বেঙ্গালুরু, ১২ নভেম্বর (হি.স.): অকালেই মৃত্যু! পরাজয় মারণ রোগ ক্যান্সারের কাছে| প্রয়াত হলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা প্রবীণ বিজেপি নেতা অনন্ত কুমার| সোমবার ভোররাত দু’টো নাগাদ কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুর, শঙ্করা হাসপাতালে জীবনাবসান হয়েছে কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অনন্ত কুমারের| মৃত্যুকালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমারের বয়স হয়েছল ৫৯ বছর| পরিবার ও শঙ্করা হাসপাতাল সূত্রের খবর, বেশ কয়েকমাস ধরে ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমার| সম্প্রতি আমেরিকা এবং ব্রিটেন থেকে চিকিত্সা করিয়ে দেশে ফিরেছিলেন তিনি| দেশে ফেরার পর বেঙ্গালুরুর শঙ্করা হাসপাতালে তাঁর চিকিত্সা চলছিল| শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ভেন্টিলেটরে রেখে চিকিত্সা করা হয়েছিল| শঙ্করা হাসপাতালের ডিরেক্টর নাগারাজ জানিয়েছেন, ‘সোমবার ভোররাত দু’টো নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমার| শেষ সময়ে তাঁর পাশে ছিলেন স্ত্রী তেজস্বী এবং দুই কন্যা|’ প্রয়াত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে শেষশ্রদ্ধা জানানোর জন্য বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল কলেজ গ্রাউন্ডে শায়িত রয়েছে তাঁর মরদেহ| প্রয়াত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ইতিমধ্যেই শেষশ্রদ্ধা জানিয়েছেন কর্ণাটকের রাজ্যপাল ভাজুভাই ভালা-সহ বিশিষ্টজনেরা|
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমারের দুর্ভাগ্যজনক প্রয়াণের কারণে সোমবার গোটা দেশে অর্ধনমিত থাকবে জাতীয় পতাকা| পাশাপাশি পূর্ণরাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে| অনন্ত কুমারের অকাল প্রয়াণে শোকবিহ্বল কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী| কর্ণাটকে আগামী তিনদিন রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে কর্ণাটক সরকার, এছাড়াও সোমবার কর্ণাটক জুড়ে একদিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে| এদিন কর্ণাটকে সমস্ত সরকারি দফতর বন্ধ থাকবে| কর্ণাটক বিজেপি সূত্রের খবর, প্রয়াত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমারের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে মঙ্গলবার দুপুরে| বিবৃতি মারফত বিজেপির সাধারণ সম্পাদক এন রবিকুমার জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল আটটা নাগাদ মাল্লেশ্বরমে অবস্থিত জগন্নাথ ভবন, বিজেপির রাজ্য অফিসে নিয়ে যাওয়া হবে অনন্ত কুমারের নশ্বর দেহ| সেখানেই দলীয় কর্মী এবং অনুগামীরা তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে পারবেন| এরপর দুপুর একটা নাগাদ চামরাজপেট শ্মশানে পূর্ণরাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে|
কেন্দ্রীয় রাসায়নিক, সার এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রকের মন্ত্রী ছিলেন অনন্ত কুমার| কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমারের অকাল প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা দেশবাসী, শোকজ্ঞাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, উপ-রাষ্ট্রপতি এম বেঙ্কাইয়া নাইডু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, লৌহপুরুষ হিসেবে পরিচিত বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপিত অমিত শাহ, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে প্রমুখ| কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বিজেপি নেতৃত্ব ছাড়াও অনন্ত কুমারের অকাল প্রয়াণে শোকস্তব্ধ কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার প্রমুখ|
অনন্ত কুমারের প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের শোকবার্তা, ‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বর্ষীয়ান সাংসদ শ্রী এইচ এন অনন্ত কুমারের মৃত্যুর খবর শুনে অত্যন্ত দুঃখিত| গোটা দেশবাসী, বিশেষ করে কর্ণাটকবাসীর জন্য অপূরণীয় ক্ষতি| তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা|’ রাষ্ট্রপতি ছাড়াও অনন্ত কুমারের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন উপ-রাষ্ট্রপতি এম বেঙ্কাইয়া নাইডু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী| উপ-রাষ্ট্রপতির শোকবার্তা, ‘অনন্ত কুমারের প্রয়াণে ভীষণ দুঃখিত|’ অনন্ত কুমারকে অত্যন্ত দক্ষ প্রশাসক আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর শোকবার্তা, ‘আমার গুরুত্বপূর্ণ সহকর্মী ও বন্ধু অনন্ত কুমারজীর প্রয়াণে গভীর শোকাহত| তিনি অসাধারণ নেতা ছিলেন| কম বয়সেই রাজনীতির আঙিনায় পা রেখেছিলেন| ভালো কাজের জন্য তিনি সর্বদাই স্মরণীয় হয়ে থাকবেন|’ টুইট করে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘অনন্ত কুমারের স্ত্রী ড. তেজস্বী জীর সঙ্গে কথা হয়েছে, তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা ব্যক্ত করেছি….ওম শান্তি|’
অনন্ত কুমারের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং| রাজনাথের শোকবার্তা, ‘আমার সহকর্মী ও বন্ধু অনন্ত কুমারজীর প্রয়াণে আমি মর্মাহত ও দুঃখিত| তিনি সংসদের অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ সদস্য ছিলেন| যিনি বিভিন্নভাবে দেশকে সেবা করেছেন| মানুষের কল্যাণে তাঁর আবেগ ও নিষ্ঠা প্রশংসনীয় ছিল| তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি|’ অনন্ত কুমারের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ| টুইটারে সীতারমণ লেখেন, ‘অনন্ত কুমার আমাদের মধ্যে আর নেই, এই খবর শুনে স্তব্ধ| সর্বদাই তাঁর মস্তিষ্ক ও হৃদয়ে ছিল বেঙ্গালুরু| ঈশ্বর যেন তাঁর পরিবারকে এই ক্ষতি বহন করার শক্ত দেন|’ শোকজ্ঞাপন করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছেন, ‘অনন্ত কুমারের মৃত্যু গোটা দেশ এবং কর্ণাটকের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি|’ কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামীও অনন্ত কুমারের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন| কুমারস্বামীর শোকবার্তা, ‘আমি প্রিয় বন্ধুকে হারালাম| তিনি মূল্যবোধের রাজনীতি করতেন| সাংসদ ও মন্ত্রী হিসেবে তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন| তাঁর আত্মার শান্ত কামনা করছি| ঈশ্বর যেন তাঁর পরিবারকে এই ক্ষতি বহন করার শক্ত দেন|’ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ-র শোকবার্তা, ‘অনন্তজী দারুণ প্রশাসক ছলেন| তিনি দক্ষতার সঙ্গে নানা মন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেছেন| তাঁর মৃতু্য ভারতীয় রাজনীততে শূন্যস্থান তৈর করবে| যা দ্রুত ভরাট হবে না| ঈশ্বর যেন তাঁর পরিবার ও সমর্থকদের এই ক্ষত বহন করার শক্ত দেন|’ শোকবার্তায় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী জানিয়েছেন, ‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমারজীর প্রয়াণে আমি শোকস্তব্ধ| তাঁর পরিবার এবং বন্ধুদের প্রতি সমবেদনা| ওম শান্তি|’
অনন্ত কুমারের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার| শোকবার্তায় নীতীশ জানান, ‘অনন্ত কুমারজী একজন কর্মঠ রাজনীতিবিদ এবং বিশিষ্ট সমাজসেবক ছলেন| কর্ণাটকের রাজনীততে তাঁর বড় অবদান রয়েছে| ভালো কাজের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন| তাঁর চলে যাওয়া খুব দুঃখের|’ শোকপ্রকাশ করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ| অনন্ত কুমারের মৃত্যুকে খুবই দুঃখজনক আখ্যা দিয়ে যোগী আদিত্যনাথের বার্তা,‘ অনন্ত কুমারের মৃত্যু সরকার এবং দলের জন্য বড় ক্ষতি| অনন্ত কুমারজী একজন দক্ষ প্রশাসক এবং জনপ্রিয় নেতা হসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন| উত্তরপ্রদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই|’ অনন্ত কুমারের মৃতু্যতে শোকপ্রকাশ করে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান বলেছেন, ‘অনন্তজী আমার বন্ধু ছিলেন| ৪-৫ মাস আগে তিনি কথা দিয়েছিলেন, মধ্যপ্রদেশে নির্বাচনী প্রচারে আসবেন| এমন কখনও হয়নি যে, তিনি কথা দিয়ে কথা রাখেননি| ঈশ্বরের কাছে তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি|’ শোকবার্তায় রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে বলেছেন, ‘আমি ভীষণ দুঃখিত| দীর্ঘদিন ধরে আমাদের পরিচয়| আগামী দিনে আমরা তাঁকে খুবই মিস করব|’
১৯৫৯ সালের ২২ জুলাই কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন অনন্ত কুমার| কে এস আর্টস কলেজ থেকে কলা বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি| পরে কর্ণাটক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অইনে ডিগ্রি অর্জন করেন| ১৯৮৭ সালে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দেওয়ার আগে ১৯৮৫ সালে তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)-র রাজ্য সম্পাদক-সহ অন্য পদে নির্বাচিত হন| পরে সর্বভারতীয় সম্পাদকও হন| বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর আর পিছনে তাঁকাতে হয়নি অনন্ত কুমারকে| বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর ১৯৯৫ সালে অনন্ত কুমার কেন্দ্রীয় সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হন| ১৯৯৬ সালে প্রথমবার লোকসভায় সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন| বেঙ্গালুরু দক্ষণ আসন থেকে| রেল ও শিল্প মন্ত্রকের অধীনে বিভিন্ন কমিটির সদস্যও ছিলেন| ১৯৯৮ সালে এনডিএ সরকারের আমলে তাঁকে অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়| প্রসঙ্গত, দক্ষিণ ভারতের রাজ্য কর্ণাটকে বিজেপির উত্থানের নেপথ্যে ইয়েদুরাপ্পা ছাড়াও অনন্ত কুমারেরও হাত রয়েছে|