নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৫ জানুয়ারী৷৷ রাজ্যে বিরোধী সিপিএম কিংবা কংগ্রেস যখন শীতঘুমে আচ্ছন্ন তখন লোকসভা ভোটের বাদ্যি বাজিয়ে দিলেন বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ৷ নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বেই দেশে মজবুত সরকার গঠন সম্ভব, এই দাবিতে এখন থেকেই পৃষ্ঠা প্রমুখ ও দলীয় কর্মীদের লোকসভা নির্বাচনের গণনা পর্যন্ত কোমড় বেঁধে ময়দানে ঝাপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিলেন তিনি৷ সাথে তিনি পৃষ্ঠা প্রমুখদের মনোবল বাড়িয়েছেন৷ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির জয়ের সমস্ত কৃতিত্ব তিনি পৃষ্ঠা প্রমুখদেরই দিয়েছেন৷ মূলত, এদিন তিনি কেন্দ্রে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার সংকল্প নেওয়ার ডাক দিয়েছেন৷

শনিবার পৃষ্ঠা প্রমুখ সম্মেলনকে ঘিরে বিরাট আয়োজন করেছে প্রদেশ বিজেপি৷ রাজ্যের ৬০টি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে পৃষ্ঠা প্রমুখরা এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন বলে দাবি প্রদেশ বিজেপি’র৷ এই সম্মেলন উপলক্ষ্যে রাজ্যে আসেন বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ৷ এদিন সকালে রাজ্যে এসেই তিনি সোজা চলে যান উদয়পুরে ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে৷ সেখানে পূজা দিয়ে আগরতলায় জনসভায় অংশ নেন৷
পৃষ্ঠা প্রমুখ সম্মেলন উপলক্ষ্যে আয়োজিত জনসভায় অমিত শাহ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিজেপি সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব, সংগঠন মহামন্ত্রী অজয় জাম্বুয়াল, দলের প্রভারী সুনীল দেওধর, নেডার কনভেনার তথা অসমের মন্ত্রী ড হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এবং মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি প্রদেশ সভাপতি বিপ্লব কুমার দেব, উপ-মুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা সহ দলের সমস্ত মন্ত্রি, বিধায়ক ও শীর্ষ নেতৃবৃন্দ৷
জনসভায় বক্তব্য রাখতে বিজেপি কোর কমিটির সদস্য তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মণ পৃষ্ঠা প্রমুখ এবং দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সিপিএমকে মানুষ একঘরে করে দিয়েছেন৷ ফলে, তাঁদেরকে মারধর করার কোন প্রয়োজন নেই৷ মানুষই তাঁদের শিক্ষা দিয়েছেন৷ তাঁর কথায়, নতুন সরকার রাজ্যবাসীর আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে৷ জনকল্যানে গৃহিত পদক্ষেপই বিজেপির প্রতি মানুষের নির্ভরশীলতা বাড়িয়েছে৷ কারণ, মানুষকে ঠকানো বিজেপি জোট সরকারের লক্ষ্য নয়৷
এদিন উপ-মুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা রাজ্যে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর গৃহীত পদক্ষেপগুলি সভায় তুলে ধরেন৷ তাঁর কথায়, অল্প সময়ের মধ্যেই মানুষের আকাঙ্খা পূরণে এগিয়ে চলেছে রাজ্য সরকার৷ পূর্বতন সরকার অনেক বোঁঝা রেখে গেলেও রাজ্যের উন্নয়নে তার কোন প্রভাব পড়বে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি৷
এদিকে, বিজেপি সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব এদিন মহাজোটকে সমালোচনায় বিদ্ধ করেছেন৷ তাঁর কথায়, বিজেপির বিরুদ্ধে আগামী লোকসভা নির্বাচনে মহাজোট গঠন করার প্রক্রিয়া চলছে৷ কিন্তু ইঞ্জিন ছাড়া মহাজোটের গাড়ি চলবে কিভাবে সেই প্রশ্ণ তুলে রাম মাধব কংগ্রেস একটি ডুবন্ত তরী বলে কটাক্ষ করেছেন৷ রাম মাধব থেকে এককদম এগিয়ে নেডার কনভেনার তথা অসমের মন্ত্রী ড হিমন্ত বিশ্ব শর্মা দাবি করেন, দেশে আরো ২০ বছর শাসন করবে বিজেপি৷ কারণ, বিজেপির উপর দেশবাসীর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে৷ তাঁর কথায়, পূর্বোত্তর এখন কংগ্রেস মুক্ত হয়েছে৷ লোকসভা নির্বাচনেও ত্রিপুরায় দুটি আসনে বিজেপিই জয়ী হবে৷
বিজেপি রাজ্য প্রভারী সুনীল দেওধর এদিন দাবি করেন, রাজ্যে বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকার গঠন হওয়ার পর আইনের শাসন কায়েম হয়েছে৷ ভয়মুক্ত পরিবেশে এখন রাজ্যবাসী শ্বাস নিতে পারছেন৷ তাঁর কথায়, লোকসভা নির্বাচনেও এর প্রতিফলন দেখা যাবে৷ কারণ, দুটি আসনেই বিজেপি জয়ী হবে৷
আজ সম্মেলনে পৃষ্ঠা প্রমুখদের শপথবাক্য পাঠ করান বিজেপি প্রদেশ সভাপতি তথা মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তিনি এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, সরকারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েই জনকল্যানে একের পর এক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে৷ কারণ, নতুন সরকার রাজ্যের উন্নয়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ৷ তাঁর দাবি, তিন বছরেই ত্রিপুরাকে মডেল রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলা হবে৷
আজ জনসভায় সকলের নজর ছিল অমিত শাহ’র দিকে৷ বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতিও সেই মতো পৃষ্ঠা প্রমুখদের নিরাশ করেননি৷ বিধানসভা নির্বাচনের বিজেপির জয়ের সমস্ত কৃতিত্ব অমিত শাহ পৃষ্ঠা প্রমুখদের দিয়েছেন৷ তাঁর কথায়, রাজ্যে পরিবর্তনে পৃষ্ঠা প্রমুখদের সবচেয়ে বড় ভূমিকা রয়েছে৷ তাই, বিজেপির জয়ে সমস্ত কৃতিত্ব পৃষ্ঠা প্রমুখদেরই৷ তাতে বোঝা গিয়েছে, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের লক্ষ্যে পৃষ্ঠা প্রমুখদের মনোবল বাড়ানো খুবই জরুরী তা বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি উপলব্ধি করেছেন৷ সাথে তিনি নতুন দায়িত্বও পৃষ্ঠা প্রমুখদের কাঁধে তুলে দিয়েছেন৷ অবশ্য একই দায়িত্ব তিনি দলীয় কর্মীদেরও কাঁধে তুলে নিতে বলেছেন৷
অমিত শাহ’র নির্দেশ, এখন থেকে লোকসভা নির্বাচনের গণনা পর্যন্ত রাজ্যের প্রতিটি মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলুন৷ বিজেপিকে আরো বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী করার সংকল্প নিয়ে কোমড় বেঁধে মাঠে নেমে পড়ুন৷ তিনি সাফ বুঝিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্রে ক্ষমতার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতেই হবে৷
অবশ্য, প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার নানা যুক্তিও এদিন অমিত শাহ তুলে ধরেছেন৷ তাঁর কথায়, কম্যুনিষ্ট গোটা বিশ্বে সমাপ্ত হয়ে গিয়েছে৷ কংগ্রেসের অস্তিত্ব দেশে সমাপ্তির পথে৷ এরই রেশ ধরে মহাজোটও এদিন অমিতের নিশানায় ছিল৷ তাঁর কটাক্ষ, মহাজোটের অন্যতম দাবিদার মায়াবতি চাইছেন কেন্দ্রের ক্ষমতায় অধিষ্টিত হউক একটি অসহায় সরকার৷ তাঁরা শক্তিশালী সরকার চাইছেন না৷ তবে, মহাজোটের পক্ষে শক্তিশালী সরকার গঠন করাও সম্ভব নয়, বিদ্রুপের সুরে বলেন অমিত শাহ৷ তাঁর দাবি, একমাত্র নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বেই কেন্দ্রে শক্তিশালি সরকার গঠন সম্ভব৷ অমিত শাহ এদিন মহাজোট সম্পর্কে সকলকে সতর্ক করেছেন৷ তাঁর দাবি, মহাজোটের নীতি কিংবা নেতা কোনটাই এখনো ঠিক হয়নি৷ তাই, তিনি দেশে শক্তিশালি সরকার গঠনের লক্ষ্যে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপির প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন৷