দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু মোদির

নিজস্ব প্রতিনিধি৷৷ নয়াদিল্লি, ৩০ মে৷৷ দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করলেন নরেন্দ্র মোদি৷ রাইসিনা হিলসে জমকালে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন তিনি৷ এরই সাথে আজ তিনি ৫৭ জন মন্ত্রিকে নিয়ে নতুন ইনিংস শুরু করলেন৷ এই ঐতিহাসিক মুহুর্তের সাক্ষী হতে জাতীয় রাজধানী দিল্লিতে চাঁদের হাট বসেছিল৷

সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে দেশবাসী প্রাণ খুলে আশীর্বাদ দিয়েছে নরেন্দ্র মোদি৷ একা বিজেপির ৩০৩ সাংসদ, এই প্রচন্ড সংখ্যাগরিষ্ঠতা আরো আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে তাঁকে, মনে করা যেতেই পারে৷ এরই সাথে প্রত্যাশা বাড়িয়ে নতুন যাত্রা শুরু করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি৷ নয়া ইনিংসে মোদি সেনায় যোগ দিয়েছেন বিজেপির জয়ে অন্যতম কান্ডারি অমিত শাহ৷ ফলে, রাজনৈতিক যুদ্ধের মতোই ক্ষুরধার প্রতিভার প্রতিফলন দেশবাসী দেশ পরিচালনায় প্রত্যক্ষ করবেন বলে আশাবাদী৷ নির্বাচনী লড়াইয়ে মোদি-শাহ জুটির জুড়ি মেলা ভাড়৷ ঠিক একইভাবে দেশের হাল ফেরাতে এই জুটি শতকের পর শতক হাঁকাবেন প্রত্যাশা দেশবাসীর৷

বৃহস্পতিবার রাজধানী দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবন চত্বরের ফোর কোর্টে দেশ-বিদেশ থেকে আগত অতিথি, দলীয় সদস্য-সমর্থক, সমাজের বিভিন্ন দিকের কৃতি গুণী জনের সামনে শপথ নেন নরেন্দ্র মোদি৷ রাষ্ট্রপতি রামাথ কোবিন্দ তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান৷ হিন্দিতে শপথ বাক্যপাঠ করেন তিনি৷ শপথগ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে করমর্দন করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি৷

এদিন শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের জন্য রাষ্ট্রপতি ভবন সহ গোটা রাইসিনা হিলসকে বিশেষ ভাবে সাজানো হয়৷ নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়৷ এদিন নরেন্দ্র মোদির পাশাপাশি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন অমিত শাহ, রাজনাথ সিং, স্মৃতি ইরানি, মুক্তার আববাস নাকভি, হরসিমরত কৌর বাদল, রামবিলাস পাসওয়ান, নির্মালা সীতারমণ মতো নেতানেত্রীরা৷ ছয় হাজারের অধিক অতিথি এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন৷ কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, দলের সভাপতি রাহুল গান্ধী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা দেবী সিং পাটিল শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷ বলিউড বহু অভিনেতা অভিনেত্রীদেরও শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷ অনুপম খের, শাহিদ কাপুর, কঙ্গনা রানাওয়াত, জিতেন্দ্র, পরিচালক রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহেরা, করণ জোহর শপথ গ্রহণে উপস্থিত ছিলেন৷

এছাড়াও বিমস্টেক গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির রাষ্ট্র নেতারা উপস্থিত থাকেন৷ অন্যদিকে অনিল আম্বানি, মুকেশ আম্বানি, রতন টাটারাও এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন৷
উল্লেখ করা যেতে পারে ২০১৪ সালে রাষ্ট্রপতি ভবনের ফোর কোর্টে নরেন্দ্র মোদীকে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়৷ আমন্ত্রিত ছিলেন সার্ক গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সদস্য৷ প্রায় ৩৫০০ অতিথিদের সামনে সেবার ১৪তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী৷ এর আগে ১৯৯০তে চন্দ্রশেখর এবং ১৯৯৯ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ রাষ্ট্রপতি ভবনের ফোর কোর্টে নিয়েছিলেন৷

মোদি মন্ত্রিসভায় এবার বেশ কয়েকজন জায়গা করে নিতে পারেননি৷ মন্ত্রিসভায় থাকতে না চেয়ে অরুণ জেটলি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়েছিলেন৷ তিনি ছাড়া আরও কয়েকজন হেভিওয়েট মন্ত্রি এবার বাদ পড়েছেন৷ সুষমা স্বরাজও শারিরিক অসুুস্থতার কারণ দেখিয়ে নিজেকে মন্ত্রিসভায় থাকতে চাননি৷ এছাড়া, উমা ভারতী, মেনকা গান্ধী, জয়ন্ত সিনহা, সুরেশ প্রভু, রাজ্য বর্ধন সিং রাঠোর, রাধা মোহন সিং, জে পি নাড্ডা, মনোজ সিনহা, অনুপ্রিয়া প্যাটেল, হন্সরাজ অহির, ডা. মশেহ শর্মা প্রমুখ মন্ত্রিরা এবার মোদি সেনায় জায়গা করে নিতে পারেননি৷ এছাড়াও আলফোন্স কন্ননথম, বিজয় গোয়েল, রাধাকৃষ্ণন পি, অনন্ত হেগরে, ডা. সত্যপাল সিং, এস এস আহলুওয়ালিয়া, রামকৃপাল যাদব, হরিভাই পার্থীভাই চৌধুরী, চৌধুরী বিরেন্দ্র সিং, সি আর চৌধুরী, পি পি চৌধুরী, রাজেন গোহেন, ওয়াই এস চৌধুরী, সুদর্শন ভগৎ এবং বিষ্ণুদেব সাই এবার মন্ত্রি হতে পারেননি৷

দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন নরেন্দ্র মোদি৷ সেই দূর্লভ এবং ঐতিহাসিক মুহুর্তের সাক্ষী হতে ত্রিপুরা থেকে রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, উপ-মুখ্যমন্ত্রী এবং খাদ্যমন্ত্রী সহ একাধিক বিধায়ক ও শীর্ষ নেতৃত্বরা দিল্লি গিয়েছেন৷ ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব গতকাল অরুনাচল প্রদেশ সরকারের শপথ গ্রহণ সমারোহে যোগ দিয়ে দিল্লি পাড়ি দিয়েছেন৷ উপ-মুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মাও গতকাল দিল্লি গিয়েছেন৷ এছাড়া খাদ্য ও জনসংভরণ মন্ত্রী মনোজ কান্তি দেব আজ সকালের বিমানে দিল্লি গিয়েছেন৷ মুখ্য সচেতক কল্যাণী রায়ও আজ শপথ গ্রহণ সমারোহে অংশ নিতে গিয়েছেন৷ এছাড়া দুই নবনির্বাচিত সাংসদ বেরতি কুমার ত্রিপুরা ও প্রতীমা ভৌমিক দিল্লি গিয়েছেন৷

বিজেপি প্রদেশ মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর ভিক্টর সোম জানিয়েছেন, বিজেপি প্রদেশ সাধারণ সম্পাদক রাজীব ভট্টাচার্য্য সহ দলের একাধিক শীর্ষ নেতৃত্ব আজ সকালের বিমানে দিল্লি গিয়েছেন৷ তিনি জানান, বিধায়ক রামপ্রসাদ পাল, ভগবান দাস, পিনাকী দাস সহ মোট ১২ জনও আজ সকালের বিমানে শপথ গ্রহণ সমারোহে অংশ নিতে গেছেন৷ তাঁদের সাথে রয়েছেন প্রদেশ বিজেপি সাধারণ সম্পাদক অমিত রক্ষিত, যুব মোর্চার সভাপতি টিংকু রায়, মহিলা মোর্চার সভানেত্রী পাপিয়া দত্ত, সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি বাহারুল ইসলাম, ৮ জেলা সভাপতি সহ অন্যান্যরা আজ দিল্লি গেছেন৷

প্রদেশ বিজেপি মুখপাত্র নবেন্দু ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, আজ রাতে বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের সাথে বিভিন্ন রাজ্যের প্রদেশ জেলা সভাপতিদের বৈঠক হবে৷ ত্রিপুরা প্রদেশ জেলা সভাপতিরা আজ অমিত শাহের সাথে সাংগঠনিক বৈঠক করবেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *