নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১২ এপ্রিল ৷৷ আইজিএমে কর্তবরত চিকিৎসককে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় মারধোরকে ঘিরে রাজ্যের চিকিৎসকরা আন্দোলনমুখী হয়েছেন৷ শুক্রবার সন্ধ্যায় তিন শতাধিক চিকিৎসক সিটি সেন্টারের সামনে ধর্ণায় বসেন৷ চিকিৎসকদের এই আন্দোলনকে ঘিরে রাজ্য প্রশাসনে দৌড় ঝাঁপ শুরু হয়৷ চিকিৎসককে মারধোরের ঘটনায় অভিযুক্তদের নিম্ন আদালত জামিন দেওয়ায় রাজ্য সরকার উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়৷ রাতে আদালত খুলে নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের আবেদন নিয়ে শুনানি হয়৷ উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতের রায় খারিজ করে দিয়ে চিকিৎসকে মারধোরের ঘটনায় অভিযুক্তদের জামিনের নিম্ন আদালতের রায়ে স্থগিতাদেশ জারি করেছে৷ রাজ্যের ইতিহাসে এই প্রথম রাতে উচ্চ আদালতে শুনানি হয়েছে৷ এই ঘটনা নজিরবিহীন বলে দাবি করেন আইনমন্ত্রী রতন লাল নাথ৷

বৃহস্পতিবার ভোরে আইজিএম হাসপাতালে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ দীপঙ্কর দেবনাথকে রোগীর মৃত্যুকে ঘিরে প্রচন্ড মারধোর করেছে রোগীর পরিবারের সদস্যরা৷ আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে জিবি হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে ভর্ত্তি করা হয়েছে৷ ডাঃ দেবনাথ এখন অনেকটাই সুস্থ বলে জানা গেছে৷ তাঁকে মারধোরের ঘটনায় পুলিশ ৫জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে তুললে তাদের অন্তবর্তী জামিন মঞ্জুর করে আদালত৷ তাতে রাজ্যের চিকিৎসকরা ভিষন ক্ষুব্ধ হন৷ চিকিৎসককে মারধোর এবং অভিযুক্তদের জামিন পাওয়ার ঘটনায় চিকিৎসকদের সংগঠন আজ থেকে সমস্ত প্রাইভেট প্র্যাক্টিস অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়৷ পাশাপাশি, সরকারি ডিউটির বাইরে কোনও ভলেন্টারি হেল্থ ক্যাম্প, রক্তদান শিবির ও সমাজ সেবামূলক কাজ অনির্দিষ্ট কাল বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়৷ চিকিৎসকদের সংগঠন ডাঃ দীপঙ্কর দেবনাথকে হত্যার চেষ্টায় অভিযুক্তদের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে বিচারের দাবি জানিয়েছে৷ পাশাপাশি, সমস্ত সরকারি হাসপাতালে ৭ দিনের মধ্যে সশস্ত্র পুলিশ পিকেট ও সিসি ক্যামেরা বসানোর পাশাপাশি গত ১ বছরে যত ডাক্তার নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে আসামীকে ৭ দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে৷
এদিন সন্ধ্যায় তিন শতাধিক চিকিৎসক সিটি সেন্টারের সামনে ধর্ণায় বসেন৷ দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যায় তাঁরা সিটি সেন্টারে সামনে ধর্ণায় বসবেন৷ চিকিৎসকের আন্দোলনের জেরে দৌড় ঝাঁপ শুরু হয় রাজ্য প্রশাসনে৷ কারণ, চিকিৎসকের আন্দোলনে স্বাস্থ্য পরিষেবায় বিঘন্ন ঘটতে পারে এমনটাই আশঙ্কা করছে রাজ্য সরকার৷ তাই, চিকিৎসককে মারধোরের ঘটনায় ধৃতদের জামিনের বিরোধীতা করে উচ্চ আদালতে আবেদনের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার৷
আজ রাতে নিজ বাসভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে আইন মন্ত্রী রতন লাল নাথ জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের বিষয়ে রাজ্য সরকার যথেষ্ট আন্তরিক৷ তাই, চিকিৎসককে মারধোরের ঘটনায় অভিযুক্তদের নিম্ন আদালতে জামিনের বিরোধীতায় উচ্চ আদালতে দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য সরকার৷ রাজ্য সরকারের এডভোকেট জেনারেলের বিশেষ অনুরোধে এবং মামলার গুরুত্ব অনুধাবন করে উচ্চ আদালতের মুখ্য বিচারপতি সঞ্জয় কারুল রাত সোয়া ৯টায় শুনানি শুরু করেন৷ আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, উচ্চ আদালতকে সমস্ত বিষয় জানানো হয়েছে৷ চিকিৎসককে মারধোরের ঘটনায় ভারতীয় দন্ডবিধি ৩০৭/৩৩৩/৩৬৪/৪৩৭/৩৪ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে৷ জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হলেও নিম্ন আদালত অভিযুক্তদের জামিন মঞ্জুর করেছে৷ তাতে রাজ্যের চিকিৎসকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ ফলে, রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটতে পারে এমনটাও আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ তাইষ নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করার জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন জানানো হয়৷ জনস্বার্থ বিবেচনা করে এবং মামলার গুরুত্ব বুঝে উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতের রায় খারিজ করে দিয়েছে৷ চিকিৎসককে মারধোরের ঘটনায় অভিযুক্তদের জামিনের উপর উচ্চ আদালত স্থগিতাদেশ জারি করেছে৷ ফলে, জেল হাজতে রেখেই এই মামলায় পরবর্তী প্রক্রিয়া চলবে, জানান আইনমন্ত্রী৷

