
ঢাকা, ৯ এপ্রিল (হি. স.) : বিএনপি চেয়ারপারসন ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে রাজনীতির ময়দান এখন বেশ উত্তপ্ত। যদিও বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, নেত্রীর প্যারোলে মুক্তি চান না তাঁরা। আওয়ামি লিগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি রাজনৈতিক কোনও বিষয় নয়, পুরোপুরি আইনি বিষয়। প্যারোলে মুক্তির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। যদি বিএনপি ও আওয়ামি লিগ কেউ না চায় তাহলে প্যারোলে মুক্তির প্রসঙ্গটি আলোচনায় কেন আসছে? দুই দলেরই অন্দরমহলে জবাব খুঁজতে গিয়ে তিনটি বিষয় জানা গেছে, প্যারোল নিয়ে একটি প্রস্তাব আছে। আলোচনা হয়েছে দু’দলের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার মধ্যে। বিদেশি কূটনীতিকরা এ ব্যাপারে জানেন। কয়েকটি দেশ এই প্রস্তাব এগিয়ে নিতে সহায়তাও করছেন। বিএনপি যতই অস্বীকার করুক আনুষ্ঠানিকভাবে, প্রস্তাবটি এসেছে তাদের কোনও তরফ থেকে। খালেদা জিয়া কিংবা তাঁর ছেলে তারেক রহমানের এ ব্যাপারে সায় আছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। তবে এই উদ্যোগের পেছনে আত্মীয়-স্বজনদের কয়েকজনের নাম শোনা যায়, যাদের সঙ্গে রয়েছেন বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতাও। কেউ অবশ্য চিহ্নিত হতে চাইছেন না। একটি সূত্র বলছে, প্রস্তাবটি নিয়ে রীতিমতো দেন-দরবার হচ্ছে। কারণ এর সঙ্গে বিএনপির সংসদে যাওয়ার প্রশ্নটি যুক্ত হয়ে গেছে।
খালেদা জিয়া গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কারাগারে যাওয়ার পর থেকে আইনি লড়াইয়ের ওপর জোর দেয় বিএনপি নেতৃত্ব। কিন্তু প্রায় তিন ডজন মামলার পাহাড় ডিঙিয়ে এগুনো এবং এরই মধ্যে দুটি মামলায় দশ ও সাত বছরের সাজা হয়ে যাওয়ায় হতাশা গ্রাস করে বিএনপি নেতৃত্বকে। এর মধ্যে খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে বিশেষ কোনও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার দাবি জানায় বিএনপি। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। বরং আবারো খালেদাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানে ভর্তির পর প্যারোল নিয়ে জল্পনা আরও গতি পায়। কারণ হাসপাতালে আসার সময় পুরনো ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা খালেদার ব্যবহৃত সমস্ত জিনিষপত্র হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। এখন পেন্ডুলাম দুলছে দুটি সম্ভাবনার ওপর প্যারোলের উদ্যোগের সাফল্য কিংবা কেরানীগঞ্জে নতুন কারাগারে নিয়ে যাওয়া। লক্ষণীয়, খালেদা জিয়া এ মাসের ১ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তির পর বিএনপির আন্দোলন-তৎপরতা বেড়েছে। তারা ৫ এপ্রিল কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, প্রতিদিনের ব্রিফিংএ আরও আক্রমণাত্মক হয়েছেন এবং গণঅনশন করেছেন খালেদার মুক্তির দাবিতে। গণঅনশনে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি আগের তুলনায় বেশি লক্ষ্য করা গেছে। গতকাল বিএনপি নেতারা পুরনো ২০ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, সম্পর্ক আবার নতুন করে তৈরির চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে গত ৬ এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, খালেদা জিয়া যদি সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে আবেদন করেন আমরা বিষয়টি ভেবে দেখবো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায় বোঝা যায়, বল এখন বিএনপির কোর্টে। আন্দোলনের পথ অব্যাহত রাখবে, নাকি সমঝোতার পথে এগুবে | দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।