নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২১ নভেম্বর৷৷ বেআইনী চিকিৎসা ব্যবসায়ীদের পায়ে বেড়ি পরানোর বন্দোবস্ত করে ফেলেছে রাজ্য সরকার৷ ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিসমেন্ট এ্যাক্ট নতুন রূপে এনে বেআইনী চিকিৎসা ব্যবসায়ীদের কঠোরভাবে রাশ টানা সম্ভব হবে, দাবী করেন আইনমন্ত্রী রতন লাল নাথ৷ তাঁর কথায়, স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে কেন্দ্রীয় আইন রাজ্যে হুবুহু চালু করা হচ্ছে৷ সাথে আরো কঠোর নিয়ম যুক্ত হচ্ছে৷ ফলে, এখন থেকে সরকারী এবং বেসরকারী চিকিৎসা পরিষেবা রাজ্য সরকারের কড়া নজরদারীতে থাকবে৷
বুধবার মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলনে আইনমন্ত্রী রতন লাল নাথ জানান, দ্য ত্রিপুরা ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিসমেন্ট এ্যাক্ট নতুন রূপে আনা হয়েছে৷ রাজ্য মন্ত্রিসভা ওই এ্যাক্টের বিধানসভায় পেশের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে৷ আগামী ২৩ নভেম্বর নতুন রূপে তৈরি বিলটি বিধানসভায় পেশ করবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী৷ আইনমন্ত্রীর কথায়, স্বাস্থ্য পরিষেবায় এতদিন কোন কঠোর আইন ছিল না৷ রাজ্যে ৪২ আগে তৈরি একটি আইন রয়েছে দ্য ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিসমেন্ট এ্যাক্ট ১৯৭৬৷ কিন্তু, ওই আইন কেবলই নাম সর্বস্ব৷ স্বাস্থ্য পরিষেবা এই আইনের কোন প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি৷
আইনমন্ত্রী বলেন, বর্তমান আইনে কেবলমাত্র বেসরকারী হাসপাতাল কিংবা নার্সিং হোম সম্পর্কে বিভিন্ন নিয়মের বর্ণনা দেওয়া আছে৷ কিন্তু, সরকারী হাসপাতাল বর্তমান আইনের আওতায় নেই৷ তাছাড়াও, অনেক ঘাটতি রয়েছে আইনে৷ তাই, পুরো আইন বাতিল করা হয়েছে এবং নতুন রূপে আইন তৈরি করা হয়েছে৷
তাঁর দাবি, রাজ্য সরকার স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নে কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে৷ আইনমন্ত্রী বলেন, অসম, মিজোরাম, সিকিম সহ পূর্বোত্তরের রাজ্যগুলির জন্য ২০১০ সালে কেন্দ্রীয় সরকার একটি আইন তৈরি করেছিল৷ অসম, মিজোরাম, সিকিম ওই আইন গ্রহণ করলেও তদানিন্তন ত্রিপুরা সরকার তা গ্রহণ করেনি৷ কিন্তু, বর্তমান রাজ্য সরকার কেন্দ্রের আইন হুবহু গ্রহণ করেছে৷ সাথে আরো কিছু কঠোর নিয়ম যুক্ত করেছে৷ নয়া আইনে, স্টেট কাউন্সিল গঠন করা হবে৷ সাথে, ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলও গঠন করা হবে৷ মূলত, চিকিৎসা পরিষেবায় সমস্ত কিছু দজরদারীর জন্য গঠন করা হবে কাউন্সিলগুলি৷ স্টেট কাউন্সিল সারা রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবায় নজর রাখবে এবং জেলাস্তরে ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলগুলি আলাদাভাবে নজর রাখবে৷ এর ফলে জেলাস্তরে পৃথক কমিটি গঠন করা হবে৷
আইনমন্ত্রীর দাবি, যে কোন চিকিৎসা পরিষেবা দিতে গেলে নিয়ম বহির্ভূত কোন কাজ বরদাস্ত করা হবে না৷ প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ছাড়া চিকিৎসা পরিষেবা শুরু করার অনুমতি দেওয়া হবে না৷ শুধু তাই নয়, কোন চিকিৎসক প্রাইভেট প্র্যাকটিস করলেও তাঁকে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম বাধ্যতামূলক মানতেই হবে৷
আইনমন্ত্রীর কথায়, নতুন আইনে রাজ্যের সমস্ত সরকারী হাসপাতালগুলিকেও যুক্ত করা হয়েছে৷ ফলে, সরকারী হাসপাতালগুলিও নজরদারির আওতায় আসতে চলেছে৷
প্রসঙ্গত, সারা রাজ্যে বহু ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা অসাধু উপায়ে চিকিৎসা পরিষেবা দিচ্ছেন৷ কিন্তু, তাদের উপর কোন নজরদারী ছিল না৷ প্যাথলজি সারা রাজ্যে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়েছে৷ কিন্তু, আদৌ তাঁদের প্যাথলজি চালানোর আইনী বৈধতা রয়েছে কিনা সেদিকে কারোরই কোন খেয়াল নেই৷ অসাধু চিকিৎসা ব্যবসায়ীদের খপ্পরে বিভিন্ন সময়ে রোগীরা ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছেন৷ বিভিন্ন প্যাথলজিতে প্রায়শই ভূল রিপোর্টের অভিযোগ উঠছে৷ ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিসমেন্ট এ্যাক্ট নতুন রূপে আসলে অসাধু চিকিৎসা ব্যবসায় লাগাম টানা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে৷