নিউহারাঙ্গাজাও স্টেশনে অবরোধ, রাজ্যেও দূরপাল্লার রেল পরিষেবা ব্যাহত

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৭ মার্চ৷৷ আগরতলা রেল স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে ত্রিপুরেশ্বরী এক্সপ্রেস৷ ফিরে আসছে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস৷ আসামে রেল অবরোধের কারণেই রাজ্যে দূরপাল্লার রেল পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে৷ ফলে, বিপাকে পরেছেন যাত্রীরা৷

আসামের লোয়ার হাফলং ও সারেঙ্গা ঝাড়ের মধ্যে রেল অবরোধ করে রেখেছে সেখানকার মানুষজন৷ ফলে বেলা দুটোয় ত্রিপুরেশ্বরী এক্সপ্রেস রওনা দেওয়ার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার রাত ৮ টা পর্যন্ত ত্রিপুরেশ্বরী এক্সপ্রেস যাত্রা করেনি৷ আগরতলা স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, আজ রাতে এক্সপ্রেসটি দিল্লির উদ্দেশ্যে রওয়ানা নাও দিতে পারে৷ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস এদিন সকালে রওয়ানা দিলেও অবরোধের কারণে ফিরে আসছে বলে জানা গেছে৷ কারণ, অবরোধ মুক্ত হয়নি রেলপথ৷ রেল বন্ধ থাকার কারণ হিসেবে জানা গেছে যে সব মানুষের রেলের জন্য লোয়ার হাফলং-এ জমি দিয়েছিলেন তাদের টাকা দেওয়া হয়েছে সরকারী দর হিসেবে৷ কিন্তু তারা এখন বাজার দরে টাকা চাইছেন৷ যার জন্য ত্রিপুরা-আসাম রেল রুট বন্ধ করে রেখেছেন৷ ফলে, চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় কাজে যাওয়া অনেকেই এই অবরোধের ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন৷

প্রসঙ্গত, ১৪৪ ধারা অমান্য করে নিউহারাঙ্গাজাও স্টেশনে রেল অবরোধ গড়ে তুলেছে এনসি হিলসইন্ডিজেনাস স্টুডেন্টসফোরাম৷ বৃহস্পতিবারের রেল অবরোধ কর্মসূচি রুখতে গতকাল ডিমা হাসাও জেলার বিভিন্ন রেল স্টেশন চত্বর ও রেলওয়ে ট্র্যাকের আশপাশ এলাকায় ভরতীয় দণ্ডবিধির ১৪৪ ধারা জারি করেছিলেন ডিমা হাসাওয়ের জেলাশাসক তথা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অমিতাভ রাজখোয়া৷

জেলা ম্যাজিস্রেল টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বৃহস্পতিবার বেলা বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে তিন-চারশো আন্দোলনকারী নিউহারাঙ্গাজাও স্টেশনে রেল অবরোধ গড়ে তুলে৷ তবে তার আগে গুয়াহাটি-শিলচর ফাস্ট প্যাসেঞ্জার ট্রেন নিউহারাঙ্গাজাও স্টেশন পার হয়ে গেলেও আর কোনও ট্রেন চলাচল করতে পারেনি৷ ১৪৪ ধারা জারি থাকার পরও জেলা এবং রেল প্রশাসন অবরোধকারীদের হটাতে পারেনি৷

এদিকে রেল অবরোধের ফলে শিয়ালদহ-শিলচর কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ট্রেন নিউহাফলং স্টেশনে আটকে পড়ে৷ অন্যদিকে শিলচর-গুয়াহাটি ফাস্ট প্যাসেঞ্জার ট্রেন এবং আগরতলা-শিলচর কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে যথাক্রমে ডিটেকছড়া ও চন্দ্রনাথপুর স্টেশন থেকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে৷ এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হারাঙ্গাজাও স্টেশনে রেল অবরোধ অব্যাহত রয়েছে৷

আজ সকাল থেকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ম্যাজিস্ট্রেট হেমাঙ্গ নবিশ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রশান্ত দত্ত এবং দক্ষিণ আসাম রেঞ্জের ডিআইজি প্রশান্তকুমার দত্ত নিউহারাঙ্গাজাও স্টেশনে উপস্থিত হয়ে রেল অবরোধকারীদের অবরোধ প্রত্যাহার করে নেওয়ার আহ্বান জানান৷ কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি৷ অবরোধকারীরা তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন৷ তাদের দাবি উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেল যত সময় পর্যন্ত তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা মিটিয়ে দেবে না তত সময় তারা তাদের রেল অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাবে৷

তাদের আন্দোলন সম্পর্কে ইন্ডিজেনাস স্টুডেন্টস ফোরামের সভাপতি ডেভিড কেভম জানান, রেল কর্তৃপক্ষ অনেকবার ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেয়নি৷ প্রতিবারই রেল কর্তৃপক্ষ তাদের ঠকিয়েছে৷ তাই এবার ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়ার বিষয়ে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের জেনারেল ম্যানেজারের কাছ থেকে লিখিত কোনও প্রতিশ্রুতি না পাওয়া পর্যন্ত তারা তাদের রেল অবরোধ প্রত্যাহার করবে না৷

অন্যদিকে ডিমা হাসাও জেলায় ইন্ডিজেনাস স্টুডেন্টস ফোরাম আহূত অনির্দিষ্টকালের রেল অবরোধের ফলে বৃহস্পতিবার পাহাড় লাইনে রেলযাত্রীরা প্রচণ্ড দুভর্োগের মধ্যে পড়েন৷ নিউহাফলং স্টেশনে আটকে পড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসর যাত্রীদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে৷ আজ ভোর থেকে পাহাড় লাইনে ইন্ডিজেনাস স্টুডেন্টস ফোরাম অনির্দিষ্টকালের রেল অবরোধ গড়ে তুলবে বলে অগ্রিম ঘোষণা করার পরও উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেল ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে কয়েক হাজার রেলযাত্রীকে সমস্যার মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে অসংখ্য যাত্রী অভিযোগ তুলেছেন৷

উল্লেখ্য লামডিং-শিলচর ব্রডগেজ প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে নিউহাফলং থেকে নিউহারাঙ্গাজাও পর্যন্ত ৫০টি গ্রামের ৫০০টি পরিবারের কৃষিজমি ও বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল৷ দীর্ঘদিন থেকে এই সব ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীকে ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়ার দাবিতে ইন্ডিজেনাস স্টুডেন্টসফোরাম দাবি জানিয়ে আসছে৷ কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ তাদের এই দাবি নিয়ে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে অভিযোগ৷ তাই বাধ্য হয়ে ছাত্র সংগঠনটি আজ সকাল ৫-টা থেকে পাহাড় লাইনে অনির্দিষ্টকালের জন্য রেল অবরোধের ডাক দেয়৷

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রেল অবরোধকারীদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের আলোচনা চলছে৷ শেষ খবরে জানা গিছে, শিয়ালদহ-শিলচর কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে নিউহাফলং থেকে শিয়ালদহের উদ্দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷