নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৯ মে৷৷ ব্যাটারি চালিত প্যাডেল রিকশা চলাচল অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য ত্রিপুরা সরকারকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে ত্রিপুরা হাইকোর্ট৷ পশ্চিম ত্রিপুরার জেলাশাসক, পশ্চিম জেলা পুলিশ সুপার, পশ্চিম জেলা ট্রাফিক সুপার এবং আগরতলা পুর নিগমের কমিশনারকে ত্রিপুরা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন অবিলম্বে সমস্ত ব্যাটারি চালিত প্যাডেল রিকশা থেকে ব্যাটারি খুলে নিতে হবে৷ এই নির্দেশ অমান্য হলে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার দায়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি৷

প্রসঙ্গত, যাত্রী সুরক্ষায় কোনও আপস নয়, এই কথা বলে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ব্যাটারি চালিত প্যাডেল রিকশা বেআইনি বলে ঘোষণা করেছিল ত্রিপুরা হাইকোর্ট৷ দীর্ঘ সময় ধরে আগরতলায় মোটর চালিত প্যাডেল রিকশা চলাচল করা সত্ত্বেও প্রশাসনের তরফে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় উচ্চ আদালত ক্ষুব্ধ বলেও রায়ে উল্লেখ করেছিল৷ ওইদিন ত্রিপুরা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জল কারোল এবং বিচারপতি অরিন্দম লোধের ডিভিশন বেঞ্চ রায় দিয়ে বলেছিল, নয়া নিয়ম চালু না হওয়া পর্যন্ত ব্যাটারি চালিত প্যাডেল রিকশা রাস্তায় চলাচল করতে পারবে না৷
১৯ ফেব্রুয়ারি ওই মামলায় চূড়ান্ত শুনানি হয়েছিল৷ ত্রিপুরা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জল কারোল এবং বিচারপতি অরিন্দম লোধ জন নিরাপত্তা সুরক্ষিত নয় জেনেও পুর নিগম কর্তৃপক্ষ এবং জেলা প্রশাসন কেন দীর্ঘ সময় ধরে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি, তা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন৷
ওইদিন আদালত রায়ে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, জন নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতেই হবে৷ তার জন্য পুর কমিশনার, ট্রাফিক পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল নয়া নিয়ম চালু না হওয়া পর্যন্ত আগরতলার রাস্তায় মোটর চালিত প্যাডেল রিকশা চলাচল করতে দেওয়া যাবে না৷ পাশাপাশি চার সপ্তাহের মধ্যে গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে আদালতে রিপোর্ট জমা দিতে হবে৷
এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ট্রাফিক ইনস্পেক্টর সুকান্ত বিশ্বাস প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই প্যাডেল রিকশা থেকে মোটর খুলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ তাই এই কাজের জন্য তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবকুমার দেব৷ অনুমতি ছাড়া প্যাডেল রিকশা থেকে মোটর খুলে নেওয়ার কাজে নিয়োজিত ইনস্পেক্টর সুরেশ দেববর্মা এবং সাব-ইন্সপেক্টর চন্দ্রশেখর বণিককেও শোকজ করা হয়েছিল৷
এদিকে, গত ৮ মার্চ ব্যাটারি চালিত প্যাডেল রিকশাকে শর্তাধীন বৈধতায় অনুমোদন দিয়েছিল ত্রিপুরা মন্ত্রিসভা৷ ফলে, মোটর চালিত প্যাডেল রিকশায় রাজ্যে যাত্রী বহন করতে পারলেও নির্দিষ্ট নিয়ম তাদের মানতে হবে৷
ওইদিন রাতে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী রতনলাল নাথ মন্ত্রিসভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেন, রিকশা নিয়ামক পূর্বের রুলসবাতিল করা হয়েছে৷ নয়া রুলসরাজ্য মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে৷ ফলে এখন রাজ্যে ব্যাটারি চালিত প্যাডেল রিকশা চলাচল করতে পারবে৷ আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালতের রায়ে শহরে ব্যাটারি চালিত প্যাডেল রিকশা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল৷ স্পর্শকাতর এই বিষয়টি রাজ্য সরকার যথেষ্ট গুরুত্ব বলে মনে করেছে৷ কারণ, উচ্চ আদালতের এই রায়ে বহু গরিব রিকশা চালক ভীষন সমস্যায় পড়তেন৷ তাই, রিকশা আইনের রুলসপরিবর্তন করা হয়েছে৷
তিনি আরও জানিয়েছিলেন, এখন থেকে রিকশা চালকদের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ পুর নিগম থেকে তাঁরা রেজিস্ট্রেশন নেবেন৷ পাশাপাশি তাঁদেরকে রেজিস্ট্রেশন নম্বরও দেওয়া হবে৷ রিকশায় সামনে ও পেছনে ওই রেজিস্ট্রেশন নম্বর উল্লেখ থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ তিনি আরও জানান, প্যাডেল রিকশায় ব্যাটারির ক্ষমতা বেঁধে দেওয়া হয়েছে৷ ০২৫ কিলো ওয়াটের বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি প্যাডেল রিকশায় লাগানো যাবে না৷ পাশাপাশি মোটর চালিত প্যাডেল রিকশায় গতিও বেঁধে দেওয়া হয়েছে৷ কোনও মোটর চালিত প্যাডেল রিকশা প্রতি ঘণ্টায় ১২ কি.মি. বেশি গতিতে চলাচল করতে পারবে না৷
আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, এতদিন প্যাডেল রিকশায় ব্যাটারির ক্ষমতা এবং গতি নির্ধারণে কোনও রুলসছিল না৷ ফলে, যেমন-খুশি ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি লাগাতেন প্যাডেল রিকশা চালকরা৷ শুধু তাই নয়, গতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে রুলসে স্পষ্ট কোনও কিছুই উল্লেখ না থাকায় মোটর চালিত প্যাডেল রিকশা প্রচণ্ড গতিতে চলাচল করত৷ নয়া এই রুলসে গতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে বলে মনে করছে রাজ্য সরকার৷ পাশাপাশি, অত্যধিক গতির ফলে বিভিন্ন সময়ে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে তা রোধ করা যাবে বলে আশাবাদী রাজ্য সরকার৷
তিনি জানিয়েছিলেন, পুলিশ কিংবা ট্রাফিক দফতর মোটর চালিত প্যাডেল রিকশায় কোনও ধরনের চার্জ কিংবা চালান কাটতে পারবে না৷ শুধুমাত্র পুর নিগমের টাস্ক ফোর্সের নজরদারিতে থাকবে ওই রিকশাগুলি৷
এদিকে, ইনস্পেক্টর সুকান্ত বিশ্বাসকে বরখাস্তের বিষয়টি আদালতে গড়ায়৷ মঙ্গলবার ত্রিপুরা হাইকোর্ট রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চায় আদালতের নির্দেশ কেন পালন হয়নি৷ আজ ত্রিপুরা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি হয়৷ প্রধান বিচারপতি আবারও ত্রিপুরা সরকারের ভূমিকায় বিরক্তি প্রকাশ করেন৷ তিনি বলেন, জনসাধারণের জীবনের ঝুঁকির সাথে রিকশা চালকের রোজগার মিলিয়ে দেওয়া উচিত হবে না৷ জন নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হওয়ার পর রিকশা চালকদের বিষয়ে ভাবা উচিত বলে মনে করি৷ তিনি পশ্চিম ত্রিপুরা জেলাশাসক, পশ্চিম জেলা পুলিশ সুপার, পশ্চিম জেলা ট্রাফিক সুপার এবং আগরতলা পুর কমিশনারকে আজ থেকে ব্যাটারি চালিত রিকশায় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন৷ প্রধান বিচারপতি সাফ নির্দেশ দিয়েছেন, আজ থেকেই সমস্ত রিকশা থেকে ব্যাটারি খুলে নিতে হবে৷
এই রায় সম্পর্কে পশ্চিম জেলা ট্রাফিক সুপার পিনাকি সামন্ত বলেন, রাজ্য সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি৷ আদেশ দিলেই সমস্ত রিকশা থেকে ব্যাটারি খুলে নেওয়ার অভিযানে নামবে ট্রাফিক দফতর৷ এদিকে, আইনসচিব দাতামোহন জমাতিয়া বলেন, হাইকোর্টের অর্ডারের কপি এখনও পাননি৷ কপি হাতে পাওয়ার পর এ-বিষয়ে চিন্তাভাবনা করার হবে৷

