রিয়াং শরণার্থীদের মিজোরামে প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়া ফের শুরু, চলছে পুনঃশনাক্তকরণ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩ জুলাই ৷৷ উত্তর ত্রিপুরার বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত রিয়াংদের মিজোরামে প্রত্যাবর্তনে প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু হয়েছে৷ মিজোরাম সরকারের প্রতিনিধিরা আজ ত্রিপুরায় এসেছেন৷ মূলত, উত্তর ত্রিপুরা জেলার কাঞ্চনপুর এবং পানিসাগরের বিভিন্ন শিবিরে আশ্রিত শরণার্থীদের পুনরায় শনাক্ত করার উদ্দেশ্যেই মিজো সরকারের প্রতিনিধিরা ত্রিপুরায় এসেছেন৷ আজ ৩ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০ জুলাই পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলবে৷


প্রসঙ্গত, আশ্রিত রিয়াং শরণার্থীদের মিজোরামে প্রত্যাবর্তনে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু, প্রতিবার প্রক্রিয়া নানা কারণে ভেস্তে গিয়েছে৷ সরকারি হিসাবে ত্রিপুরায় বর্তমানে ৩২ হাজার রিয়াং শরণার্থী বিভিন্ন শিবিরে বসবাস করছেন৷ ১৯৯৭ সালের ২১ অক্টোবর মিজোরামের মামিথ জেলায় জাতিগত দাঙ্গার কারণে রিয়াং শরণার্থীরা ত্রিপুরায় আশ্রয় নেন৷ তখন থেকে কাঞ্চনপুর এবং পানিসাগরের বিভিন্ন শিবিরে তাঁরা বসবাস করছেন৷ কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের বিনামূল্যে রেশন দিচ্ছে৷ কিন্তু, এখন তাঁদের মিজোরামে ফেরত যেতেই হবে সেই মর্মে চুক্তিও হয়েছে৷


কেন্দ্রীয় সরকার, ত্রিপুরা সরকার, মিজোরাম সরকার এবং রিয়াং শরণার্থীদের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী তাঁদের মিজোরামে ফিরে যেতেই হবে৷ তার বদলে, দুই বছর বিনামূল্যে রেশন, এককালীন আর্থিক সাহায্য, ঘর বানাতে সহায়তা এবং শরণার্থীদের শিক্ষায় দায়িত্ব কেন্দ্র-রাজ্য উভয় সরকার মিলে বহন করবে৷ সাথে তাঁদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে৷ চুক্তি মোতাবেক, ৩০ সেপ্ঢেম্বরের মধ্যে প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া সমাপ্ত হতে হবে৷ কারণ, ১ অক্টোবর থেকে কেন্দ্রীয় সরকার বিনামূল্যে রেশন বন্ধ করে দেবে৷ সম্প্রতি, দিল্লিতে শরণার্থী প্রত্যাবর্তন সম্পর্কিত উচ্চস্তরীয় বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সাফ জানিয়েছে, ৩০ সেপ্ঢেম্বরের পর থেকে ওই শরণার্থীদের কোনও সহায়তা দেবে না কেন্দ্রীয় সরকার৷


সেই মোতাবেক আজ মিজোরাম সরকারের প্রতিনিধিরা ত্রিপুরায় এসে শরণার্থী শিবিরে গিয়েছেন৷ এ-বিষয়ে পানিসাগরের মহকুমাশাসক লালনুন্নেমি ডার্লং বলেন, ৩ জুলাই থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত ত্রিপুরায় আশ্রিত রিয়াং শরণার্থীদের পুনরায় মিজো নাগরিক হিসেবে শনাক্ত করবেন মিজোরাম সরকারের আধিকারিকরা৷ কারণ, ২০১৬ সালে অন্তিম দফায় তাঁদের শনাক্ত করা হয়েছিল৷ ফলে, গত তিন বছরে অনেকেই আগের তালিকা থেকে বাদ যাবেন এবং অনেক নতুন নাম যুক্ত করতে হবে৷ তাই, নতুন করে শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে মিজোরাম সরকার৷


উত্তর ত্রিপুরা জেলার পুলিশ সুপার ভানুপদ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, রিয়াং শরণার্থীদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় মিজোরাম সরকারের প্রতিনিধি দলে ২৬ জন আধিকারিক রয়েছেন৷ তাঁরা মোট পাঁচটি দলে বিভক্ত হয়ে রিয়াং শরণার্থীদের নথিপত্র পরীক্ষা করে দেখছেন৷ এছাড়া, এই প্রক্রিয়া তদারকির জন্য পৃথক একটি টিম রয়েছে৷ তাছাড়া, আরও দু’জন আধিকারিক রয়েছেন তাঁরা বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন৷ ভানুপদবাবু জানান, মিজোরাম সরকারের প্রতিনিধিদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হয়েছে৷ তাতে রিয়াং শরণার্থীদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারবে৷