এনআরসি অসমেই সীমাবদ্ধ থাকবে

৷৷ অভিজিৎ রায় চৌধুরী৷৷
নয়াদিল্লি, ১৯ ডিসেম্বর৷৷ বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের উল্টো সুরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হংসরাজ আহির এনআরসি নিয়ে সংসদে তথ্য দিলেন৷ অসম ছাড়া অন্য কোন রাজ্যে এনআরসি নয়, সংসদে লিখিত প্রশ্ণের জবাবে জানালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী৷ ফলে, এনআরসি নিয়ে অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকারে সম্ভিত ফিরেছে বলেই মনে হয়েছে৷ অবশ্য কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের প্রতিফলন কিনা, তা নিয়েও জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে৷
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে অসমে এনআরসি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ তাতে, খসড়া তালিকায় প্রায় ৪৩ লক্ষ নাম বাদ পড়েছে৷ অবৈধ অনুপ্রবেশকারী মূলত বাংলাদেশী মুসলিমদের চিহ্ণিতকরনেই অসমে এনআরসি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তা অনেকটাই স্পষ্ট৷ এনআরসি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে অসমে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ এনআরসি আতঙ্কে অনেকেরই রাতের ঘুম উড়ে গেছে৷ এই পরিস্থিতির প্রভাব ত্রিপুরাতেও পড়েছে৷ ত্রিপুরাতেও এনআরসি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে কয়েকটি মামলা হয়েছে৷ ওই মামলাগুলি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে৷
ত্রিপুরায় এনআরসি নিয়ে বাঙালি জাতিগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে ভুগছে৷ কারণ, ১৯৫১ সালকে ভিত্তি বছর ধরে এনআরসি প্রক্রিয়া ত্রিপুরায় চালু হলে প্রচুর বাঙালি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন৷ অবশ্য, রাজ্য সরকার এখনও এনআরসি নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করেনি৷
অসম, ত্রিপুরা ছাড়াও বিজেপির তরফে পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন রাজ্যে এনআরসি লাগু করার কথা বলা হয়েছে৷ চলতি বছরের আগষ্টে বিজেপি জাতীয় সম্পাদক রাহুলর সিনহা বলেছেন, ভারতের বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী মুসলমানদের এনআরসি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চিহ্ণিত করা উচিত৷ কারণ, ওই রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের রাজত্বে অনুপ্রবেশকারীদের আখড়া হয়ে উঠেছে৷ দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ হুঙ্কার দিয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় আসলে এনআরসি চালু হবেই৷ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি শুরু থেকেই এনআরসি বিরোধীতায় সুর চড়িয়ে চলেছেন৷
তবে, এনআরসি নিয়ে আতঙ্ক তৈরীর ক্ষেত্রে আগুনে ঘি ঢেলেছে বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের বক্তব্য৷ তিনি সাফ জানিয়েছিলেন, সারা দেশে পর্যায়ক্রমে এনআরসি চালু হবে৷ তাঁর কথায়, দীর্ঘ সময় ধরে ভারতীয়দের চিহ্ণিত করা হয়নি৷ ফলে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ঢুকে পড়েছে৷ তাতে, দেশের জনসংখ্যায় মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে৷ অমিত শাহ অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিশানা করতে গিয়ে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের উই পোকা বলে কটাক্ষ করেছিলেন৷ অবৈধ অনুপ্রবেশকারী চিহ্ণিতকরণ নিয়ে বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতির কথায় মনে হয়েছিল, যে কোন মূল্যে সারা দেশে এনআরসি প্রক্রিয়া চালু করবে কেন্দ্রীয় সরকার৷ এনআরসি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর উল্টো সুরে বিতর্ক দেখা দিয়েছে৷ লোকসভায় এক প্রশ্ণের জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হংসরাজ আহির জানিয়েছেন, ১৯৫১ সালের এনআরসি, ১৯৫০ সালের নাগরিকত্ব আইন এবং ২০০৩ সালের নাগরিকত্ব বিধির আওতায় অসম পরিমার্জিত হচ্ছে৷ বর্তমানে অসম ছাড়া অন্য কোন রাজ্যে এনআরসি লাগু করার প্রস্তাব নেই৷ ইতিপূর্বে সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় সরকার বলেছিল, ত্রিপুরায় এনআরসি পরিমার্জনের কোনও প্রস্তাব নেই৷ রাজ্যে এনআরসি লাগু করার জন্য শীর্ষ আদালতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের কাছে এবিষয়ে জানতে চেয়েছিল আদালত৷