নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৬ ফেব্রুয়ারী৷৷ দুই হেক্টরের কম জমি রয়েছে এমন চাষীদের বছরে ছয় হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হবে রাজ্যেও৷ তাতে, পাট্টা প্রাপকদেরও যুক্ত করেছে রাজ্য সরকার৷ ফলে, পাট্টা প্রাপকদের মধ্যে যাদের দুই হেক্টর বা তার কম জমি রয়েছে এমন কৃষকরাও এই সুযোগ নিতে পারবেন৷ শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনে একথা জানিয়েছেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়৷ তাঁর দাবি, রাজ্য সরকারের আবেদনে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক সম্মতি দিয়েছে৷ তাই, অন্যান্য কৃষকদের পাশাপাশি পাট্টা প্রাপকরাও বছরে ছয় হাজার টাকা করে সহায়তা পাবেন৷
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সন্মাননিধি প্রকল্প রাজ্যেও চালু করা হচ্ছে৷ এ প্রকল্পের সুুযোগ গ্রহণের জন্য আগামী ১৮ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে ফরম পূরণ করতে হবে৷ প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য দিয়ে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী জানিয়েছেন, এই প্রকল্পে সর্বোচ্চ ২ হেক্টর জমির মালিকানা সম্পন্ন কৃষকগণ বছরে তিন কিস্তিতে মোট ৬০০০ টাকা আর্থিক সাহায্য পাবেন৷ এই প্রকল্পটি ১ ডিসেম্বর, ২০১৮ থেকে শুরু হয়েছে এবং ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের প্রথম কিস্তির সময়কাল হচ্ছে ১ ডিসেম্বর, ২০১৮ থেকে ৩১ মার্চ, ২০১৯ অর্থাৎ আগামী ১ এপ্রিল থেকে তারা প্রদত্ত টাকা পাবেন৷ বছরে প্রতি চারমাস অন্তর অন্তর কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি সহায়তা প্রদান করা হবে৷
কৃষিমন্ত্রীর কথায়, সারা দেশে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার প্রয়াস নিয়েছেন৷ এ প্রকল্পে বছরে কৃষকদের জন্য ৭৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে৷ আমরাও তাঁর পথ অনুসরণ করে চলেছি৷
কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য, গত ৯ ফেব্রুয়ারী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজ্য সফরে এসে এই প্রকল্পের কথা ব্যক্ত করেন৷ এ প্রকল্পে রাজ্যের প্রায় ৫ লক্ষ ৩১ হাজার কৃষক পরিবার সরসরি পাবেন পাট্টা প্রাপকরাও উপকৃত হবেন৷ কৃষি দপ্তরও এই প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য রাজ্যের সকল কৃষকের কাছে পৌঁছে দেবার উদ্যোগ নিয়েছে৷ কৃষিমন্ত্রী শ্রীসিংহ রায় জানান, নির্ধারিত ফরম পূরণের জন্য প্রত্যেক আবেদনকারীকে আধার কার্ড, রেশন কার্ড, ব্যাঙ্কের পাশবই এবং জমির মালিকানার আসল(অরিজিনাল) কপি সঙ্গে আনতে হবে৷ প্রয়োজনীয় ভেরিফিকেশনের পর আসল(অরিজিনাল) কপি সাথে সাথেই আবেদনকারীকে ফেরৎ দেওয়া হবে৷ তবে জমির মালিকানার(ল্যাণ্ড রেকর্ডস) জেরক্স কপি আবেদনপত্রের সাথে জুড়ে দিতে হবে৷ এছাড়া পত্রিকায় প্রকাশিত ফরম ব্যবহার করেও আবেদন করা যেতে পারে৷
তিনি আরো জানান, প্রাতিষ্ঠানিক জমির মালিক, সাংবিধানিক বিভিন্ন পদে আসীন বর্তমান ও প্রাক্তন পদাধিকারীগণ, যেমন লোকসভা, রাজ্যসভা, বিধানসভার সদস্যগণ, পুর নিগমের মেয়র, জেলা পঞ্চায়েতের চেয়ারপার্সনগণ, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, অধিগৃহিত সংস্থা ও স্বায়ত্বশাসিত সংস্থার আধিকারিক ও কর্মচারীগণ, অবসরপ্রাপ্ত কর্মী যাদের মাসিক পেনশন ১০ হাজার টাকার বেশি, গত আর্থিক বছরে আয়কর প্রদান করেছেন এমন ব্যক্তিগণ, চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রযুক্তিবিদ, বাস্তুকার, প্রকৌশলী, চাটার্ড একাউনটেন্ট, স্থপতিকার প্রভৃতি পেশার সাথে যুক্ত ব্যক্তিগণ এই প্রকল্পে সুুবিধাভোগী হিসাবে বিবেচিত হবেন না৷ এই প্রকল্পে প্রদেয় সহায়তা পাবার জন্য কৃষকদের নিজ নিজ গ্রাম পঞ্চায়েত, ভিলেজ কমিটি অফিস, শহুরে স্থানীয় সংস্থার ওয়ার্ড অফিসে বর্ণিত ফরমে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে হবে৷ এ প্রকল্পে ধান, গম, ফুল, সব্জি, ফল, রাবার চাষীরা সহায়তা পাবেন৷ সাথে যোগ করেন, মৎস্যচাষীরা এই প্রকল্পের সুুযোগ পাবেন না৷
এদিন তিনি জানিয়েছেন, পাট্টা প্রাপকরাও এই সুযোগ নিতে পারবেন৷ তবে, আর্থিক সহায়তা নেওয়ার ক্ষেত্রে একই শর্ত তাঁদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে৷ এবিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্ণের উত্তরে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব এম এল দে জানান, সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ১ লক্ষ ৩১ হাজার পাট্টা প্রাপকদের এ প্রকল্পে যুক্ত করার জন্য কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিংহের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন৷ কেন্দ্রীয় সরকারের হাইপাওয়ার কমিটির মিটিং-এ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়৷ গত ১৪ ফেব্রুয়ারী কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারকে এ বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছে৷ এদিকে, জমিহীন প্রায় দেড় লক্ষ কৃষক এই প্রকল্পের আওতায় আসছেন বলে জানিয়েছেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়৷