রাজ্যে স্তব্ধ উন্নয়ন, টাকা কোথায় গেল, প্রশ্ণ সিপিএমের

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৬ অক্টোবর৷৷ রাজ্যে উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে পড়েছে৷ কিন্তু, বাজেটে বরাদ্দ টাকা কোথায় গেল? জানতে চেয়েছে সিপিএম৷

শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর এবং সাংসদ জীতেন্দ্র চৌধুরী৷ ছবি নিজস্ব৷

শুক্রবার রাজ্য কমিটির বৈঠক শেষে  সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকারকে নিশানা করে একথা বলেন৷ তাঁর কথায়, গত কয়েক মাসে বহু অনুমোদিত প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে৷ কেন্দ্রে একই দলের সরকার হওয়া সত্বেও রাজ্যের এই করুন দশা কেন তা জানতে চাইছি৷

শুক্রবার সিপিএম রাজ্য কমিটির এক বেলার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ গত বৈঠক দুমাস আগে ২৪ অগাস্ট অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ এদিন এই বৈঠক সম্পর্কে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বলেন, দুমাসে রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে চুলচেড়া বিশ্লেষণ হয়েছে৷ বিশেষ করে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত উপ নির্বাচনকে প্রহসনে পরিনত করা এবং শারদোৎসবের গেরুয়াকরণ, এদিন বৈঠকে প্রাধান্য পেয়েছে৷ তাছাড়া রাজ্যে গত কয়েকমাসে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে চরম অবনতি ঘটেছে তাতে রাজ্য কমিটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ বিজন ধরের কথায়, এক মাসে রাজ্যে ১৫টি খুন এবং ১১টি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে৷ তাদের মধ্যে ১১জন মহিলা রয়েছেন৷ শুধু তাই নয়, ধর্ষণের হারও রাজ্যে বেড়ে পড়েছে৷ বিজন ধর এদিন দাবি করেন, অতিতের সমস্ত ঐতিহ্য মুছে দিয়ে রাজ্যে চাঁদার ঝুলুম বেড়েছে৷ কুমারঘাটে বাস থামিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে বলপূর্বক চাঁদা আদায় করা হয়েছে৷ এছাড়াও জোট সরকার অন্যায়ভাবে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে৷ উদাহরণ হিসেবে বিজন ধরের বক্তব্য, দেশের কথা পত্রিকা অন্যায় ভাবে বন্ধ করে রাখা হয়েছিল৷ কিন্তু, উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে পত্রিকার প্রকাশনা আবারও শুরু হয়েছে৷

এদিন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর কটাক্ষের সুরে বলেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পুরণের কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ সপ্তম বেতন কমিশন, ১০৩২৩ সবই এখন জুমলা মনে হচ্ছে৷ তাঁর অভিযোগ, আয়ুষ্মান ভারত এই স্বাস্থ্য বীমায় মানুষের জীবনের শংকট আরও বাড়াবে৷ তাঁর আরও অভিযোগ, রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজের ভীষণ অভাব দেখা দিয়েছে৷ শুধু তাই নয়, শহরী রোজগার যোজনাতেও ভাঁটার টান লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ বিজন ধরের দাবি, রেগায় কাজ স্বাভাবিক করতে হবে৷ অন্তত্য মাসে ১০ থেকে ১২ দিন রেগায় কাজ দিতে হবে৷ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মেনে রেগার মজুরি ৩৪০ টাকা করতে হবে৷ শুধু তাই নয়,  টুয়েপ প্রকল্পে ৮/১০ দিনের কাজের অর্থ বরাদ্দ করতে হবে৷ কর্মসংস্থান ইস্যুতে বিজন ধর এদিন জোট সরকারকে সরাসরি নিশানা করেছেন৷ তিনি জানতে চেয়েছেন, পূর্বতন সরকারের আমলে যারা ইন্টারভিউতে বাছাই হয়েছিলেন তাদের কেন বাতিল করে দেওয়া হয়েছে৷ তাদের চাকুরি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি৷ পাশাপাশি, শূণ্যপদ পূরণ ও নতুন পদ সৃষ্টির দাবি করেন তিনি৷

চাকুরিচ্যুত ১০৩২৩ শিক্ষকদের নিয়েও রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করেছেন বিজন ধর৷ বিদ্রুপের সুরে তিনি বলেন, ১০৩২৩ শিক্ষকদের নিয়ে জোট সরকারের নিরুৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ তাঁর দাবি, ওই শিক্ষকদের বিকল্প ব্যবস্থা রাজ্য সরকারকেই করতে হবে৷ এদিকে, উপজাতি এলাকায় খাদ্যের অভাব নিয়ে তিনি আবারও অভিযোগ করেছেন৷ তাঁর কথায়, কাজ নেই তাই উপজাতি এলাকায় খাদের অভাব দেখা দিয়েছে৷

বিজন ধর এদিন অভিযোগ করেন, বিভিন্ন দপ্তরে কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে৷ তাঁর কথায়, ৯টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাজ শুরু হয়েছিল৷ বর্তমানে সেগুলি বন্ধ হয়ে রয়েছে৷ মরাছড়া থেকে আমবাসা পর্যন্ত রাস্তাটি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ অথচ, সাড়াইয়ের কোনও উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না৷ বিভিন্ন দপ্তর থেকে যে সমস্ত কাজ করা হতো তাতে সাধারণ মানুষের উপার্জন হত৷ কিন্তু, সেইগুলি বন্ধ হয়ে থাকায় মানুষের হাতে এখন টাকার বরই অভাব৷ তিনি জানতে চান, বাজেটে বরাদ্দ টাকা কোথায় গিয়েছে৷ কারণ, প্রত্যেকটি কাজের জন্য রাজ্য সরকার বাজেটে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রেখেছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *