নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২ মে৷৷ ত্রিপুরা পশ্চিম আসনে রিটার্নিং অফিসার তথা পশ্চিম জেলার জেলা শাসকের পদ থেকে সন্দীপ মাহাত্মেকে সরিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷ তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ত্রিপুরা পূর্ব আসনের রিটার্নিং অফিসার তথা ধলাই জেলা শাসক বিকাশ সিং৷ পাশাপাশি, আজ সন্ধ্যা পাঁচটার মধ্যে ত্রিপুরা পূর্ব আসনে রিটার্নিং অফিসারের নতুন প্যানেল তৈরী করে নির্বাচন কমিশনে জানানোর জন্য ত্রিপুরার মুখ্য নির্বাচন আধিকারীককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ এদিকে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় গড়মিলের কারণে ৪৪ জনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে কমিশন৷
রাজ্যে দুটি আসনে লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিম আসন নিয়ে বিরোধীরা এককাট্টা হয়ে অভিযোগে সরব হয়েছে৷ পশ্চিম আসনে ভোট কারচুপির অভিযোগে সমগ্র আসনে পুনঃ নির্বাচনের দাবিতে অনঢ় রয়েছেন বিরোধীরা৷ এরই মাঝে পশ্চিম আসনে রিটার্নিং অফিসারকে সরিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷
নির্বাচন কমিশনের সচিব অরবিন্দ আনন্দ এক চিঠিতে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারীককে জানিয়েছেন, ত্রিপুরা পশ্চিম আসনে রিটার্নিং অফিসার তথা পশ্চিম জেলা শাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পূর্ব আসনের রিটার্নিং অফিসার তথা ধলাই জেলা শাসক বিকাশ সিংকে৷ সাথে আরো জানিয়েছেন, পশ্চিম আসনে রিটার্নিং অফিসার সন্দীপ মাহাত্মেকে তাঁর পদ থেকে সরানোর পাশাপাশি সমস্ত নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে৷ কমিশন আজ সন্ধ্যে পাঁচটার মধ্যে ত্রিপুরা পূর্ব আসনে রিটার্নিং অফিসারের তথা ধলাই জেলা শাসকের নতুন প্যানেল তৈরি করে জানানোর জন্য রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারীককে নির্দেশ দিয়েছে৷
প্রসঙ্গত, রিটার্নিং অফিসার রদবদল হতে পারে খবর প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথেই ত্রিপুরা পূর্ব আসনে বামফ্রন্ট প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছেন৷ চিঠিতে তিনি মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে ত্রিপুরা পূর্ব আসনে রিটার্নিং অফিসার পরিবর্তন না করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন৷ কিন্তু, নির্বাচন কমিশন তাঁর অনুরোধ রাখেনি বলেই দেখা যাচ্ছে৷ ত্রিপুরা পূর্ব আসনে নতুন রিটার্নিং অফিসার নিযুক্ত করবে কমিশন৷
নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে গড়মিলের কারণে আবারও কড়া পদক্ষেপ নিল কমিশন৷ সূত্রের খবর, বিলোনীয়া মহকুমা শাসক তথা সহকারী রিটার্নিং অফিসার গুঞ্চা সনোবার নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত ৪৪ জনের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দক্ষিণ জেলা শাসক তথা জেলা নির্বাচন আধিকারীকের কাছে সুপারিশ করেছেন৷ সূত্রের খবর, ২১ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ, ৯ জনকে বরখাস্ত এবং ১৯ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার সুপারিশ করেছেন গুঞ্চা সনোবার৷ জানা গেছে, ১৫ জন প্রিসাইডিং অফিসার, ১৪ জন মাইক্রো অবজারভার, ৬ জন পোলিং অফিসার, ২ জন গ্রুপ ডি, ৪ জন পোলিং এজেন্ট এবং ২ জন ওয়েব কাস্টিং সদস্যের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সহকারী রিটার্নিং অফিসার দক্ষিণ জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচন আধিকারীকের কাছে সুপারিশ করেছেন৷
এদিকে, ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মন কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ তাঁর কথায়, ১১ এপ্রিল ত্রিপুরা পশ্চিম আসনে ভোট কারচুপির অভিযোগ আজ কার্য্যত স্বীকার করে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷ পশ্চিম আসনে রিটার্নিং অফিসারকে সরিয়ে দিয়ে কমিশন প্রমাণ করেছে ভোটে কারচুপি হয়েছে৷ প্রদ্যুতের বক্তব্য, পশ্চিম আসনে ভোট সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে দাবি করেছিলেন রিটার্নিং অফিসার৷ কিন্তু, দিন যত গড়িয়েছে, ভোট কারচুপির তত প্রমাণ মিলেছে৷ তাঁর দাবি, খোদ রিটার্নিং অফিসারের রিপোর্টে ৪৩৩টি বুথে গড়মিলের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে৷ তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এখন দেখতে হবে, পশ্চিম আসনে পুনঃ নির্বাচন নিয়ে কমিশন কি অবস্থান নেয়৷
এদিকে, পশ্চিম ত্রিপুরা লোকসভা আসনের রির্টানিং অফিসার (আর-ও) সন্দীপ এন মহাত্মেকে যাবতীয় নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে ভারতের নির্বাচন কমিশন৷ কমিশনের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ছে ত্রিপুরা রাজ্য বামফ্রন্ট৷
আজ সন্ধ্যায় এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে এ-কথা জানান ত্রিপুরা রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন ধর৷ আগরতলার মেলারমাঠ এলাকায় সিপিআইএম-এর রাজ্য কমিটির অফিসে আয়োজিত এই সাংবাদিক সম্মেলনে ফ্রন্টের অন্যান্য শরিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন৷ বিজনবাবু জানান, পশ্চিম আসনের রিটার্নিং অফিসারের বিরুদ্ধে বামফ্রন্টের তরফে একাধিকবার নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়েছিলো৷ এমন-কি তাঁকে নির্বাচনের কাজ থেকে সরানোর দাবিও জানিয়েছিলেন তাঁরা৷ পশ্চিম আসনের রিটার্নিং অফিসারকে সরানোর অর্থ হচ্ছে গত ১১ এপ্রিল পশ্চিম ত্রিপুরা লোকসভা আসনে ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে তা প্রমাণিত৷ তাই আজও বিজন ধররা সম্পূর্ণ পশ্চিম আসনে পুনঃ নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছেন৷
অপরদিকে, পূর্ব ত্রিপুরা লোকসভা আসনের আর-ও বিকাশ সিংকে পশ্চিম আসনের দায়িত্বে এনেছে নির্বাচন কমিশন৷ যেহেতু পশ্চিম আসনের তুলনায় পূর্ব ত্রিপুরা লোকসভা আসনের নির্বাচন অনেকটাই অবাধ হয়েছে, তাই তাঁরা আশা ব্যক্ত করছেন পশ্চিম আসনে পুনঃ নির্বাচন হলে তা তুলনামূলকভাবে ভালো হবে, আশা ব্যক্ত করেছেন বিজন ধর৷ সেই সঙ্গে পূর্ব ত্রিপুরা লোকসভা আসনে ভোটের গনণা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে একজন দায়িত্বশীল রিটার্নিং অফিসার নিয়োজিত করতেও দাবি জানান তিনি৷