হাইলাকান্দি, ১০ মে (হি.স.) : নামাজ পড়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ মোকাবিলায় নিরাপত্তা কর্মীদের গুলিতে হাইলাকান্দিতে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে৷ নিহত ব্যক্তির নাম জামির হুসেন৷ আরও আটজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শিলচর ম্যাডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন৷ বিবদমান দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় বরাক উপত্যকার হাইলাকান্দি জেলা সদর শহরে অনির্দিষ্টকালীন কার্ফু জারি করেছে প্রশাসন৷ কার্ফুর সময় কাউকে ঘর থেকে বের হতে বারণ করা হয়েছে৷ শুক্রবার দুপুর ১২টায় প্রকাশ্য রাস্তায় পবিত্র জুম্মার নামাজ আদায়ের চেষ্টাকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদের সূত্রে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়৷ মারমুখি জনতাতে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ করে৷ লাঠির দাওয়াই কাজ না করলে বেশ কয়েক রাউন্ড শূন্যে গুলি ছুঁড়তে বাধ্য হয়েছে পুলিশ৷ এ ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে প্রথমে ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৪৪ ধারা জারি করেছিলেন জেলাশাসক কীর্থি জল্লি৷ এর কিছুক্ষণ পর বেলা একটায় তাৎক্ষণিকভাবে সদর শহর এলাকায় অনির্দিষ্টকালীন সান্ধ্যআইন বলবৎ করেছেন তিনি৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও থমথমে৷ গোটা শহরে সিআরপিএফ টহল দিচ্ছে৷

ঘটনার সূত্রপাত হাইলাকান্দি শহরের মাড়োয়ারিপট্টি মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে৷ বেলা বারোটায় শুক্রবারের জুম্মার নামাজ আদায়ে মুসল্লির ভিড় জমিয়েছিলেন বহু ইসলাম ধর্মাবলম্বী৷ তাঁরা মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রকাশ্য রাস্তায় নামাজ আদায়ের জন্য অবস্থান নিলে বিবাদের সূত্রপাত৷ স্থানীয়রা রাস্তায় নামাজ আদায় না করার আবেদন জানাতে গেলে আচমকা মারমুখি হয়ে ওঠেন নামাজিরা৷ শুরু হয় মারপিট, ইট পাটকেল ছোঁড়া, ভাঙচুর৷ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে গোটা শহরে৷ এখানে-সেখানে ভাঙচুর করা হয় যাত্রীবাহী ছোট গাড়ি, অটো রিকশা, টোটোয়৷ অগ্ণিসংযোগ করা হয় যানবাহনে৷ সাধারণ মানুষ ও পথচারীরা এদিক-ওদিক দৌড়ে পালাতে থাকেন৷ মরমুখি জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ কর হয়৷ তাতে কাজ না হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশকে বাধ্য হয়ে শূন্যে কম করেও ১৫ রাউন্ড গুলি চালাতে হয়েছে৷উত্তেজনা সামাল দিতে জেলাশাসক কীর্থি জল্লি হাইলাকান্দিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৪ ধারা জারি করেন৷ এর খানিক পর বেলা একটা থেকে অনির্দিষ্টকালীন সান্ধ্যআইন জারি করেছেন জেলাশাসক৷ সংঘর্ষে বহু লোক আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে৷
বলা হচ্ছে, একটি মোটর বাইকের সিট কাটার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজকের পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে৷ দিন চারেক আগে তারাবির নামাজের সময় ওই মসজিদের সামনে কেউ একটি বাইকের সিট কেটে দিয়েছিল৷ ঘটনার তদন্ত করে দোষীকে শনাক্ত করে গ্রেফতারের দাবি ওঠে৷ সদর থানায় এফআইআর দাখিল হয়৷ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয় স্মারকপত্র৷ এর পরও সিট কাটার সঙ্গে জড়িত দোষীকে আটক করার কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি৷ ফলে ক্ষোভে ফুঁসছিলেন একাংশ৷ এরই প্রতিফলন আজকের ঘটনা৷
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে হাইলাকান্দি জেলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ণ্ রাখতে এবং পরিস্থিতি শান্ত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জেলাশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল৷ হাইলাকান্দির পরিস্থিতির ওপর তীক্ষ্ন নজর রাখতে রাজ্যের পুলিশ-প্রধান এবং মুখ্যসচিবকেও মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে৷

