রাজ্যকে স্বনির্ভর করতে চাইছি, বাজেটে তারই প্রতিফলন রয়েছে ঃ মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৮ ফেব্রুয়ারি৷৷ ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতিহীন বাজেট৷ রাজ্যের আর্থিক উৎস সীমাবদ্ধ৷ কিন্তু নতুন সরকারের ২টি বাজেটেই ত্রিপুরাকে স্বনির্ভর রাজ্যে পরিণত করার পরিকল্পনার কথা রয়েছে৷ সরকার রাজ্যের আর্থিক অবস্থাকে স্থিতিশীল করতেও পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ আজ বিধানসভার দ্বিতীয় পর্বে ২০১৯-২০ অর্থবছরের আর্থিক ব্যয় বরাদ্দের উপর এবং বিরোধীদের আনা ছাঁটাই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে একথাগুলি বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ উল্লেখ্য, গত ২৫ ফেবয়ারি অর্থদপ্তরের মন্ত্রী তথা উপ-মুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা ২০১৯-২০ অর্থবছরের ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব করেছিলেন৷ আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য ছোট হলেই যে স্ব-নির্ভর হওয়া সম্ভব নয় তা ঠিক না৷ এ বছর রাজ্যের নিজস্ব কর সংগ্রহ প্রায় ২৫৮ শতাংশ হবে৷ যা আগে ছিলো ১০ শতাংশের কম৷ এটা রাজ্যকে স্ব-নির্ভর করার সরকারের প্রয়াসকেই ইঙ্গিত করছে৷ বাজেটে রাজ্যকে স্ব-নির্ভর করার রাস্তা তৈরি হয়েছে৷ শুধুমাত্র দিল্লির দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না৷ নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে৷
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, এই বাজেটে সামাজিক ভাতা প্রকল্পে আগের চাইতে অধিক অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে৷ রাজ্যের কারো সামাজিক ভাতা বন্ধ করা হয়নি৷ যারা সত্যিকারেই ভাতা প্রাপক নয়, তাদেরকে চিহ্ণিত করার জন্যই রাজ্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে৷ এবারের বাজেটে সামাজিক ভাতা ব’দ্ধি করে ১ হাজার টাকা করা হয়েছে৷ পরবর্তীতে ধাপে ধাপে তা আরও ব’দ্ধি করা হবে৷ রাজ্যে সরকারের স্বীক’তি প্রাপ্ত ১১৯ জন সাংবাদিক রয়েছেন৷ এদের মধ্যে যে ৩ জনের বয়স ৬০ বা তার বেশি হয়েছে তাদেরকেই বর্ধিত পেনশন দেওয়া হচ্ছে৷


তিনি বলেন, এফ সি আই-এর মাধ্যমে নূ্যনতম সহায়ক মূল্যে ১০,৪০০ মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছে৷ ধান ক্রয় শুরু করার ফলে রাজ্যে ধানের বাজার দর বেড়েছে৷ আগামীতে রাজ্য থেকে আরও ধান কেনার প্রস্তাব রয়েছে৷ রাজ্যের ১৪,৩০০ জন স্নাতক ছাত্র-ছাত্রীদের মার্ট ফোন দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে এই বাজেটে৷ যার জন্য ৫ কোটি টাকারও সংস্থান রাখা রয়েছে৷ দ্বিতীয় পর্যায়ের জাইকা ও অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের গ্রাম-পাহাড়ে অনেকগুলি চেক ড্যাম তৈরি করা হবে৷ তার ফলে রাজ্যের জলসেচ, পানীয় জল সরবরাহ করা যেমন সম্ভব হবে ঠিক তেমনি মৎস্যচাষ, পোল্টি মোরগ, হাঁস পালন বৃদ্ধি পাবে৷ তাছাড়া রুদ্রসাগর পাড়ের অধিবাসীদের মধ্যে হাঁস পালনকে উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে ২ হাজার হাঁস প্রদান করা হবে৷ প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের ক’ষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ইতিমধ্যেই প্রায় ১৩ কোটি টাকা পৌঁছে গেছে৷ ধলাই ও ঊনকোটি জেলার জনজাতিরা বেশিরভাগই আদা, হলুদ, গোলমরিচ ইত্যাদির মিশ্র চাষ করেন৷


জনজাতিরা যাতে এসব ফসল উচিত মূল্যে বিক্রি করে লাভবান হতে পারেন সেই লক্ষ্যে নতুন সরকার কাজ করছে৷ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রাণী সম্পদ বিকাশ, খাদ্য দপ্তরগুলি সাধারণ মানুষের সাথে সরাসরি জড়িত৷ সেগুলির জন্য বিশেষ পরিকল্পনা করে এই বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে৷ তিনি আরও বলেন, এম এল এ ফাণ্ডকে ৩৫ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ লক্ষ টাকা করা হবে৷ তাছাড়া এই ফাণ্ডের টাকা খরচের পদ্ধতিকে সরলীকরণ করার জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে আজ বিধানসভায় জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সকলকে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে৷ এক্ষেত্রে বিরোধীদের ভূমিকাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ৷
২০১৯-২০ অর্থবছরের ব্যয় বরাদ্দের আলোচনায় অংশ নিয়ে উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা বলেন, বাজেট শুধু অঙ্কের খেলা নয়৷ তাতে সরকারের মূল্যবোধ ও মানুষের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন থাকতে হবে৷ এই বাজেট প্রস্তাবে তা আছে৷ তিনি বলেন, জনজাতিদের উন্নয়নের জন্য তাদেরকে অবশ্যই শিক্ষিত করতে হবে৷ জনজাতিদেরকে উন্নয়ন প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে রাজ্যের উন্নয়ন সম্ভব নয়৷ এরজন্য নতুন সরকার সুুনির্দিষ্ট বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে৷ তিনি আরও বলেন, এই বাজেট উন্নয়নমুখী, বিকাশমুখী এবং তপশিলী জাতি, উপজাতি, সংখ্যালঘু সহ রাজ্যের সকল সাধারণ মানুষের বাজেট৷ ত্রিস্তর প’ায়েতী ব্যবস্থায় যে পরিমাণ টাকা অব্যয়িত রয়েছে, তা যাতে মানুষের উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা যায় তারজন্য বিরোধীদের প্রতি সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান করেন তিনি৷ আলোচনায় অংশ নিয়ে রাজস্বমন্ত্রী নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মা বলেন, এই বাজেট রাজ্যে সবকা সাথ, সবকা সমান বিকাশের দিশা দেখিয়েছে৷


২০১৯-২০ অর্থবছরের ব্যয় বরাদ্দের উপর আলোচনা করেন বিধায়ক ব’ষকেতু দেববর্মা, বিধায়ক রামপ্রসাদ পাল, বিধায়ক ভগবান দাস, বিধায়ক সুুশান্ত চৌধুরী৷ এছাড়াও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিধায়ক তপন চক্রবর্তী ও সুুধন দাস৷ আজ বিধানসভায় ২০১৯-২০ অর্থবছরের আর্থিক ব্যয় বরাদ্দ এবং ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শেষ হয়েছে৷ ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন বিধায়ক রতন ভৌমিক, বিধায়ক মহ, মবস্বর আলি, বিধায়ক নির্মল বিশ্বাস ও বিধায়ক নারায়ণ চৌধুরী৷ ছাঁটাই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এবং শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ৷ পরে বিরোধীদের আনা ছাঁটাই প্রস্তাবগুলি ধনি ভোটে বাতিল হয়৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *