নেসোর ডাকা বন্ধে মাধববাড়ির ঘটনায় পুলিশ টিএসআর, চিকিৎসকের উপর শাস্তির খড়গ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১ মার্চ৷৷ বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকারের আমলে ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত কার্যত জাতে উঠেছে৷ মাধববাড়ির ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তে সরকারী আধিকারীকরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন৷ অথচ, অতীতে কোন ঘটনায় পিঠ বাঁচানোর জন্যই দেওয়া হতো ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত৷ সরকারী আধিকারীকরা এই তদন্তে পার পেয়ে যেতেন৷ ফলে, সাধারণ মানুষের ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তের প্রতি আস্থা ছিল না৷ এই ধরনের তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ণ তুলে অতীতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কিংবা সিবিআই তদন্তের দাবি উঠত৷ সম্ভবত এই প্রথম ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তে সরকারী আধিকারীকদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে৷ মাধববাড়ির ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তে কর্তব্যে অবহেলার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন জিরানীয়ার এসডিপিও৷ চিকিৎসায় অবহেলার জন্য একজন চিকিৎসককেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে৷ পাশাপাশি ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য কয়েকজন টিএসআর জওয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব শুক্রবার বিধানসভায় মাধববাড়ির ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তের রিপোর্ট পেশ করে জানিয়েছেন, জিরানীয়ার এসডিপিও, ডাঃ অভিষেক মজুমদার এবং কয়েকজন টিএসআর জওয়ানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ ফলে, এখন ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তের প্রতি মানুষের আস্থা কায়েম হবে বলে মনে করা হচ্ছে৷

বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিন আইপিএফটি বিধায়ক বৃষকেতু দেববর্মা মাধববাড়ির ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত সম্পর্ক মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন৷ মুখ্যমন্ত্রী তদন্ত রিপোর্ট বিধানসভায় পেশ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন৷ শুক্রবার বাজেট অধিবেশনের অন্তিম দিনে তিনি মাধববাড়ির ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত রিপোর্ট বিধানসভায় পেশ করেন৷

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত ৮ জানুয়ারি কিছু ট্রেড ইউনিয়ন ৪৮ ঘন্টার সারা ভারত ব্যাপী বিভিন্ন ইসু্যুতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল৷ ওই একই সময়ে নেসো নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিক্ষোভের ডাক দেয়৷ রাজ্যে নেসো’র সাথে যুক্ত  তুইপ্রা স্টুডেন্টস ফেডারেশন(টিএসএফ), অন্যান্য ছাত্র সংগঠন ও কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দলও ওইদিন জিরানীয়া মহকুমার মাধববাড়িতে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে সামিল হয়৷ এই বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন থেকে কোনও ধরনের অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন৷

তিনি বলেন,ওইদিন সকাল বেলা প্রথমদিকে ১০০-১৫০ বিক্ষোভকারী মাধববাড়িতে জড়ো হয়৷ পরে তা দ্বিগুণ বেড়ে যায় এবং বিক্ষোভকারীরা বিশৃঙ্খল আচরণ শুরু করে৷ পুলিশ প্রশাসন থেকে তাদের চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও তারা ওই স্থান ছেড়ে চলে যায়নি৷ তদন্ত রিপোর্টে উদ্বৃতি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী স্বীকার করেন, জিরানীয়ার এসডিপিও’র হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুলিশ, প্যারা-মিলিটারি ফোর্স থাকা সত্বেও তাদের সঠিকভাবে তিনি ব্যবহার করেননি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যর্থ হওয়ার পর ওই বিক্ষোভকারীরা পুলিশের উপর ইট-পাটকেল, পাথর, কাঁচের বোতল, মার্বেল, পেট্রোল বোমা ইত্যাদি ছুঁড়তে শুরু করে৷ বিক্ষোভ চলার সময় বিক্ষোভকারীদের একাংশ স্থানীয় দোকানগুলিতে হামলা চালায় এবং দোকানে আগুন লাগিয়ে দেয়৷ তাছাড়াও দোকানঘর থেকে গ্যাস সিলিণ্ডার ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে তাতে আগুন লাগিয়ে দেয়৷ যার ফলে গ্যাস সিলিণ্ডারগুলি বিকট শব্দে ফেটে যায়৷ তাতে, স্থানীয় জনগণের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়৷ তিনি আরো জানান, বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে অপরপ্রান্তেও বহু মানুষ জড়ো হন এবং তাদের একাংশও হিংসাশ্রয়ী কার্যকলাপে যুক্ত ছিল৷ তিনি বলেন, ওই সময় সেখানে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করলে, বিক্ষোভকারীদের বে-আইনি এবং হিংসাশ্রয়ী কার্যকলাপ রুখতে এবং আত্মরক্ষার্থে সেখানে নিয়োজিত পুলিশকর্মীরা গুলি চালান৷

মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, পুলিশি গুলি চালনায় কয়েকজন আহত হলেও কারও জীবনহানি হয়নি৷ এই গুলি চালনার ঘটনায় পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায় পুলিশ বিক্ষুব্ধ জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েই গুলি চালিয়েছিলো এবং গুলি চালনার ফলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে৷ তিনি বলেন, বিনা অনুমতিতে আমজনতার অসুুবিধা সৃষ্টি করে জাতীয় সড়ক সহ কোনও প্রকাশ্য স্থানে কোনও রাজনৈতিক দল, সংস্থা এবং সংগঠনের এই ধরনের হিংসাশ্রয়ী এবং প্ররোচনামূলক কার্যকলাপ মোটেই কাম্য নয়৷ আমজনতার স্বার্থে এই ধরনের বে-আইনি হিংসাশ্রয়ী এবং প্ররোচনামূলক কার্যকলাপ কড়া হাতে মোকাবিলা করা হবে৷

তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, মাধববাড়িতে আন্দোলনকারী জনতা সেদিন সকাল ৮টা থেকেই জড়ো হতে শুরু করেন এবং পুলিশকর্মীরা সেদিন সকাল ৬টা থেকেই সেই এলাকায় নিয়োজিত হয়েছিলো৷ তাছাড়া সকাল পৌনে এগারটা থেকেই ওই অঞ্চলে ১৪৪ ধারা বলবৎ করা হয়েছিলো৷ মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঘটনার সময় জিরানীয়ার এসডিপিও’র নেতৃত্বে যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশ এবং আধা-সামরিক বাহিনী নিযুক্ত থাকা সত্বেও পুলিশ এবং সিআরপিএফ’র মধ্যে প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের অভাবে ঘটনার বিস্তৃতি ঘটে৷ তিনি বলেন, ওই ক্ষেত্রে জিরানীয়ার এসডিপিও’র আরও কার্যকরী ভূমিকার প্রয়োজন ছিলো৷ তাঁর ভূমিকা আশানুরূপ ছিলো না৷ তাই, তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *