…বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদগুলিতে প্রশাসক

কলকাতা, ১৬ অগস্ট (হি. স.): সুপ্রিম কোর্টে নিষ্পত্তি হয়নি পঞ্চায়েত মামলার। তাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী পঞ্চায়েতগুলির পরিচালনার ক্ষেত্রে নয়া পদক্ষেপ করল পঞ্চায়েত দফতর। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদগুলিতে প্রশাসক বসানো শুরু হল। বৃহস্পতিবার এই পদক্ষেপ করল পঞ্চায়েত দফতর।
পঞ্চায়েত মামলায় এখনও পর্যন্ত কোনও অন্তবর্তী নির্দেশ দেয়নি দেশের শীর্ষ আদালত। অবিলম্বে বোর্ড গঠন না হলে উন্নয়নের কাজ থমকে যাবে- সোমবার এই মর্মে আদালতে জোর সওয়াল করেন নির্বাচন কমিশন ও রাজ্যের আইনজীবী। তাই যে সব পঞ্চায়েতের মেয়াদ শেষ হয়েছে সেখানে প্রশাসক বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার থেকেই বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েতে বসানো হল প্রশাসক। সুপ্রিম কোর্টের রায় না আসা পর্যন্ত প্রশাসক বহাল থাকবে। উন্নয়নের কাজ যাতে থমকে না যায় সেই কারণে প্রশাসক বসানোর এই সিদ্ধান্ত।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির অন্যতম সদস্য, বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় অসুস্থতার জন্য পঞ্চায়েত নিয়ে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে কোনও শুনানি বা রায় হয়নি। কবে তা হবে, সেটা নির্ভর করছে বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের শরীরের ওপর। সূত্রের খবর, আপাতত পঞ্চায়েত স্তরে বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে এসডিও এবং জেলা পরিষদ স্তরে জেলাশাসকদের দায়িত্ব সামলাতে বলা হবে। অর্থ কমিশনের শর্ত অনুযায়ী, নিয়ম মেনে পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন হলে তবেই বরাদ্দ অর্থ মঞ্জুর হবে। তা না হওয়ায় উন্নয়নের কাজ আটকে রয়েছে।
বোর্ড গঠন না হলে ৩৪ শতাংশ আসনে উন্নয়নের কাজও থমকে রয়েছে, বিষয়টি পঞ্চায়েত দফতরের কাছে যথেষ্টই মাথাব্যাথার কারণ হয়ে ওঠে। যতদিন পর্যন্ত না সুপ্রিম কোর্ট পঞ্চায়েত মামলার অন্তবর্তী নির্দেশ না দেয়, ততদিন ওতগুলো আসনে প্রশাসক বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পঞ্চায়েত দফতর।
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটে মোট ৩৪ শতাংশ আসনে বিনা ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী’ হয় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা। বিরোধীরা অভিযোগ তোলে, রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি করুণ বলেই তারা প্রার্থী দিতে পারেনি। এমতাবস্থায় ভাঙর আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নির্দলরাও একই কারণ দেখিয়ে আদালতে এ-মনোনয়নের জন্য আবেদন করে। কলকাতা হাইকোর্ট সেই আবেদন মঞ্জুর করে। এরপরই সিপিআইএম, কংগ্রেস, বিজেপি-ও একই দাবি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়।

হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ সেই দাবি খারিজ করে দিলেও, ডিভিশন বেঞ্চ সম্মতি জানায়। এরপরই এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে আবেদন করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এই মামলায় প্রাথমিকভাবে সুপ্রিম কোর্ট বলে, ই-মনোনয়ন সম্ভব নয়। কিন্তু, বিরোধী দলগুলির তরফে তখন রাজ্যের বিপুল সংখ্যক ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী’দের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। এই পরিসংখ্যান দেখেই আদালত এই ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়’-এর উপর স্থগিতাদেশ জারি করে। বলা হয়, এইসব বিনা ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী’দের নাম গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ করা যাবে না।
সোমবারও শীর্ষ আদালতে রাজ্য যুক্তি দিয়েছিল, পঞ্চায়েত সমিতি বা বোর্ড গঠন না হওয়া পর্যন্ত উন্নয়নের কাজ আটকে রয়েছে। অর্থ কমিশনের শর্ত অনুযায়ী, নিয়ম মেনে পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন হলেই বরাদ্দ অর্থ মঞ্জুর হবে। ফলে সেই অর্থ আটকে রয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টই নির্দেশ দিয়েছে, যে সব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি, গেজেট বিজ্ঞপ্তি করে সেই সব আসনের ফলাফল প্রকাশ করা যাবে না। ফলে সিংহভাগ জেলাতেই বোর্ড, সমিতি গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না। আইনজীবীরা অবশ্য বলছেন, এ দিন রায় না হলেও প্রশাসনিক বা সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হওয়ার কথা নয়। কারণ, প্রশাসক বা অফিসার নিয়োগ করে পঞ্চায়েতের কাজ চালানো সম্ভব। সোমবার পঞ্চায়েত মামলার শুনানির পরে ঠিক হয়েছিল, মঙ্গলবার সওয়াল-জবাব শেষ করে তার পরে শীর্ষ আদালত এ বিষয়ে রায় শোনাবে। বিজেপির তরফে আইনজীবী পি এস পাটওয়ালিয়ার আরও সওয়াল করা বাকি ছিল।