রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিস্তর পরিমাণে নেশা সামগ্রী বাজেয়াপ্ত, গ্রেপ্তার এক

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৭ মে৷৷ ত্রিপুরায় বাংলাদেশ সীমান্তে কড়া পাহারা সত্ত্বেও পাচার বাণিজ্য বন্ধ করা যাচ্ছে না৷ একাধিক স্থানে অভিযান জালিয়ে বিএসএফ ইয়াবা ট্যাবলেট, গাঁজা এবং কাপড় উদ্ধার করেছে৷ শুধু তাই নয়, পাচারকারীদের ধরতে গিয়ে গুলিও চালাতে হয়েছে বিএসএফকে৷ বিএসএফ আজ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, রাজ্যের সোনামুড়া, মেলাঘর, বিশালগড়, আগরতলা, শ্রীমন্তপুর, এনসিনগর এবং বক্সনগর পাচার বাণিজ্যের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে৷ নেশামুক্ত ত্রিপুরা গঠনের ক্ষেত্রে তা মূল বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে৷


বিএসএফ-এর ত্রিপুরা ফ্রন্টিয়ারের জনসংযোগ আধিকারিক জানিয়েছেন, সিপাহিজলা জেলার সোনামুড়া মহকুমার আশাবাড়ি বিওপি-র জওয়ানরা সীমান্তে টহল দেওয়ার সময় ১,২০০টি ইয়াবা ট্যাবলেট বাজেয়াপ্ত করেছে৷ তিনি জানান, পাচরকারীরা বিএসএফ জওয়ানদের দেখতে পেয়ে বাঁশঝাড়ের পিছনে লুকিয়ে পড়েছিল৷ কিন্তুতাদের নড়াচড়ায় জওয়ানরা বুঝতে পারেন পাচারকারীরা ওই স্থানে লুকিয়ে রয়েছে৷ সঙ্গে সঙ্গে ওখানে তল্লাশি চালানো হয়৷ কিন্তু পাচরকারীরা রাতের অন্ধকারের সুযোগে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়৷ তিনি বলেন, ওই স্থান থেকে যে ১,২০০ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার হয়েছে সেগুলোর বাজারমূল্য ৬ লক্ষ টাকা৷ তিনি জানান, ওই ট্যাবলেটগুলি কলমছড়া পুলিশের হাতে সমঝে দেওয়া হয়েছে৷


বিএসএফ-এর জনসংযোগ আধিকারিক আরও জানান, একই এলাকায় আরেকটি স্থানে কয়েকজন পাচারকারী মাথায় করে কাপড় পাচার করছিলেন৷ তিনি জানান, সীমান্তে টহলরত বিএসএফ জওয়ানরা হঠাৎ লক্ষ্য করেন কাঁটাতারের বেড়ার এ-পাড় থেকে ও-পাড়ে বাংলাদেশে সামগ্রী পাচার করা হচ্ছে৷ সঙ্গে সঙ্গে তাদের পাচার থামানোর নির্দেশ দেওয়া হয়৷ কিন্তু তারা সেই আদেশ শুনেনি এবং পাচার চালিয়ে যাচ্ছিল৷ তখন বাধ্য হয়েছে বিএসএফ জওয়ানরা নন-ল্যাথেল বন্দুক থেকে গুলি ছুঁড়েন৷ গুলির শব্দে পাচারকারীরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়৷ কিন্তু পাচার সামগ্রী সেখানেই ফেলে রেখে গিয়েছে৷ বিএসএফ আধিকারিক বলেন, ১০০টি কটনের শাড়ি এবং ৯-টি লেহেঙ্গা উদ্ধার হয়েছে৷ এগুলোর বাজারমূল্য ১ লক্ষ ৯ হাজার টাকা৷ তিনি জানান, কাপড়গুলি সোনামুড়া কাস্টমসের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে৷


এদিকে, একই রাতে মোহনপুরের সীমান্ত এলাকায় ৪ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছে বিএসএফ৷ যার বাজার মূল্য ২০ হাজার টাকা৷ বিএসএফ আধিকারিক জানিয়েছেন, ওই গাঁজা আগরতলা কাস্টমসের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে৷
এদিকে, নতুন সরকারের কড়া নির্দেশের প্রেক্ষিতে রাজ্য পুলিশের নেশা বিরোধী অভিযান জারি রয়েছে৷ আজ শুক্রবার ত্রিপুরায় একাধিক জায়গায় অভিযান চালিয়ে বহু পরিমাণের নেশা সামগ্রী আটক করেছে পুলিশ৷


গোপন খবরের ভিত্তিতে পশ্চিম জেলার অন্তর্গত জিরানিয়া মহকুমার বীরেন্দ্রনগর এলাকার নেশা কারবারি ওসমান হুসেনের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ৷ এই অভিযানে ওসমানের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ২৬ গ্রাম হেরোইন এবং নেশার ইয়াবা ট্যাবলেট৷ কিন্তু পুলিশের উপস্থিতির আগাম আঁচ পেয়ে পালিয়ে যায় ওসমান৷ এদিন অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন এসডিপিও সুমন মজুমদার এবং ওসি বাবুল দাস৷ নেশা কারবারি ওসমানকে না পাওয়া গেলেও জিরানিয়া থানায় এনডিপিএস আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে বলে জানান এসডিপিও সুমন মজুমদার৷


অপর দিকে ধলাইয়ের জেলা সদর আমবাসায় ৮ নম্বর জাতীয় সড়কে রুটিন তল্লাশির সময় একটি নম্বরবিহীন গাড়ি থেকে এসকাফ নামের নিষিদ্ধ কফসিরাপ উদ্ধার করেছে আমবাসা থানার পুলিশ৷ জাতীয় সড়কের আমবাসা কমলপুর চৌমুহনিতে তল্লাশির সময় নম্বর বিহীন একটি ছোট গাড়িকে দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়৷ তখন তারা গাড়িটিকে দাঁড়ানোর জন্য সিগনাল দেন৷ তবু গাড়িটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে৷ সে-সময় পুলিশ পেছনে ধাওয়া করে এবং গাড়িটিকে আটক করতে সক্ষম হয়৷


প্রথমে গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পাঁচ কার্টুন এসকফ সিরাপ উদ্ধার করা হয়৷ পরে গাড়িকে আমবাসা থানায় নিয়ে গিয়ে আবারও তল্লাশি চালানো হয়৷ তখন আরও এক কার্টুন কফ সিরাপ উদ্ধার হয়েছে৷ সব মিলিয়ে মোট ছয় কার্টুনে ৯৬০ শিশি কফ সিরাপ উদ্ধার হয়৷ সেই সঙ্গে সৌম্য দাস নামের এক যুবককে আটক করে পুলিশ৷


প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে, গাড়িটি ঊনকোটি জেলার কুমারঘাট থেকে আগরতলার উদ্দেশে আসছিল৷ আজকের বাজেয়াপ্তকৃত কফ সিরাপের বাজারমূল্য অনুমানিক এক লক্ষ টাকা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ অন্যদিকে, বিএসএফ পাচার বাণিজ্যের ক্রমাগত বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, ত্রিপুরায় এই প্রবণতা নেশামুক্ত রাজ্য গঠনে এবং আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে৷ সোনামুড়া, মেলাঘর, বিশালগড়, আগরতলা, শ্রীমন্তপুর, এনসিনগর এবং বক্সনগর পাচার বাণিজ্যের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে৷ তাই পাচার বাণিজ্যকে আরও কড়া হাতে মোকাবিলা করতে হবে৷