দোকান খোলা রাখা ইস্যুতে বিরোধীদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ সবকিছু জেনে বিরোধীতা করুন

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১১ নভেম্বর৷৷ শনিবার ও রবিবার দোকান খোলা নিয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যারা সমালোচনা করছেন তাদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের সাফ কথা তাঁরা কিছু না জেনেই সুর চড়াচ্ছেন৷ গোটা বিষয়টিকে নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে রাজনীতি করার চেষ্টা হচ্ছে বলেও মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন৷ তিনি বলেছেন, ব্রিটিশ আমলে দোকান খোলা হলে জরিমানা দিতে হত৷ পুলিশ ইনস্পেক্টর এসে জরিমানা আদায় করতে৷ সেটা ছিল ইনস্পেক্টর রাজ৷ আর সেই রীতিকে এখানেও এতদিন চালু ছিল৷ নতুন সরকার সেই ইনস্পেক্টর রাজকে দূর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেছেন৷ আজ নজরুল কলাক্ষেত্রে গেজেটেড অফিসার্স সংঘের প্রথম বার্ষিক সাধারণ সভার উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷
বার্ষিক সাধারণ সভার উদেবাধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারি নীতি প্রণয়ন করে৷ আর এই নীতি বাস্তবায়ণ করেন অফিসারগণ৷ দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ প্রসাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে রাজ্যের গেটেটেড অফিসারদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷ রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে উদার মানসিকতা নিয়েও কাজ করতে হবে সরকারি অফিসারদের৷ তবেই রাজ্য তিন বছরের মধ্যে একটি মডেল রাজ্য হিসাবে গড়ে উঠবে৷ তাই তাদের কাজ স্বচ্ছ, জনহিতকর এবং দুর্নীতিমুক্ত হলে রাজ্য আপনা আপনিই এগিয়ে যাবে৷ রাজ্য প্রসাসনের সুফল প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত পৌঁছে যাবে৷ রাজ্য হয়ে উঠবে স্বয়ম্ভর৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজের মানুষের কথা এবং বহির্রাজ্য থেকে আগত পর্যটকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে গত মন্ত্রিসভার বৈঠকে রাজ্যে শনিবার (অর্ধদিবস) ও রবিবার (পূর্ণ দিবস) দোকান পাঠ খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছ৷ তবে এটা বাধ্যবাধকতামূলক নয়৷ এই সম্পর্কিত আইনের সংশোধনীর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে মন্ত্রিসভার বৈঠকে৷ দোকান খোলা রাখলে এই দেড়দিন শ্রমিক যদি কাজ করে তাহলে অতিরিক্ত মজুরী পাবেন৷ এটা শ্রমিকদের ছুটি হরণ নয়৷ সরকার আমজনতার স্বার্থ বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান৷ অথচ কয়েকটি বৈদ্যুতিন চ্যানেলে দেখলাম বিরোধী দল এই সিদ্ধান্তকে শ্রমিক বিরোধী বলে আখ্যায়িত করেছে৷ এটা রাজনীতির পরিবাষা নয়৷ বিরোধীতা করার আগে সবকিছু জেনে বিরোধীতা করা উচিত বলে মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য তুলে ধরেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিগত সরকার রাজ্যের উপর ১১ হাজার কোটি টাকার উপর ঋণের বোঝা রেখে গেছে৷ তা সত্বেও এবছর আমরা শূন্য ডেফিসিট বাজেট করেছি৷ ভিশন ডকুমেন্ট অনুযায়ী রাজ্যে সপ্তম বেতন কমিশনের আদলে রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নেশামুক্ত রাজ্য গড়ে তুলতে সরকার সর্বিক গুরুত্ব দিয়েছে৷ ইতিমধ্যে ৫৫ হ াজার কিলোগ্রাম গাঁজা, বিপুল পরিমাণে হেরোইন, নেশার ট্যাবলেট, কোরেক্স, ফ্যান্সিডিল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে৷ নেসাকর সামগ্রীর ব্যবহার জনজাতিসহ যুব সমাজকে বিপথে পরিচালিত করার প্রয়াস৷ আমরা এগুলো প্রতিরোধ করে নেশামুক্ত ত্রিপুরা গড়ার উদ্যোগ নিয়েছি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গান্ধিজি, নানাজি দেশমুখ গ্রাম স্বরাজ গড়ার স্বপ্ণ দেখেছিলেন৷ আমদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও তাদের পথ অনুসরণ করে চলেেেছন৷ মোদিজি দেশের কল্যাণে যে সকল যোজনা হাতে নিয়েছেন তার ৮০ শখতাংশ রেখেছেন মহিলাদের জন্য৷ উজ্জ্বলা যোজনায় মহিলাদের দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে গ্যাস কানেকশন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় দেড় লক্ষ টাকার ঘর, সৌভাগ্য যোজনায় বিনামূল্যে বিদ্যুৎতায়ন, প্রধানমন্ত্রী শৌলাচয় যোজনায় বিনামূল্যে শৌচালয়, প্রধানমন্ত্রী আয়ুস্মান বীমা যোজনায় একটি পরিবারে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুযোগ প্রভৃতি৷
মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব রাজ্যের উন্নয়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আমরাও প্রধানমন্ত্রীর পথ অনুসরণ করে চলেছি৷ রাজ্যকে বিভিন্ন পরিকাঠোর উন্নয়নে এগিয়ে নেবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ আমরা ত্রিপুরাতে ডেয়ারী শিল্পকে এগিয়ে নেব ৷ ৫০০০ পরিবারকে ২টি করে গাভী দেওয়া হবে৷ তাতে ঐ পরিবারগুলির আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার চাইছে অফিসারগণ পারদর্শিতার সাথে কাজ করুন৷ প্রতিটি গ্রাম উন্নয়নে আপনাদের পাশাপাশি পঞ্চায়েত সচিবদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে৷
তাছাড়া বক্তব্য রাখেন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের (বিএমএস) জেন্যাল অর্গানাইজার সুীল কিরওয়াই৷ তিনি বলেন, ১৯৫৫ সালের ২৩ জুলাই ভূপালে ভারতীয় মজদূর সংঘ গঠন করা হয়৷ বক্তব্য রাকেন বিএমএস-এর ন্যাশনাল এগ্জিকিউটিভ মেম্বার এন তোম্বা সিং৷ স্বাগত ভাষণ দেন গেজেটেড অফিসার সংঘের সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ রায়৷ সভাপতিত্ব করেন গেজেটেড অফিসার সংঘ তথা বি এমএস-এর কো-কনভেনার তপন দাস৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *