নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩০ এপ্রিল৷৷ ত্রিপুরা পশ্চিম সংসদীয় ক্ষেত্রে ১৩১টি বুথে পুণঃ নির্বাচনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে অনুরোধ জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷ সেই মোতাবেক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মঙ্গলবার বিএসএফ এবং সিআরপিএফ-কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশ দিয়েছে৷ সূত্রের খবর, আসাম থেকে ১১ কোম্পানী বিএসএফ এবং চার কোম্পানী সিআরপিএফ ত্রিপুরায় পশ্চিম আসনে পুণঃ নির্বাচনে নিযুক্ত করার জন্য রাজ্য সরকারকে চিঠি পাঠিয়েছে৷ এই বিষয়ে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারীক শ্রীরাম তরুণিকান্তি জানিয়েছেন, পুণঃ নির্বাচন নিয়ে কমিশনের কোন নির্দেশ এখনও পাননি তিনি৷

১১ এপ্রিল ত্রিপুরা পশ্চিম আসনে লোকসভা নির্বাচন নিয়ে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনেছে কংগ্রেস ও সিপিএম৷ নির্বাচনের পর থেকেই পুণঃ নির্বাচনের দাবীতে নির্বাচন কমিশনে দরবার করছে বিরোধীরা৷ মঙ্গলবার সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং দলের পলিটব্যুরোর সদস্য নিলোৎপল বসু ত্রিপুরা পশ্চিম আসনে প্রার্থী শংকর প্রসাদ দত্ত ও পূর্ব আসনের প্রার্থী জীতেন্দ্র চৌধুরীকে সাথে নিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে পুণঃ নির্বাচনের দাবী জানিয়েছেন৷ ১৬৭৯টি বুথের মধ্যে পশ্চিম আসনে প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতে ৪৬৪টি বুথে রিগিংয়ের অভিযোগ জানিয়েছিল সিপিএম৷ পরবর্তী সময়ে সর্বমোট ৮৪৬টি বুথে ভোট কারচুপির জন্য পুণঃ নির্বাচন চাইছে সিপিএম৷
এদিকে, কংগ্রেসও ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে পশ্চিম আসনে পুণরায় নতুন করে নির্বাচনের দাবী জানিয়েছে কমিশনের কাছে৷ সোমবার পিসিসি সভাপতি প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মন এবং পশ্চিম আসনে কংগ্রেস প্রার্থী সুবল ভৌমিককে সাথে নিয়ে এআইসিসির শীর্ষ নেতৃত্বরা নির্বাচন কমিশনে পুণঃ নির্বাচনের দাবী পেশ করেছিলেন৷
প্রসঙ্গত, পশ্চিম আসনে নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারীক অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷ প্রথমে তিনি ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন৷ কিন্তু, পরবর্তী সময়ে ভোট প্রক্রিয়ায় গড়মিল রয়েছে তা তিনি মেনে নিয়েছেন৷ ভোট গড়মিলের কারণে আট শতাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে ভিডিও ফুটেজ পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে৷ পশ্চিম আসনের রিটার্নিং অফিসার ভোট প্রক্রিয়ায় গড়মিল নিয়ে ৪৩৩টি বুথের ভিডিও ফুটেজসহ সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ রিটার্নিং অফিসারের রিপোর্টে ৪৩৩টি বুথে গড়মিল ধরা পড়েছিল বলে উল্লেখ থাকে৷
এদিকে, বিশেষ পর্যবেক্ষক বিনোদ জোৎসিও পশ্চিম আসনে ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন৷ সূত্রের খবর, নির্বাচন কমিশনে বিনোদ জোৎসি ১৭৯টি বুথে পুণঃ নির্বাচনের সুপারিশ করেছেন৷ প্রসঙ্গত, পশ্চিম আসনে ভোট প্রক্রিয়ায় গড়মিল রয়েছে তা নির্বাচন কমিশনে বিভিন্ন সময়ে নেওয়া একাধিক পদক্ষেপ থেকে স্পষ্ট হয়েছে৷ বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক এবং গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে আইন শৃঙ্খলার প্রশ্ণে পূর্ব আসনে ভোট পিছিয়ে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন৷ শুধু তাই নয় পশ্চিম আসনে ভোট প্রক্রিয়ায় গড়মিলের জন্য রিটার্নিং অফিসারের নির্দেশে একাধিক নির্বাচন আধিকারীক ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ স্বাভাবিক ভাবেই পশ্চিম আসনে পুণঃ নির্বাচনের সম্ভাবনা প্রবল হয়েছে৷
সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মুখ্য নির্বাচন কমিশনার কমিশনের শীর্ষ আধিকারীকদের নিয়ে ত্রিপুরায় পশ্চিম আসনে পুণঃ নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে বৈঠক করেছেন৷ ওই বৈঠকে পুণঃ নির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলেও নির্বাচন কমিশন পশ্চিম আসনে পুণঃ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের চিঠিতে স্পষ্ট হয়েছে৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সেকেন্ড ইন কমান্ড (জি) মুকেশ টাটারবে রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব এবং রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশককে আজ এক ফ্যাক্স বার্তায় পশ্চিম আসনে পুণঃ নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি জানিয়েছেন৷ ওই ফ্যাক্স বার্তা অনুযায়ী নির্বাচন কমিসন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে ত্রিপুরা পশ্চিম আসনে ১৩১টি বুথে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েনের অনুরোধ জানিয়েছে৷ কমিশনের সুপারিশে আসাম থেকে ১১ কোম্পানী বিএসএফ এবং চার কোম্পানী সিআরপিএফ, মোট ১৫ কোম্পানী আধা সামরিক বাহিনী পুণঃ নির্বাচন প্রক্রিয়া সমাপ্ত হওয়া পর্য্যন্ত মোতায়েনের নির্দেশ জারী করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক৷ ইতিমধ্যে, আসামের মুখ্যসচিব এবং আসাম পুলিশের মহানির্দেশক নয়াদিল্লীস্থিত বিএসএফের আইজি অপারেশন, সিআরপিএফের আইজি অপারেশন, ত্রিপুরায় সিআরপিএফের আইজি-কে এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷
রাজ্যে পুণঃ নির্বাচন নিয়ে টানটান উত্তেজনা চলছে৷ কত বুথে পুণঃ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না৷ তবে ধারণা করা হচ্ছে ১৩১টি বুথের অধিক বুথে পুণঃ নির্বাচন হতে পারে৷ অবশ্য রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারীক শ্রীরাম তরণিকান্তি নির্বাচন কমিশনের তরফে এমন কোন খবর তাঁদের কাছে আসেনি বলে জানিয়েছেন তিনি৷
এদিকে, সিপিএম রাজ্য সম্পাদক গৌতম দাশ ১৩১টি বুথে পুণঃ নির্বাচনের বিষয়টি অসত্য বলে দাবি করেছেন৷