সুপ্রিম কোর্টে শুনানি পিছোল, কর্নাটকে কংগ্রেস-জেডিএস সরকার সময় পেল মঙ্গলবার পর্যন্ত

নয়াদিল্লি, ১২ জুলাই (হি.স.) : কর্ণাটকের বিদ্রোহী বিধায়কদের গণ ইস্তফা ইস্যুতে মঙ্গলবার পর্যন্ত স্থিতাবস্তা বজায় রাখার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে কর্ণাটকের বিদ্রোহী দশ বিধায়কের গণ ইস্তফা বিষয়ে শুরু হয় সওয়াল-জবাব। উল্লেখ্য,  কর্ণাটকের বিদ্রোহী দশ বিধায়কের গণ ইস্তফা স্পিকার গ্রহণ না করায়, তাঁরা শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন। এদিন আদালতে সওয়াল-জবাবের পর শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয়, মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় পেল  হবে এই কর্ণাটক কাণ্ড নিয়ে শুনানি। ততদিন অবধি স্থিতাবস্তা বজায় থাকবে। স্পিকারকে বিদ্রোহী বিধায়কদের ইস্তফার সিদ্ধান্ত নিতে হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

এদিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের ভর্ৎসনার মুখে পড়েন কর্ণাটক বিধানসভার স্পিকার কেআর রমেশ কুমার। শীর্ষ আদালতের সামনে এ দিন স্পিকার বলেন, তিনি এখনও ইস্তফাপত্রগুলি ভালো করে দেখে উঠতে পারেননি। কারণ, অনেকেই তাঁর সঙ্গে বৃহস্পতিবার এসে দেখা করেছেন। এর উত্তরে বিচারকরা বলেন, স্পিকার কি মনে করেন, বিধায়কদের ইস্তফাপত্র গ্রহণ করা না করার অধিকার শুধু তাঁর আছে, আদালতের নেই। তারপরেই জানিয়ে দেওয়া হয়, মঙ্গলবার হবে এই মামলার শুনানি। রমেশ কুমারকে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে হবে না, যা সিদ্ধান্ত নেবে সুপ্রিম কোর্ট।  রমেশ কুমারের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে শীর্ষ আদালতে একটি পিটিশনও দায়ের করেন ওই বিদ্রোহী বিধায়করা। তাতে দাবি করেন, ইস্তফা দিতে গেলে তাঁদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন রমেশ কুমার। রীতিমতো হুমকি দেন। এমনকি তাঁদের ইস্তফাপত্রের উপরই বসে পড়েন তিনি। এ দিন তাঁদের সেই আবেদনটিরও শুনানি হওয়ার কথা শীর্ষ আদালতে।

গত শনিবার থেকে দফায় দফায় কর্ণাটকের মোট ১৮ জন বিধায়ক ইস্তফা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৬ জন শাসক কংগ্রেস ও জেডি এস জোটের সদস্য ছিলেন। বাকি দু’জন নির্দল বিধায়ক। গত শনিবারই বিদ্রোহী কয়েকজন বিধায়ককে চ্যাটার্ড প্লেনে মুম্বই উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এক পাঁচ তারা হোটেলে তাঁরা আছেন। গত মঙ্গলবার স্পিকার আটজনের ইস্তফাপত্র নাকচ করে দেন। তাঁর বক্তব্য, সেগুলি যথাযথভাবে লেখা হয়নি। বিদ্রোহী বিধায়কদের তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেন। তাঁর কথায়, শুধু চিঠি দিলেই যদি কাজ হয়ে যেত, তাহলে আমার থাকার কোনও দরকারই পড়ত না। তিনি বলেন, এই কাজে সময় লাগবে, তিনি তো আর আলোর গতিতে কাজ করতে পারবেন না। এমনকী বিধায়করা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলে মিডিয়ার সামনে স্পিকার তাঁদের ‘গো টু হেল’ বলেন।

বিদ্রোহীদের অভিযোগ ছিল, স্পিকার ইচ্ছা করে ইস্তফা নিতে চাইছেন না। কারণ তিনি শাসক জোটকে আরও কিছুদিন টিকে থাকার সুযোগ দিতে চান। তাঁরা পুলিশকে চিঠি লিখে বলেন, হোটেলের চারদিকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হোক। কারণ কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী অথবা কংগ্রেসের ট্রাবলশুটার ডি কে শিবকুমার জোর করে হোটেলে ঢুকতে চাইতে পারেন। বুধবার সকালে সত্যিই শিবকুমার হোটেলে ঢুকতে চেষ্টা করেছিলেন। পুলিশ তাঁকে গেটে আটকে দেয়। তিনি বলেন, হোটেলে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। পুলিশ ঢুকতে না দিলে দীর্ঘ ছ’ঘণ্টা হোটেলের সামনে অপেক্ষা করেন। শেষে তাঁকে আটক করা হয়।

যদি মঙ্গলবার বিদ্রোহী বিধায়কদের ইস্তফা গ্রহণ হয়, তাহলে জোট সরকারের ১১৮ বিধায়ক থেকে সংখ্যা কমে দাঁড়াবে ১০০। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ১১৩ থেকে কমে দাঁড়াবে ১০৫-এ। এই মুহূর্তের কর্ণাটকে বিজেপি বিধায়কদের সংখ্যা ১০৫। দুই নির্দল বিধায়ক সমর্থন করলে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ১০৭। এখন এই নাটকের যবনিকা কী হয়, তার জন্য অপেক্ষা মঙ্গলবার অবধি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *