নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৫ জুন৷৷ শহরে আবাসন নির্মাণে ত্রিপুরা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে৷ মূলত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত ২০১৫ সালের ২৫ জুন এদেশে তিনটি আরবান ফ্ল্যাগশীপ কর্মসূচি তথা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (আরবান), আমরুট ও স্মার্ট সিটি মিশনের কাজের সূচনা করেন৷ তাতেই ত্রিপুরার এই সাফল্য উঠে এসেছে৷ আজ নগর উন্নয়ন দপ্তরের উদ্যোগে সচিবালয়ে প্রেস কনফারেন্স হলে এই তিনটি প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে নগর উন্নয়ন দপ্তরের বিশেষ সচিব কিরণ গিত্যে এ-কথা জানিয়েছেন৷ তাঁর কথায়, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় শুরু থেকেই ত্রিপুরা সফলতার সাথে প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছে৷
আজ তিনি জানান, ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় সরকার আগরতলা স্মার্ট সিটি মিশনের অনুমোদন দেয়৷ এ প্রকল্পে আগরতলা শহরের উন্নয়নে ২০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে৷ এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের শেয়ার ৫০০ কোটি টাকা, রাজ্য সরকারের শেয়ার ৫০০ কোটি টাকা ও পাবলিক সেক্টরের শেয়ার (এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক সহ) ১০০০ কোটি টাকা রয়েছে৷ আগামী ২০২০ সালের মধ্যে আগরতলা স্মার্ট সিটি মিশনের কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷
শ্রীগিত্যে জানান, এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পে আগরতলা শহরে ৮.১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২টি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে৷ ৩৩১.৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বর্তমানে ২৩টি প্রকল্পের কাজ চলছে৷ ২০৭.৯ কোটি টাকার কাজের জন্য ৫টি টেণ্ডার আহ্বান করা হয়েছে৷ সম্পতি মুখ্যমন্ত্রী এম বি বি কলেজ সংলগ যে ৫টি কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তা সম্পন্ন করতে ১৮.৪০ কোটি টাকার ওয়ার্ক অর্ডার ইস্য করা হয়েছে৷ তাছাড়া রাস্তার উন্নয়নে ৫৮৮.৫০ কোটি টাকা, হাওড়া নদীর দু-পাড়ের উন্নয়নে ৫৩.৪৫ কোটি টাকা, উজ্জয়ন্ত প্রাসাদের উন্নয়নে ১৯.৫৮ কোটি টাকা, বন্যা নিয়ন্ত্রণে ৬৩.১০ কোটি টাকা, জলাধার উন্নয়নে ১২.৪১ কোটি টাকা এবং ইন্টিগ্রেটেড কমাণ্ড এবং কট্রোল সেন্টার (আই টি প্রজেক্ট) প্রকল্পে ১৩৪.৪১ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে৷
সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার প্রসঙ্গে নগর উন্নয়ন দপ্তরের অধিকর্তা ড মিলিন্দ রামটেকে জানান, প্রকল্পের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৮৫,৫৫০টি গরীব পরিবারে পাকা ঘর নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়৷ এখন পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে ২৬,২০৬টি ঘর৷ চলছে ১৯,৬৯৭টি ঘরের নির্মাণ কাজ৷ এ প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিটি ঘরের জন্য ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ও রাজ্য সরকার ১৬,৬৬৬ টাকা বহন করে৷ অর্থাৎ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ৯০:১০ অনুপাতে অর্থ বরাদ্দ করে৷ তিনি জানান, গত ৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এমন ৬টি রাজ্যের গরীবদের আবাসনের জন্য ’লাইট হাউস প্রজেক্ট’ হাতে নিয়েছেন৷ রাজ্যগুলি হল গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, তামিলনাডু ও ত্রিপুরা৷ আমাদের রাজ্যের বর্ডার গোলচক্কর এলাকায় ১০০০ জন গরীবের জন্য এরূপ আবাস নির্মাণ করা হবে৷ প্রতিটি ঘর নির্মাণে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হবে৷
আমরুট প্রকল্প সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ড রামটেকে জানান, নগর এলাকাবাসীদের বিশেষ করে গরীব ও পিছিয়ে পড়া জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে আমরুট প্রকল্পে পানীয় জল সরবরাহ করা, নর্দমা সাফাই এবং আরবান ট্রান্সপোর্ট ইত্যাদি মৌলিক পরিষেবাগুলি প্রদান করা হয়ে থাকে৷ ত্রিপুরায় একমাত্র আগরতলা শহরই আমরুট প্রকল্পের জন্য বিবেচিত হয়েছে৷ রাজ্য সরকার আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে অটল জলধারা প্রকল্পে বাড়ী বাড়ী বিশুদ্ধ পানীয়জল পৌঁছানোর উদ্যোগ নিয়েছে৷
তিনি জানান, ১.২২ কোটি টাকা ব্যয়ে সাতলাখি বাড়ির সামনের জলাধারটির সৌন্দর্যায়ণ করা হয়েছে৷ ৯৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বোধজং গার্লস সুকল সংলগ্ণ পুকুরটি সংস্কারে হাত দেওয়া হয়েছে৷
উত্তর জোনে (ওয়ার্ড নং ১ এবং ২) ৯.৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে পাইপ লাইন (নর্দমা) বসানোর কাজ চলছে৷ তাছাড়া ১.৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে কামারপুকুরের সৌন্দর্যায়ণে হাত দেওয়া হয়েছে৷ তিনি জানান, পানীয় জল সরবরাহে পঞ্চমুখে ৫৯.৫৫ কোটি টাকার ও ঊষাবাজারে ৫৫.১৬ কোটি টাকার প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে৷ নগর উন্নয়ন দপ্তরের বিশেষ সচিব কিরণ গিত্যে জানান, আগরতলা শহর ছাড়াও রাজ্যের ১৯টি নগর এলাকার উন্নয়নে সরকার নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছে৷ সাংবাদিক সম্মেলনে আগরতলা স্মার্ট সিটি মিশনের সি ই ও ডা শৈলেস কুমার যাদব উপস্থিত ছিলেন৷ এদিকে আজ দুপুরে কেন্দ্রীয় নগর উন্নয়ন ও আবাসন মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী (স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত) হরদীপ সিং পুরী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দিল্লী থেকে এই প্রকল্পের পর্যালোচনা করেন৷