সিপিএম ও কংগ্রেসের সন্ত্রাসের অভিযোগ উড়িয়ে দিলো বিজেপি, পুর ও নগর উপ ভোটও কলঙ্কিত, নির্বাচন বয়কট করল সিপিএম, কংগ্রেসের দাবি পুনঃভোট

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৭ ডিসেম্বর৷৷ কলঙ্ক নিয়েই পুর ও নগর সংস্থার উপনির্বাচন সাঙ্গ হল৷ ভোটের হার ৮১.৩৬ শতাংশ৷ বিরোধী দল

বৃহস্পতিবার পুর ও নগর সংস্থার উপনির্বাচনে পুর নিগম এলাকায় একটি ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন৷ ছবি- নিজস্ব৷

সিপিএম সন্ত্রাসের অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে৷ কংগ্রেস বেশ কয়েকটি আসনে পুনঃভোটের দাবি জানিয়েছে৷ তবে, শাসক দল বিজেপি বিরোধীদের সমস্ত অভিযোগ ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে৷

বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হলো রাজ্যের মোট পুর ও নগর সংস্থার ৬৭টি আসনের উপনির্বাচন৷ ১৫৮টি শূণ্য আসনের ৯১টি আসনে আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে বিজেপি৷ যে কটি আসনে নির্বাচন হয়েছে তাতেও এদিন ছাপ্পা ভোট সহ প্রার্থীদের উপর আক্রমণ, পোলিং এজেন্টদের বুথ থেকে বের করে দেবার মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে৷ আগরতলা পুর নিগমের মোট ৪টি আসন সহ এদিন পুর সংস্থার উদয়পুর, মেলাঘর, বিলোনীয়া এবং বিশালগড়ে পুনঃভোটের দাবি জানালো কংগ্রেস৷

ভোট গ্রহণ পর্ব শেষে বামেদের পক্ষ থেকেও প্রায় একই অভিযোগ আনা হয়েছে এদিন৷ এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক গৌতম দাশ বলেছেন, পুনঃভোটের দাবি জানানোর মানে হল নির্বাচনকে আরও বেশি করে প্রহসনে পরিণত করা৷ এক্ষেত্রে সেদিকে না হেঁটে জনগণের মধ্যে আরও বেশি করে জনসংযোগ গড়ে তোলা, আইনের শাসন রাজ্যে পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতেই আন্দোলন জারি রাখবেন বলে জানিয়েছেন তিনি৷ তবে একাধিক কেন্দ্রে এদিন তাদের ক্ষেত্রেও পোলিং এজেন্টদেরকে বুথ থেকে বের করে দেবার অভিযোগ এনে আগরতলা পুর নিগমের মোট ৪টি আসনেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানাল সিপিএম৷ এছাড়াও একই অভিযোগে বিলোনীয়ার মোট ১৫টি আসনে, শান্তিরবাজারের ৫টি, বিশালগড়ের ১১টি আসনে প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাড়িয়েছে বলে জানান গৌতমবাবু৷ এদিন ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের উপ নির্বাচনের মতোই পুর ও নগর সংস্থার নির্বাচনকেও প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে বলে শাসক দলকে বিঁধেছে সিপিএম৷

বৃহস্পতিবার পুর নিগমের উপনির্বাচনে সন্ত্রাসের অভিযোগ এনে সদর মহকুমা শাসকের কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ সিপিএমের৷ নিজস্ব ছবি৷

গৌতমবাবু আরও জানালেন, একদিকে দেশের মধ্যে নজিরহীন ভাবেই এতো বেশি সংখ্যক আসনে একসাথে উপভোট হচ্ছে৷ তার উপর জোর করে পদত্যাগ করানোর পর কোথাও কোথাও মনোনয়ন পর্যন্ত জমা দিতে দেওয়া হয়নি প্রার্থীদের৷ আর এখন মানুষকে ভোট পর্যন্ত দিতে দেওয়া হচ্ছে না৷ কোথায় যাচ্ছে এই দেশের গণতন্ত্র, প্রশ্ণ তুলেন তিনি৷ এদিন রাজ্যের সর্বত্রই ভোটকে প্রহসনে পরিণত করার অভিযোগ এনে গৌতম দাশ বলেছেন, বিশালগড়ে সকালেই কোনও পোলিং এজেন্টকেই বুথে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি৷ একজন মহিলা এজেন্ট একটি বুথে থাকলেও পরে তাকেও বের করে দেওয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, সিপিএম প্রার্থী সহ রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা প্রবীণ নেতা ভানুলাল সাহাকে পর্যন্ত দৈহিকভাবে আক্রমণ করেছে বিজেপি আশ্রিত দুষৃকতিরা৷ প্রায় একই অভিযোগ আনা হয়েছে শহর আগরতলার বড়জলা বিধানসভা কেন্দ্রেও৷ সেখানে স্থানীয় বিধায়ক ডা দিলীপ দাসের নেতৃত্বে গুন্ডাবাহিনী বিরোধীদের উপর আক্রমণ চালিয়েছে বলে অভিযোগ আনেন তিনি৷

এদিকে কংগ্রেসের পক্ষেও এদিন এক সাংবাদিক সম্মেলনে দলের মুখপাত্র হরেকৃষ্ণ ভৌমিক বলেছেন, চলো পাল্টাই’র শ্লোগান তুলে যে বিজেপি টানা ২৫ বছর ক্ষমতায় থাকা বামেদের হারিয়েছে, এখন মানুষের তাদের বিরুদ্ধে এই শ্লোগান তুলতে ১০ মাসও সময় লাগবে না৷ তিনি সদর মহকুমা শাসক তথা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের বিরুদ্ধে তীব্র অভিযোগ এনে বলেছেন, তাকে অভিযোগ জানানো সত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেননি৷ উল্টো জেলা শাসকের দোহাই দিয়ে শাসক দলের হয়ে কাজ করা শুরু করেছেন৷ এদিন নির্বাচন কমিশন সহ পুলিশ প্রশাসন এমনকী সাধারণ প্রশাসনকেও সরকারের হয়ে কাজ করেছে বলে অভিযোগ জানালো কংগ্রেস৷

জামানত জব্দ হবে, তাই পুর ও নগর সংস্থার উপনির্বাচনে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা৷ বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে বিরোধীদের সমস্ত অভিযোগ খন্ডন করে এই দাবি করেছেন প্রদেশ বিজেপি সাধারণ সম্পাদিকা প্রতিমা ভৌমিক৷ তাঁর দাবি, জনগণের আস্থা হারিয়ে নির্বাচন থেকে এই ভাবেই পালানোর পথ খুজেছে বিরোধীরা৷

পুর ও নগর সংস্থার উপ নির্বাচনে বিরোধী সিপিএম ও কংগ্রেস সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে৷ শাসক দল নির্বাচনকে প্রহসনে পরিনত করেছে বলে অভিযোগ তুলে সিপিএম নির্বাচন বয়কট করেছে৷ কংগ্রেস কয়েকটি আসনে পুনঃভোটের দাবি জানিয়েছে৷ কিন্তু, পুর ও নগর উপ নির্বাচনে বিরোধীদের আনা সন্ত্রাসের অভিযোগ পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছে বিজেপি৷ এদিন প্রদেশ বিজেপি সাধারণ সম্পাদিকা প্রতিমা ভৌমিক দাবি করেন, রাজ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে৷ জনগণ উৎসবের মেজাজে ভোট দিয়েছেন৷ কিন্তু, বিরোধীরা নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে৷ প্রতিমা ভৌমিকের কথায়, জনগণের আস্থা হারিয়ে বিরোধীরা খেই হারিয়ে ফেলেছেন৷ বরাবরই অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানো তাদের রাজনৈতিক কৌশল৷ তাঁর দাবি, উপ নির্বাচনে প্রার্থী খঁুজে পায়নি বিরোধীরা৷ শুধু তাই নয়, ভোট কেন্দ্রে তারা পোলিং এজেন্ট দিতে পারেনি৷ তিনি জোর গলায় বলেন, উপ নির্বাচনে নিশ্চিত হার টের পেয়েছে বিরোধীরা৷ তাই নির্বাচন থেকে পালানোর পথ হিসেবে সন্ত্রাসকে তারা হাতিয়ার করেছে৷ কংগ্রেস ও সিপিএম উভয় দল হাতে হাত মিলিয়ে শাসক দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে৷ তাই, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়াকে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে তারা কলঙ্কিত করতে চেয়েছে৷ প্রতিমা ভৌমিকের দাবি, রাজ্যের জনগণ তাদের প্রত্যাখান করেছেন৷ উপ নির্বাচনের ফলাফলে তা প্রমাণিত হবে৷ তিনি প্রত্যয়ের সাথে জানান, পুর ও নগর উপ নির্বাচনে বিজেপির একাধিপত্ত কায়েম থাকবে৷ এদিন তিনি ভোট প্রক্রিয়া অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন করার জন্য সমস্ত ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *