পাথারকান্দি (অসম), ২১ অক্টোবর, (হি.স.) : কালীপুজোর চাঁদা সংগ্রহকে কেন্দ্র করে অসমের সীমান্তবর্তী ত্রিপুরার প্রবেশপথ কাঁঠালতলিতে বিকল্প জাতীয় সড়ক অবরোধ গড়ায় তুলকালাম ঘটেছে রবিবার। চাঁদা আদায়কে কেন্দ্র করে মারপিটের মতো ঘটনায় ঘায়েল হয়েছেন অনেক। প্রতিবাদে সীমান্তবর্তী অসম ভূখণ্ডের বাজাড়িছড়া থানার অন্তর্গত কাঁঠালতলিতে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয়রা। ঘটনাস্থলে প্রতিবেশী দুই রাজ্য পুলিশ ও পদস্থ সাধারণ প্রশাসনের আধিকারিকরা উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন।
ঘটনা শনিবার উত্তর ত্রিপুরার ধর্মনগরে সংঘটিত হয়েছিল কালীপুজোর চাঁদা সংগ্রহ নিয়ে। দক্ষিণ অসমের করিমগঞ্জ জেলার পাথারকান্দি মহকুমার বাজারিছড়া থানার অন্তর্গত কাঁঠালতলির কতিপয় ব্যবসায়ীকে চাঁদার নামে হামলা করা হয়েছিল ধর্মনগরে। এর প্রতিবাদে রবিবার অসম-ত্রিপুরা বিকল্প ২০৮ নম্বর জাতীয় সড়কে অবরোধ গড়ে তুলেন কাঁঠালতলির বাসিন্দারা। ফলে উভয় রাজ্যের অসংখ্য যানবাহন আটকে পড়ে। এ ধরনের কাণ্ডে অসম ও ত্রিপুরার সীমান্তবর্তী দুই এলাকার সাধারণ জনমানসে রবিবার টান টান উত্তেজনা ছিল।
বেলা বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে এ খবর চাউর হলে অকুস্থলে উপস্থিত হন উভয় রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকরা। তাঁদের আশ্বাসে সকাল পাঁচটা থেকে চলমান সড়ক অবরোধমুক্ত হয় দুপুর ১২টা নাগাদ।
ঘটনার তথ্য দিয়ে বাজারিছড়া থানার ওসি গৌতম দাস জানান, শনিবার কাঁঠালতলির (অসম) কয়েকজন সুপারি ব্যবসায়ী আগরতলা থেকে সামগ্রী কিনে একটি ট্রাকে বোঝাই করে তাদের গৃহ এলাকার গন্তব্যস্থলে ফিরছিলেন। ধর্মনগর (ত্রিপুরা) আসার পর সেখানকার অ্যারিয়েন্স ক্লাবের সদস্যরা ওই ব্যবসায়ীদের গাড়ি আটক করে কালীপুজোর চাঁদা বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। দর কষাকষি করে ব্যবসায়ী জনৈক বদরুল হকের মাধ্যমে আড়াই হাজার টাকা তাদের ক্লাবে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বললে ক্লাবকর্তারা সন্তুষ্ট হননি। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হয় বচসা। পরে তা মারপিট পর্যন্ত গড়ায়।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এক সময় তাদের নাকি টেনে-হ্যাঁচড়ে পুজো মণ্ডপের পাশে নিয়ে ব্যাপক মারধর করেন ক্লাবের সদস্যরা। শুধু মারধর করেই শেষ নয়, ট্রাক থেকে সুপারির বস্তাও লুটপাট তারা করেছে। এরই প্রতিবাদে রবিবার সকাল পাঁচটা থেকে অসম-আগরতলা বিকল্প জাতীয় সড়কে ত্রিপুরার প্রবেশদ্বার কাঁঠালতলিতে সড়ক অবরোধ গড়ে তুলেন ব্যবসায়ী এবং এলাকার আমজনতা।
পরে খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে অবরোধস্থলে দলবল নিয়ে ছুটে যান বাজারিছড়া থানার ওসি গৌতম দাস, চোরাইবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সুপ্রিয় ভট্টাচার্য। ওদিক থেকে ধর্মনগরের সিভিল এসডিএম-সহ কদমতলা থানার ওসি পার্থ চক্রবর্তী বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে অবরোধস্থলে উপস্থিত হয়ে সৃষ্ট সমস্যা নিয়ে স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন সংস্থা এবং অবরোধকারীদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। তাছাড়া ত্রিপুরায় ফের এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে পুলিশ তা কঠোর হস্তে দমন করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলে জাতীয় সড়ককে অবরোধমুক্ত করেন প্রতিবাদকারীরা।
উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবকুমার দেব পুজোর নামে চাঁদা সংগ্রহে জবরদস্তি না করতে রাজ্যবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। আহ্বানের পাশাপাশি তিনি কড়া বার্তাও দিয়েছিলেন, চাঁদার নামে বাড়াবাড়ি করলে প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। এর পরও মুখ্যমন্ত্রী তথা সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করে একাংশ পুজো আয়োজক সাধারণ মানুষের ওপর পুজোর চাঁদা নিয়ে জুলুমবাজিতে মেতে উঠেছেন। এ নিয়ে ত্রিপুরায় অশান্তি চলছে বলে জানা গেছে।