নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১১ জানুয়ারী৷৷ মাধববাড়ীর ঘটনায় দল ও সরকার বাঁচাতে দ্বিমুখী নীতি সংকট বাড়াচ্ছে আইপিএফটির৷ শনিবার এডিসি এলাকা বন্ধের বিরুদ্ধে সুর চরানোর পাশাপাশি রাজ্য সরকারের উপর চাপ বাড়ানোর সুযোগও হাতছাড়া করতে চাইছে না জোটের শরিক দল৷ মাধববাড়ীতে গুলিবিদ্ধ ছয় যুববককে দশ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ও সরকারী চাকুরী দেওয়ার পাশাপাশি যারা গুলি চালিয়েছে তাদের উপযুক্ত শাস্তির দাবী জানিয়েছে আইপিএফটি৷ শুধু তাই নয়, উচ্চ পর্যায়ের বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবীতে অবস্থান বদল করেনি দল৷ শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে এই দাবী জানান আইপিএফটি সহ সাধারণ সম্পাদক মঙ্গল দেববর্মা৷ সাথে তিনি সমস্ত প্রক্রিয়া একমাসের মধ্যে সমাপ্ত করার জন্য রাজ্য সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছেন৷ তাতে স্পষ্ট মাধববাড়ীর ঘটনায় উপজাতি ভাবাবেগে কোন রকম নেতিবাচর প্রভাব যাতে না পড়ে সে বিষয়ে সুবিধাবাদী অবস্থান নেওয়াই শ্রেয় বলে মনে করছে আইপিএফটি৷

শুক্রবার আইপিএফটির এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ বৈঠক শেষে দলের সহকারী সাধারণ সম্পাদক মঙ্গল দেববর্মা এবং অনন্ত দেববর্মা সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, মাধববাড়ীতে গুলিবিদ্ধ যুবকদের পরিবারকে এককালীন দশ লক্ষ টাকা দিতে হবে৷ সেই সাথে প্রত্যেকের পরিবারের একজনকে সরকারী চাকুরী দিতে হবে৷ ওইদিনের ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবী করেছে আইপিএফটি৷ যদিও বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আইপিএফটির সভাপতি তথা রাজস্ব মন্ত্রী এন সি দেববর্মাকে পাশে বসিয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন মাথববাড়ীর ঘটনার ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত করা হবে৷ ওইদিনই আইপিএফটির সাধারণ সম্পাদক তথা বনমন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবী করেছিলেন৷ কিন্তু, শুক্রবার দলের বৈঠকের পর আইপিএফটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মঙ্গল দেববর্মা জানিয়েছেন তাদের দল মাধববাড়ীর ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবী করছে৷ স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ণ উঠছে সরকার যেখানে ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে, সেখানে সরকারে থেকেই আইপিএফটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবী কেন করল৷ এই প্রেক্ষিতে মঙ্গল দেববর্মার বক্তব্য হচ্ছে, সরকার এবং দল আলাদা৷ সরকার ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে, কিন্তু আইপিএফটি দল বিচারী বিভাগীয় তদন্তের দাবী জানাচ্ছে৷ মঙ্গল দেববর্মার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, সরকারের উপর আইপিএফটি চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে৷
উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে উদ্বাস্তুদের ডাম্পিং স্টেশন করতে কোমর কষে নেমেছে বিজেপি সরকার৷ বিজেপির এ ধরনের হঠকারী কর্মকাণ্ডকে সর্বতোভাবে প্রতিরোধ করতে হবে৷ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে জরুরি অবস্থার সৃষ্টি করেছে বিজেপি সরকার৷ বলেছেন উত্তরপূর্বের ছাত্র সংগঠনগুলোর যৌথমঞ্চ নর্থ ইস্ট স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন সংক্ষেপে নেসো-র উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য৷ গত ৮ জানুয়ারি নেসো আহুত ১১ ঘণ্টার বন্ধকে কেন্দ্র করে জিরানীয়ার মাধববাড়ি বাস টার্মিনাল এলাকায় সংঘটিত ঘটনায় আহত আইপিএফটি তিপ্রাহা -র ছয় সদস্যকে দেখতে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যারাতের দিকে গুয়াহাটি থেকে নেসো-র উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য-সহ তিন সদস্যের দল এসেছেন ত্রিপুরায়৷ রাজ্যে এসে আজ শুক্রবার তাঁরা জিরানীয়া মাধববাড়ি এবং পশ্চিম জেলার সিধাই মহকুমার হেজামারা এলাকায় যেতে চাইলে নেসো-র প্রতিনিধি দলকে বাধা দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেয় সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ৷ এরপর আগরতলায় এসে সমুজ্জ্বল প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেন৷
প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে সমুজ্জ্বল জানতে চান, সেদিন মাধববাড়িতে এমন কী ঘটনা ঘটেছিল যে পুলিশকে গুলি চালাতে হয়েছিল? তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালিয়ে বিজেপি সরকার জরুরি অবস্থার সৃষ্টি করেছে৷ এই পরিস্থিতি কেবল ত্রিপুরায় নয়, গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জরুরি অবস্থাদৃশ্য পরিস্থিতি কায়েম করেছে বিজেপি সরকার৷ সর্বত্র দমন পীড়ন চঞ্ছেলছ৷ একনায়কতন্ত্র চলছে৷ এই অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না৷ ভবিষ্যতে যাতে গণতান্ত্রিক আন্দোলন কারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া না হয় সে ব্যাপারে ত্রিপুরার বিজেপি সরকারকে সর্তক করে দিয়েছেন সমুজ্জ্বল৷ মাধববাড়িতে সেদিন যে ঘটনা বিজেপি সরকারের পুলিশ সংঘটিত করছে, সে বার্তা গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে জানান নেসো উপদেষ্টা৷
তিনি বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে কথা বলার মৌলিক অধিকার সকলের আছে৷ এই বিলের মাধ্যমে অবৈধ হিন্দু বাংলাদেশীদের বোঝা উত্তর-পূর্বের ঘাড়ে চাপাতে চাইছে কেন্দ্রের বিজেপি জোট এনডিএ সরকার৷ জবরদস্তি মানুষের উপর বিদেশিদের চাপিয়ে দিলেই হবে না৷ এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে সতর্কঠ করে দিয়েছেন সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য৷ আজ তাদের রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে যাওয়ার কথা ছিল৷ কোথাও যেতে দেয়নি পুলিশ৷ এমনকি মঙ্গলবার পুলিশের গুলিতে আহতদের দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন, কিন্তু সর্বত্র তাদের বাধা দেওয়া হয়েছে৷ সরকার হয়তো ভুলে গেছে, আজ যারা এখান এসেছেন তারা এদেশেরই নাগরিক৷ সর্বত্র তাঁদের যাওয়ার অধিকার আছে৷ এতে করে সরকার নাগরিকদের অধিকার খর্ব করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন নেসো উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য৷
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল এর বিরুদ্ধে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যৌথ ছাত্র সংগঠন উত্তরপূর্ব সউটডেন্টস অর্গানাইজেশন (নেসো) আহুত গত ৮ জানুয়ারি ভোর পাঁচটা থেকে বন্ধকে কেন্দ্র করে আগরতলার পার্শ্ববর্তী জিরানীয়ার পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে উঠেছিল৷ জিরানীয়ার মাধববাড়ি বাস টার্মিত্রনাল এলাকায় অবরোধ গড়েছিল আইপিএফটি-তিপ্রাহা এবং উপজাতি ছাত্র সংগঠন তুপ্রা ছাত্র ফেডারেশন৷ অবরোধ চলাকালীন আচমকা লাগোয়া দোকানপাটে অগ্ণিসংযোগ করে দেয় ছাত্র সংগঠনের কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল যুবক৷ আগুনে ১৪টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়৷ এঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও বন্ধ সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে৷ সংঘর্ষে উত্তেজনা ছড়ালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ প্রথমে লাঠি চার্জ এবং পরে কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে৷ এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রিত না হওয়ায় পুলিশ শূন্যে গুলি ছোঁড়ে৷ পুলিশের লাঠির ঘায়ে ছয় জন পিকেটার্স আাহত হয়েছিলেন৷ আহতের মধ্যে দুজনকে জিবি হাসপাতালে স্তানান্তর করা হয়৷ তাদের সকলের চিকিৎসা চলছে এখানে৷
গোটা এলাকায় ১৪৪ ধারা বলবৎ করা হয়েছে৷ টহল দিচ্ছে আধাসেনা বাহিনীর জওয়ান৷ ঘটনার জের যাতে অন্যত্র না ছড়ায় তাই সমগ্র রাজ্যে প্রথমে ৪৮ ঘণ্টা এবং গতকাল রাত থেকে ফের আরও ৪৮ ঘণ্টা ইন্টারন্যাট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন৷