
ঢাকা, ১৮ মার্চ (হি. স.) : পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের ভরাডুবির পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে নামছে। এ খবর গোয়েন্দা সূত্রের। বলা হচ্ছে, পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন জইশ ই মোহাম্মদ ভারতের কাশ্মীরে হামলা করে ভারতীয় সেনা ও আধাসেনা বাহিনীর সদস্যদের হতাহতের মাধ্যমে সেখানে অশান্ত ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পর বাংলাদেশের দিকে নজর দিয়েছে আইএসআই। বাংলাদেশে আইএসআই’র সরাসরি নির্দেশে চলে জামায়াতে ইসলামি। জানা গেছে, আইএসআই’র পরামর্শে জামায়াতে ইসলামি যে কোনও পরিস্থিতিতে বিএনপির সঙ্গে জোট টিকিয়ে রেখে ইস্যুভিত্তিক রাজনীতির নামে আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ থাকার বিষয়টি আশ্বস্ত করেছে। গোয়েন্দাদের দাবি, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামি লিগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বিজয় ঠেকাতে না পেরে নানা ইস্যুতে দেশে অস্থিতিশীল ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য ছক কষছে।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ভারতের কাশ্মীরে বারবার জঙ্গি হামলার মূল পরিকল্পনা আইএসআই’র। জঙ্গি সংগঠন সামনে থাকে। পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ কাশ্মিরে জঙ্গি হামলা চালানোর পর সৃষ্ট চরম উত্তেজনার মধ্যে বাংলাদেশে অস্থিতিশীল ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য নাশকতাসহ নানা ধরনের হামলার ছক কষছে বলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। বলা হয়েছে, জামায়াত মিত্র বিএনপিও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থা বিভিন্ন সময়ের নথিপত্রঘেঁটে দেখে যেসব তথ্য পেয়েছে তাতে দেখা যায়, আইএসআই এদেশে জামায়াতকেই তাদের প্রধান মিত্র মনে করে। জামায়াত নেতারাও আইএসআইয়ের পরামর্শ মতো তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন।
গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, “বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের মাধ্যমে আইএসআই অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতির ওপর নগ্ন প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। বিএনপি-জামায়াতের অনেক নেতাকর্মী তাদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। বিষয়গুলো আমাদের নজরদারির মধ্যে রয়েছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।” বিগত নির্বাচনের আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্যের সঙ্গে এক আইএসআই কর্মকর্তার কথোপকথনের অডিও ফাঁসের সূত্র ধরে অনুসন্ধান করেন ঢাকার গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা অনুসন্ধান সূত্রে হাতে পাওয়া একাধিক নথি থেকে জানা যায়, আইএসআই এজেন্টরা জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল পদবির একজন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন সৌদি আরবের জেদ্দায়। জাতীয় নির্বাচনের প্রায় ছয় মাস আগে ওই বৈঠকে জেদ্দা জামায়াতের আমির শহীদ-উল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। সেখানে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও জাতীয় নির্বাচনের কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় জামায়াতের শীর্ষ কোনও কর্মকর্তা আইএসআই’র সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন। এছাড়া দলের আমিরের সঙ্গে আলাপ করে দলের আর্থিক চাহিদার বিষয়ে আবারও বৈঠকে বসার কথা হয়। গোয়েন্দা অনুসন্ধানে প্রাপ্ত নথি থেকে আরও জানা যায়, ওই বৈঠকে জামায়াতের এক কর্মকর্তা বলেছেন, একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ২০১৩ সালে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা অতীতে আইএসআইর আস্থাভাজন ছিলেন। অতীতে তার সঙ্গেই গোয়েন্দা সংস্থাটি যোগাযোগ রক্ষা করত। ওই বৈঠকে জামায়াত নেতারা বাংলাদেশে তাদের লোকজনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ না করতে আইএসআই এজেন্টদের অনুরোধ করেন। ওই কর্মকর্তা আইএসআইকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরাসরি যোগাযোগ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনও পরিস্থিতিতে বিএনপির সঙ্গে জোট টিকিয়ে রাখার ব্যাপাওে বৈঠকে আইএসআইকে আশ্বস্ত করা হয়। এছাড়া নির্বাচনে আসন ভাগাভাগির ব্যাপারে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতা যথারীতি অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।
গোয়েন্দা অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, ওই বৈঠকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামি লিগ সরকারের বিরুদ্ধে জামায়াত নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর, জঙ্গি দমনের নামে জুলুম অত্যাচারের কড়ায়-গন্ডায় প্রতিশোধ নেয়ার অঙ্গীকার করা হয়। ওআইসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে পাকিস্তানের সমর্থনের জন্য আইএসআইয়ের প্রতি অনুরোধ জানান। এছাড়া চিনসহ পাকিস্তানের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো যাতে আওয়ামি লিগ সরকারের ওপর চাপ দেয়, সে ব্যাপারে পাকিস্তানকে ভূমিকা রাখার জন্য বলা হয়।