দ্বাদশের ফলাফল ঘোষিত, পাশের হার বেড়ে ৮০.৫১ শতাংশ, আবারও এগিয়ে মেয়েরাই

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৬ জুন ৷৷ ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে৷ এবছর উচ্চ মাধ্যমিকে পাশের হার ৮০.৫১ শতাংশ৷ গত বছরের তুলনায় এবছর পাশের হারে ১.৮৯ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে৷ এবছরও পাশের হারে মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে৷ বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে এ-কথা জানিয়েছেন ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সভাপতি ড. ভবতোষ সাহা৷ তাঁর কথায়, এবছর পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬৩ দিন পর ফলাফল ঘোষণা করা সম্ভব হয়েছে৷ আগামীবছর আরো তাড়াতাড়ি ফলাফল ঘোষণার চেষ্টা করা হবে৷

এদিন তিনি জানিয়েছেন, উচ্চ মাধ্যমিকে কৃতি তালিকায় কোন পরিবর্তন হয়নি৷ বিজ্ঞান বিভাগে যারা প্রথম দশে স্থান পেয়েছিলেন তারাই উচ্চ মাধ্যমিকের সমস্ত বিভাগে কৃতি হয়েছেন৷ তবে, কলা ও বাণিজ্য বিভাগে তনুশ্রী বিশ্বাস প্রথম হয়েছেন৷ চন্দ্রপুর কলোনী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী তনুশ্রী ৫টি বিষয়ে লেটার মার্কস সহ ৪৫১ নম্বর পেয়েছে৷ আজ পর্ষদ সভাপতি জানিয়েছেন, এবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা ১ মার্চ শুরু হয়ে ৩ এপ্রিল সমাপ্ত হয়েছে৷ তিনি আরো জানান, এবছর উচ্চমাধ্যমিকে ২৭ হাজার ১৯৭ জন পরীক্ষার্থী নাম নথিভুক্ত করেছিলেন৷ তাদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ৩৭৮৬ জন, বাণিজ্য বিভাগে ৯৬০ জন এবং কলা বিভাগে ২২ হাজার ৪৫১ জন নাম নথিভুক্ত করেছিলেন৷ কিন্তু, পরীক্ষা দিয়েছিলেন ২৭ হাজার ১৫৫ জন৷ তাদের মধ্যে ছেলে ১৩ হাজার ৯০৬ জন এবং মেয়ে ১৩ হাজার ২৪৯ জন৷

ড. ভবতোষ সাহা জানান, সারা ত্রিপুরায় মোট ৪০০ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা এবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন৷ তারা রাজ্যের ৫৯টি পরীক্ষা কেন্দ্রভুক্ত ৮৩টি বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, উচ্চমাধ্যমিকে পরীক্ষার জন্য এবছর দুটি নতুন পরীক্ষাস্থল বেছে নেওয়া হয়েছিল৷ ধলাই জেলার আমবাসাস্থিত চন্দ্রাইপাড়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং দক্ষিণ জেলার অন্তর্গত বিলোনীয়ায় রাজনগর কলোনি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এবছরই পরীক্ষাস্থল হিসেবে বাছাই হয়েছে৷

পর্ষদ সভাপতি জানিয়েছেন, এবছর মাদ্রাসা ফাজিল পরীক্ষায় ১৯ জন নথিভুক্ত করেছিলেন৷ সোনামুড়া, কুর্তি এবং কৈলাসহরের টিলাবাজার মাদ্রাসা থেকে তারা পরীক্ষা দিয়েছে৷ তিনি জানান, ফলাফল প্রকাশেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ এবছর পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬৩ দিন পর ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে৷ সাথে তিনি জানান, এবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের জন্য কোন পরীক্ষার্থী বহিসৃকত হয়নি৷

ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার একটি রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে৷ তাতে দেখা গিয়েছে, গত বছরের তুলনায় এবছর পরীক্ষায় নথিভুক্তের ক্ষেত্রে ৬.৫৬ শতাংশ এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণে ৬.৭৩ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে৷ এদিকে, জেলাভিত্তিক পরীক্ষার্থীর হিসেব অনুযায়ী পশ্চিম জেলায় সর্বাধিক ৭৩৩৮ জন পরীক্ষার্থী এবছর উচ্চমাধ্যমিকে পরীক্ষা দিয়েছেন৷ অন্যদিকে, ধলাই জেলায় সবচেয়ে কম ২১৮২ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছেন৷

এবছর বিজ্ঞান বিভাগের ফলাফল আগেই প্রকাশিত হয়েছে৷ তাতে পাশের হার ছিল ৮৮.৯৮ শতাশ৷ আজ কলা ও বাণিজ্য বিভাগের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে৷ পর্ষদ সভাপতি ড. সাহা জানিয়েছেন, এবছর উচ্চমাধ্যমিকে কলা বিভাগে ১৮ হাজার ৩৯৪ জন পরীক্ষা দিয়েছিলেন৷ তাদের মধ্যে ১৪ হাজার ৫৪০ জন পাশ করেছেন৷ পাশের হার ৭৯.০৫ শতাংশ৷ গত বছর উচ্চমাধ্যমিকে কলা বিভাগে পাশের হার ছিল ৭৮.১৭ শতাংশ৷

তিনি আরো জানান, এবছর বাণিজ্য বিভাগে ৬৮৬ জন পরীক্ষা দিয়েছিলেন৷ তাদের মধ্যে ৫৩৬ জন পাশ করেছেন৷ পাশের হার ৭৮.১৩ শতাংশ৷ গত বছর উচ্চমাধ্যমিক বাণিজ্য বিভাগে পাশের হার ছিল ৬৭.৮৮ শতাংশ৷ পর্ষদ সভাপতির কথায়, আজ উচ্চমাধ্যমিকে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা হয়েছে৷ তাতে দেখা গেছে, এবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সারা ত্রিপুরায় সমস্ত বিভাগ মিলিয়ে ২২ হাজার ৪৩৮ জন পরীক্ষা দিয়েছিলেন৷ তাদের মধ্যে ১৮ হাজার ৬৪ জন পাশ করেছেন৷ পাশের হার ৮০.৫১ শতাংশ৷ গত বছর উচ্চমাধ্যমিকে পাশের হার ছিল ৭৮.৬২ শতাংশ৷

এদিকে, ত্রিপুরা স্ব-শাসিত জেলা পরিষদ এলাকার ফলাফলের তথ্য পাওয়া গিয়েছে৷ তাতে দেখা যাচ্ছে, বিজ্ঞান বিভাগের ফলাফল আগেই প্রকাশিত হয়েছিল৷ বিজ্ঞানে পাশের হার ছিল ৬৬.৬৭ শতাংশ৷ আজ কলা ও বাণিজ্য বিভাগের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর জানা গেছে, ত্রিপুরা স্ব-শাসিত জেলা পরিষদ এলাকায় বিদ্যালয়গুলিতে কলা বিভাগে ২৮৭৬ জন পরীক্ষা দিয়েছিলেন৷ তাদের মধ্যে ১৯৪৯ জন পাশ করেছেন৷ পাশের হার ৬৭.৭৭ শতাংশ৷ এদিকে, বাণিজ্য বিভাগে ৫ জন পরীক্ষা দিয়েছিলেন৷ পাশ করেছেন মাত্র ১ জন৷ পাশের হার ২০ শতাংশ৷ সমস্ত বিভাগ মিলিয়ে ত্রিপুরা স্ব-শাসিত জেলা পরিষদ এলাকায় এবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের হার ৬৭.৬৬ শতাংশ৷ গত বছর পাশের হার ছিল ৫৮.৭৯ শতাংশ৷

জেলাভিত্তিক ফলাফলের নিরিখে এবছরও উচ্চমাধ্যমিকে দক্ষিণ জেলা সবচেয়ে ভাল ফলাফল করেছে৷ দক্ষিণ জেলায় পাশের হার ৮০.৩১ শতাংশ৷ অন্যান্য জেলাগুলির মধ্যে পাশের হার সিপাহীজলা জেলায় ৮০.২৬ শতাংশ, গোমতি জেলায় ৭৫.৫০ শতাংশ, খোয়াই জেলা ৭৪.৫৮ শতাংশ, পশ্চিম জেলা ৭৪.১২ শতাংশ, উত্তর জেলা ৬৯.০৫ শতাংশ, ঊনকোটি জেলা ৬৪.২০ শতাংশ এবং ধলাই জেলায় ৬৩.৮৪ শতাংশ৷ এদিকে, এবছর উচ্চমাধ্যমিকে ৭৯.১০ শতাংশ ছেলে এবং ৮১.৯১ শতাংশ মেয়ে পাশ করেছেন৷

ত্রিপুরায় উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বিষয়ভিত্তিক ফলাফলে সবচেয়ে বেশী পাশের হার আরবিক এবং হিন্দি বিষয়ে৷ এই দুটি বিষয়ে ১০০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী পাশ করেছেন৷ আরবিক ৬ জন এবং হিন্দি ২০ জন, সকলেই পাশ করেছেন৷ এদিকে, অংক বিষয়ে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল হয়েছে৷ মাত্র ৪৭.৫১ শতাংশ ছাত্রছাত্রী অংকে পাশ করেছেন৷ এদিকে, এবছর উচ্চমাধ্যমিকে ২১টি বিদ্যালয়ে পাশের হার ১০০ শতাংশ৷ গত বছর ১৭টি বিদ্যায়লয়ে পাশের হার ছিল ১০০ শতাংশ৷ অন্যদিকে, এবছর ২টি বিদ্যালয়ে একজন ছাত্রও পাশ করতে পারেননি৷ গত বছর এমন কোন বিদ্যালয় ছিল না যেখানে একজন ছাত্রও পাশ করেননি৷

ফলাফলের তথ্য অনুযায়ী, অংক, পদার্থবিদ্যা, রসায়ণবিদ্যা এবং রাশিবিজ্ঞান বিষয়ে সবচেয়ে বেশি নম্বর উঠেছে৷ অংকে ৪ জন, পদার্থবিদ্যায় ২ জন এবং রসায়ণ ও রাশিবিজ্ঞানে ১ জন সর্বাধিক ৯৯ নম্বর পেয়েছেন৷ সবচেয়ে কম নম্বর পেয়েছে আরবিক বিষয়ে৷ একজন ছাত্রী আরবিকে ৪৯ নম্বর পেয়েছেন৷

এদিকে, মাদ্রাসা ফাজিল থিওলজিতে ৮৭.৫ শতাংশ এবং কলা বিভাগে ৭২.৭৩ শতাংশ ছাত্রছাত্রী পাশ করেছেন৷ থিওলজিতে ৮ জন পরীক্ষা দিয়েছিলেন এবং পাশ করেছেন ৭ জন৷ অন্যদিকে, কলা বিভাগে ১১ জন পরীক্ষা দিয়েছিলেন এবং পাশ করেছেন ৮ জন৷ আজ পর্ষদ সভাপতি জানিয়েছেন, ৮ জুন মাধ্যমিকের ফলাফল ঘোষণা হবে৷