নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১১ মার্চ ৷৷ যৌতুকের দাবি পূরণ না করায় শ্বশুরবাড়ির মানুষজনের চক্রান্তে মৃত্যুবরণ করেছেন গৃহবধূ। আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় উত্তর ত্রিপুরার কদমতলা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।ঘটনাটি ঘটেছে অসমের সীমান্তবর্তী উত্তর ত্রিপুরার কদমতলায়। বিয়ের এক বছরের মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর করুণ মৃত্যুতে কদমতলা প্রশাসনও নড়েচড়ে বসেছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে নিহত গৃহবধূর স্বামী এবং শ্বশুরকে রবিবার রাত দশটা নাগাদ আটক করে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ সোমবার ধর্মনগর আদালতে তোলা হয়েছিল তাদের। আদালতের নির্দেশে দুজনকে জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।জানা গেছে, অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূ বছর ১৯-র মালতী দাস গত নয়দিন ধরে দক্ষিণ অসমের শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। রবিবার সকালে চিকিৎসারত অবস্থায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এদিনই মৃতদেহ ময়না তদন্তের পর নিহত গৃহবধূর বাপের বাড়ির লোকজনের হাতে সমঝে দিয়েছে ত্রিপুরা পুলিশ।

ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, গত প্রায় এগারো মাস আগে উত্তর ত্রিপুরার অন্তর্গত কদমতলার বাসিন্দা অঞ্জনচন্দ্র দাসের ছেলে দীপন দাসের সঙ্গে একই জেলার দশদা কাঞ্চনপুর এলাকার গৌরীশংকরপুরের অরুণচন্দ্র দাসের কন্যা মালতী দাসের হিন্দু ধর্ম এবং সামাজিক রীতিনীতির বলে বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের দু তিন মাস ভালোয় ভালোয় কাটলেও পাঁচ-ছয় মাস পরে তাঁদের দাম্পত্য জীবনে কলহের সৃষ্টি হয়। যৌতুকের দাবিতে স্বামী দীপন তার স্ত্রীর ওপর মানসিক ও শারীরিক নিপীড়ন শুরু করে। এ-সব ঘটনায় দীপনের পরিবারের লোকেরাও তাকে বাধা দিতেন না বলে অভিযোগ। সমস্যা নিয়ে বার-কয়েক গ্রামীণ সালিশিসভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু সমস্যা নিরসন হয়নি।গ্রামের মানুষ জানান, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন সহ্য করে মুখ বুজে দিন অতিবাহিত করছিলেন গৃহবধূ মালতী। তাঁদের কাছে জানা গেছে, গত ১ মার্চ রাতে ঘরের রান্না নিয়ে ঝগড়ার সৃষ্টি হয় স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে। ওই ঝগড়াকে কেন্দ্র করে মালতীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এর পর একে আত্মহত্যার ঘটনা বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় শ্বশুর বাড়ির লোকেরা।
এদিকে আগুনে মালতীর শরীরের প্রায় সত্তর শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল বলে প্রতিবেশীরা জানান। তাঁদের বক্তব্য, অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূকে লোক দেখানোর জন্য প্রথমে কদমতলা হাসপাতাল ও পরে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভরতি করা হয়। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মালতী যাবতীয় ঘটনা তাঁর বাবার বাড়ির সদস্যদের কাছে খুলে বলেন। ভাই অর্জুনচন্দ্র দাস মালতীর পুরো বয়ান তাঁর মোবাইলে রেকর্ডিং করেন। তিনি এসে কদমতলা থানায় মালতীর বয়ান-সহ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ধারায় মামলা রুজু করেছে কদমতলা থানার পুলিশ।
এদিকে রবিবার রাত প্রায় দশটা নাগাদ মালতীর মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে আসার পথে কদমতলা পুলিশ অভিযুক্ত স্বামী দীপন দাস এবং শ্বশুর অঞ্জনচন্দ্র দাসকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আজ সকালে উভয়ের বিরুদ্ধে ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ধারা প্রয়োগ করে মামলা ভিত্তিতে গ্রেফতার করে ধর্মনগর আদালতে সোপর্দ করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তাদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। এদিকে গৃহবধূ মালতীর ঘাতকদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছে কদমতলার বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা এবং মহিলা সংগঠন।