটনা অনেক বেশী ঘটেছে৷ তাতে স্পষ্ট, গত পাঁচ বছরে শুধু অসমে ৩৩২ জন হাতীর পায়ের তলায় পিষে প্রাণ হারিয়েছেন৷
কেন্দ্রীয় জানান, পূর্বোত্তরের আরো চারটি রাজ্যে এমন ঘটনার তথ্য রয়েছে৷ তাঁর কথায়, গত পাঁচ বছরে মেঘালয়ে ২৬ জন, নাগাল্যান্ডে ৪ জন, ত্রিপুরায় ৩ জন এবং অরুনাচল প্রদেশে ২ জনের হাতীর আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে৷ তবে, মিজোরাম এবং মণিপুরে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি৷

