ঢাকা, ১২ মে (হি. স.) : বাংলাদেশে জোর করে ধর্মান্তরিত করার ঘটনা হঠাৎ করেই বেড়ে গিয়েছে। বেড়েছে সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর হামলা, হত্যা, নির্যাতন-নিপীড়ন, জায়গা-জমি দখল, মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনাও। নির্বাচনের পর গত চার মাসে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের চার মাসের (২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল) পরিসংখ্যান বলছে, গত মার্চ মাসে জোর করে ইসলাম ধর্মে রূপান্তরিত করা হয়েছে ৮ জনকে। এপ্রিল মাসে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৬। এ ক্ষেত্রে হিন্দু সম্প্রদায়ের কিশোরী ও যুবতীদের অপহরণ কিংবা জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্মান্তরিত করার ঘটনাই সিংহভাগ।
গ্রামাঞ্চলে অনেক পরিবার মেয়েদের স্কুল-কলেজে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন, কোথাও কোথাও স্কুল-কলেজে যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছেন। ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, “মূলত মেয়েদের প্রলুদ্ধ করে কিংবা জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করা হচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করা। নির্বাচনের পর থেকে যা ঘটছে, আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। আমরা প্রতিবাদ কর্মসূচি করেছি। আমরা সব সংখ্যালঘু সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করে জোর আন্দোলনের দিকে এগোচ্ছি।” হিন্দু মহাজোটের দুই অংশের নেতারাও বলছেন, “আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া বিকল্প নেই। এর মধ্যে আমরা প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানব বন্ধন করেছি।” হিন্দুদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করার লক্ষ্যেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হচ্ছে।ঐক্য পরিষদের পরিসংখ্যানে আরও বলা হয়েছে, এই চার মাসে ২৩ জন নিহত হয়েছেন, হত্যার হুমকি দিয়ে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে ১৭ জনকে। হামলার শিকার হয়েছেন ১৮৮ জন। ১৬২ পরিবারের জায়গা-জমি দখল করা হয়েছে।
২৯টি মন্দিরে হামলা ও ৪৩ টি প্রতিমা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। দেবোত্তর সম্পত্তি দখল করা হয়েছে ৬টি মন্দির ও শ্মশানের। ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ১২ জন মেয়ে। শ্লীলতাহানি করা হয়েছে ১০ জনের। ইসলাম অবমাননার ভুয়ো অভিযোগে ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে, তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। জোর করে গরুর মাংস খাওয়ানোর ঘটনা ঘটেছে একটি। ঐক্য পরিষদ ২০১৮ সালের পরিসংখ্যানে বলেছে, এ বছর হত্যা করা হয়েছে ৯০ জনকে। বাড়িঘর ও জায়গা-জমি দখল করা হয়েছে ১২২ পরিবারের। দেশ ছাড়ার জন্যে হুমকি দেওয়া হয় ১১৫ পরিবারকে। ২১টি মন্দিরের দেবোত্তর সম্পত্তি দখল করা হয়েছে। হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে ৫৮টি মন্দিরে। প্রতিমা ভেঙে দেওয়া হয়েছে ১৬৯টি। ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪৮ জন মেয়ে। অপহরণের পর জোর করে ধর্মান্তরিত করার ঘটনা ঘটেছে ১২টি। ইসলাম ধর্ম অবমাননার ভুয়ো অভিযোগ আনা হয়েছে ১০ জনের বিরুদ্ধে। জোর করে গরুর মাংস খাওয়ানোর ঘটনা ঘটেছে ৩টি। এছাড়াও চাঁদাবাজি, হত্যার হুমকি, হামলা, জায়গা-জমি দখলের হুমকি, শ্লীলতাহানি- সব মিলিয়ে ২০১৮ সালে ৩ হাজার ৩৮২টি সংখ্যালঘু আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে, হিন্দু মহাজোটের ২০১৮ সালের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ধর্মান্তরিত করার ঘটনা ঘটেছে ২৪টি। উচ্ছেদ করা হয়েছে ২১৭ টি হিন্দু পরিবারকে। ২ হাজার ৭৩৪ দশমিক ৮১ একর জায়গা-জমি জবরদখল করা হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বাস করছেন ১ হাজার ৫১০টি পরিবার।