নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৫ জানুয়ারী৷৷ রাজ্যের আর্থিক দাবিদাওয়া অর্থ কমিশনের কাছে সঠিকভাবে পেশ করতে পারেনি পূর্বতন সরকার৷ তাই, পূর্বোত্তর অন্য রাজ্যগুলি অধিক অর্থ আদায় করতে সক্ষম হলেও, ত্রিপুরার ভাগ্যে জুটেছে সামান্যই৷ রাজ্যের আর্থিক অবস্থা নিয়ে এইভাবেই আক্ষেপ করেন অর্থমন্ত্রী তথা উপ-মুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা৷
রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে বর্ণনা দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রীকে ভিষণ অসহায় মনে হয়েছে৷ কারণ, রাজ্য বাজেটের বরাদ্দকৃত তহবিলের ৭৩১৬ শতাংশই খরচ হচ্ছে বেতন, পেনশন ও মজুরী খাতে৷ ফলে বাকি তহবিল দিয়ে রাজ্যের উন্নয়ন কতটা সম্ভব তা নিয়েই চিন্তিত অর্থমন্ত্রী৷ অবশ্য এই পরিস্থিতির জন্য পূর্বতন সরকারই দায়ী তথ্য সহকারে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি৷ অর্থমন্ত্রীর কথায়, অতীতে অর্থ কমিশনের কাছে রাজ্যের আর্থিক দাবী সঠিকভাবে পেশ করতে ব্যর্থ হয়েছে পূর্বতন সরকার৷ রাজ্যের প্রয়োজনীয়তা অর্থ কমিশনকে সঠিকভাবে না জানানোর ফলে তারা রাজ্যের দাবীদাওয়া নিয়ে আশ্বস্থ হতে পারেননি৷ ফলে, চাহিদা ও প্রয়োজনের সাথে ফারাক রেখেই রাজ্যের জন্য এতদিন অর্থ মঞ্জুর করে আসছে অর্থ কমিশন৷

অর্থমন্ত্রীর দাবী পূর্বোত্তরের অন্যান্য রাজ্যগুলি ত্রিপুরার তুলনায় অনেক বেশী অর্থ আদায় করতে সক্ষম হয়েছে অর্থ কমিশনের কাছ থেকে৷ কারণ তারা রাজ্যের আর্থিক দাবীদাওয়া সঠিকভাবে অর্থ কমিশনের কাছে উপস্থাপন করেছে৷ অর্থমন্ত্রীর কথায়, ১৪তম অর্থ কমিশন পূর্বোত্তরের অন্য রাজ্যের তুলনায় ত্রিপুরাকে অর্থ কম মঞ্জুর করেছে৷ ১৪তম অর্থ কমিশন কেন্দ্রীয় করের সুপারিশ অনুযায়ী ত্রিপুরাকে মাত্র ২৬ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করেছে৷ সেই তুলনায় নাগাল্যান্ডকে ৫৯ শতাংশ, মিজোরামকে ৭১ শতাংশ, মেঘালয়কে ৫৭ শতাংশ এবং অরুণাচলপ্রদেশের জন্য ৩১৮ শতাংশ অর্থ মঞ্জুর করেছে কমিশন৷ অথচ, বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন রাজ্য হিসেবে পূর্বোত্তরের রাজ্যগুলি একই অনুপাতে কেন্দ্রীয় করের অংশ পাওয়া উচিত ছিল৷
অর্থমন্ত্রীর কথায়, চতুর্দশ অর্থ কমিশন ত্রিপুরাকে ১৭৭৯৭৭১ কোটি টাকা কম দিয়েছে৷ এর জন্য পূর্বতন সরকার সম্পূর্ণরূপে দায়ী৷ অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য, ত্রিপুরায় দুই তৃতীয়াংশ এলাকা বনাঞ্চল৷ পাশাপাশি, ত্রিপুরার তিন দিকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত৷ ফলে, অর্থ মঞ্জুরের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলি গুরুত্ব পাওয়া স্বাভাবিক ছিল৷ কিন্তু, অর্থ কমিশনের কাছে এই বিষয়গুলি তুলে ধরে রাজ্যের জন্য বাড়তি অর্থ মঞ্জুরের তেমন কোন উপস্থাপনা ছিল না পূর্বতন সরকারের৷
অর্থমন্ত্রীর দাবি, গত তিনটি অর্থ বছরে কেন্দ্রীয় করের শেয়র বাবাদ ১৪৯৫২৮ কোটি টাকা কম পেয়েছে রাজ্য৷ যার হিসেব করলে দাঁড়ায় ১১৫ শতাংশ৷ এই প্রবণতা ২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে জারি থাকবে৷ তাতে ৭০০ কোটি টাকা রাজ্য কম পাবে বলে তিনি ধারণা করছেন৷
এই পরিস্থিতিতে আগামী ১৬ জানুয়ারী অর্থ কমিশনের রাজ্য সফরে রাজ্যের প্রয়োজনীয় অর্থ মঞ্জুর করার বিষয়টি সুনিশ্চিত করার সবরকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী৷

