মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়লেন সুদীপ বর্মণ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩১ মে৷৷ ছক সাজানো ছিল আগেই৷ তাই হয়তো, দিল্লি থেকে ফিরেই কালবিলম্ব না করে রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে সুদীপ রায় বর্মণকে বাদ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ শুক্রবার ভারপ্রাপ্ত মুখ্যসচিব কুমার অলক এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন৷ এখন থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান দপ্তর, তথ্য প্রযুক্তি দপ্তর এবং পানীয় জল ও স্বাস্থ্যবিধান দপ্তর সামলাবেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপ-মুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মাকে৷ এই দপ্তরগুলি সামলাতেন সুদীপ রায় বর্মন৷ তাতে, বিভিষণ ইস্যুতেই রাজ্য মন্ত্রিসভার অন্যতম হেভিওয়েট মন্ত্রীর উপর কোপ পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ মুখ্যমন্ত্রীর এই সাহসী সিদ্ধান্ত এখানেই থেমে থাকবে বলেও মনে হচ্ছে না৷ কারণ, ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরই হতে চলেছে মন্ত্রিসভায় রদবদল৷ ওইসময় দলের প্রতি আনুগত্য এবং লোকসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে বিবেচনা হবে বলেই অনুমান করা হচ্ছে৷


মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের সাথে সুদীপ রায় বর্মণের মতানৈক্য দেখা দিয়েছিল বেশ কয়েকদিন ধরেই৷ তাই হয়তো লোকসভা নির্বাচনে সুদীপ বর্মণকে প্রচারের ভার দেওয়া হয়নি৷ অবশ্য, চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনায় সুদীপ রায় বর্মণ যেভাবে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন, তাতে লোকসভা নির্বাচনী মুহুর্তে অন্তর্কোন্দলের বার্তাই ছড়িয়েছে গোটা রাজ্যে৷ বৃহস্পতিবার মন্ত্রী হিসেবে সুদীপ বর্মণ অন্তিম সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন৷ তাতে, অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করেই বক্তব্য রেখেছিলেন তিনি৷


শুক্রবার দিল্লি থেকে ফিরে দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ সচিবালয়ে পৌছান মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ সূত্রের খবর, এদিনই মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক হওয়ার সূচী নির্ধারিত ছিল৷ কিন্তু, মন্ত্রিসভার বৈঠক পিছিয়ে দেওয়া হয়৷ এই বৈঠকটি আগামী ৩ জুন অনুষ্ঠিত হবে৷ সূত্রের দাবি, মন্ত্রিসভার বৈঠক বাতিল হলেও, সুদীপ বর্মণ বাদে বাকি মন্ত্রিদের জরুরি তলব করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ সূত্রের আরো দাবি, বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ অন্য মন্ত্রিদের সুদীপ বর্মণকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি জানান মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়ার কারণও তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী৷ ওই সময় আধিকারিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত মুখ্যসচিব কুমার অলক সহ মুখ্যমন্ত্রীর বিশ্বাসভাজন কয়েকজন পদস্থ আধিকারিক৷ মন্ত্রিসভার বাকি সদস্যদের সাথে আলোচনা করেই সুদীপ বর্মণকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়ার এবং দপ্তর বন্টনের বিজ্ঞপ্তি জারি করেন ভারপ্রাপ্ত মুখ্য সচিব কুমার অলক৷


দূরত্ব থেকেই সম্পর্কে সূচনার পরিণতি লক্ষ্য করলেন রাজ্যবাসী৷ সুদীপ বর্মণের বিজেপি যোগ দেওয়া থেকে শুরু করে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন এবং রাজ্যপাট পরিচালনায় বারে বারেই দূরত্ব ফুটে উঠেছে৷ সাধারণত, বিজেপি অফিসেসুদীপ বর্মণকে দেখা যায় না৷ সাংগঠনিক আদর্শের সাথেও তাঁর বৈসাদৃশ্য ফুটে উঠেছে বার বার৷ সমালোচকদের মতে, রাজ্য মন্ত্রিসভায় ক্ষমতা জাহিরে সমান্তরাল প্রতিযোগিতা চলেছে৷
বিজেপি প্রদেশ সভাপতি তথা মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব লোকসভা নির্বাচনের পরই সাংগঠনিক সভায় বিভিষণদের চিহ্ণিত করে শাস্তি দেওয়ার নিদান দিয়েছিলেন৷ নির্বাচনী আচরণ বিধি উঠে যেতেই প্রশাসনের কর্তা মুখ্য সচিবের উপর কোপ পড়েছিল৷ তাঁকে সিপার্ডে ডিজি পদে বদলি করে দেওয়া হয়েছিল৷ তবে, আরো বেশী সাহসী সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রী নিতে চলেছেন তার আভাস সন্ত্রাস ইস্যুতে সরকারী বাসভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে দিয়েছিলেন তিনি৷


সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাথে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ বৈঠকে রাজ্যের রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক পরিস্থিতি বিষয়ে অমিত শাহকে অবগত করেন তিনি৷ পাশাপাশি, রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিষয়েও দলের সর্বভারতীয় সভাপতিকে জানিয়েছেন তিনি৷ পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভায় রদবদল হবে৷ লোকসভা নির্বাচন এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের প্রতি আনুগত্য এবং প্রশাসনিক কর্মক্ষমতার উপর মন্ত্রিসভার সদস্য বাছাই বিবেচিত হবে৷ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে এই মর্মে রিপোর্ট তৈরি করে পাঠানো হবে বলে অমিত শাহকে জানিয়েছেন বিপ্লব দেব, সূত্রের এমনটাই দাবি৷ তবে, সুদীপ রায় বর্মণ বাদে কাউকেই এখনই মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না, সে-বিষয়ে দিল্লি থেকে সবুজ সংকেত পেয়েই দেরী করেননি মুখ্যমন্ত্রী৷ রাজ্যে ফিরেই সুদীপ বর্মণকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দিলেন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রীর এই সাহসী সিদ্ধান্তে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নিতে চলেছে তা এখনই অনুমান করা যাচ্ছে না৷