BRAKING NEWS

প্রয়াত অটলবিহারী বাজপেয়ী, শোকস্তব্ধ সারা দেশ

নয়াদিল্লি, ১৬ আগস্ট (হি.স.) : প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী | বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লির এইএমএস হাসপাতালে ৯৩ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী৷ শোকস্তব্ধ সারা দেশ | তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিজেপি সভাপতি, কংগ্রেস সভাপতি, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতি। এছাড়াও শোকপ্রকাশ করেছে দেশের রাজনৈতিক মহল। শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর নশ্বর দেহ শায়িত থাকবে বিজেপির প্রধান কার্যালয়ে। দুপুর একটা শুরু হবে শেষযাত্রা। বিকেল চারটে নাগাদ পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। সাতদিনের জাতীয় শোকদিবসের ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যালয়গুলি অর্ধদিবস বন্ধ থাকবে। ছুটি থাকবে পশ্চিমবঙ্গ সহ একাধিক রাজ্য। এর আগে তাঁর আরোগ্য কামনা করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। কিন্তু সমস্ত প্রার্থনা বিফল করে মর্ত্যের সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে অমৃতলোকে পাড়ি দিলেন ভারতের প্রকৃত রত্ন অটলবিহারি বাজপেয়ী।
বিফলে গেল চিকিৎসকদের সমস্ত প্রচেষ্টা ও সারা দেশের প্রার্থনা | প্রয়াত হলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী । এইমস হাসপাতালের তরফে প্রেস রিলিজে জানান হল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা ০৫মিনিট নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী । ১১ জুনে ভর্তি হয়েছিলেন এইমসে। ৯ সপ্তাহ ধরে চিকিৎসা চলছিল দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এইমস)-হাসপাতালে । গত দু’দিন ধরে তাঁর অবস্থা আরও সংকটজনক হয়ে উঠেছিল৷ চিকিৎসকরাও জানিয়ে দেন, যে কোনও মূহূর্তে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে৷ তাই তাঁকে মঙ্গলবারই লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে রাখা হয়৷ বুধবার থেকে বন্ধ হয়ে যায় বাজপেয়ীর শরীরের বেশিরভাগ অঙ্গের কাজ৷ ভেন্টিলেশনে চলে যান তিনি৷ পরিস্থিতি খারাপ শুনে তখনই হাসপাতালে পৌঁছন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ বিজেপির অন্য নেতারাও রাতেই পৌঁছন৷ বাজপেয়ীর অবস্থা মিনিটে মিনিটে খারাপ হতে থাকে৷ সকাল থেকে বিজেপি ছাড়াও অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা পৌঁছন৷ দুপুরে যান প্রধানমন্ত্রী৷ তার কিছু পরেই বাজপেয়ীর প্রয়ানের খবর জানানো হয় হাসপাতালের তরফে৷
তাঁর প্রয়াণের সঙ্গেই শেষ হল এক বর্ণময় রাজনৈতিক চরিত্রের৷ যিনি ভারতের প্রথম অংকগ্রেসি প্রধানমন্ত্রী যিনি পূর্ণসময়ের জন্য ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিলেন৷ একই সঙ্গে তিনি বেনজির ভাবে ১৯৯৬ সালে মাত্র ১৩ দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন৷ তবে এর পরও তিনি দু’বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন৷ একবার তেরো মাস৷ শেষবার পূর্ণ সময়ের জন্য ছিলেন৷
তাঁর আমলেই ২৪ বছর পর ভারতে পরমাণু পরীক্ষা হয়৷ রাজস্থানের পোখরানে পর পর ৫টি পরমাণুর পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ হয়৷ ১৯৭৪ সালের পর ফের ১৯৯৮ সালে দেশে পরমাণুর পরীক্ষা, যা পোখরান-২ নামেই পরিচিত৷ ১৯৯৯ সালে তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে জাতীয় সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প ও প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা বাজপেয়ীর সবচেয়ে বড় উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ৷ যা ভারতের সড়ক যোগাযোগে কার্যত বিপ্লব ঘটিয়েছে৷ সেই ‘বিপ্লবী’ই চলে গেলেন৷
২০০৮ সাল থেকেই শরীর ভাল যাচ্ছিল না বাজপেয়ীর। তখনও লখনউয়ের সাংসদ তিনি। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে সংসদে আসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন বাজপেয়ী। তার পর ২০০৯ সালে একবার বড় রকমের হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। তখন থেকেই তিনি প্রায় কাউকেই আর চিনতে পারতেন না। বসিয়ে রাখলে বসে থাকতেন, শুইয়ে দিলে সে ভাবেই। এমনকী ২০১৫ সালে তাঁর বাড়ি বয়ে গিয়ে তাঁকে ভারত রত্ন সম্মানে ভূষিত করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
হৃদরোগে ও কিডনির সমস্যায় গত ১১ জুন এইমসে ভর্তি হয়েছিলেন বাজপেয়ী। তখন থেকেই এইমসে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। ১৪ আগস্ট দুপুর থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। বুধবার বিকেলে ডাক্তাররা জানান, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। তার পর বৃহস্পতিবার সাড়ে বিকেল পাঁচটা পাঁচ নাগাদ এইমস কর্তৃপক্ষ মেডিকেল বুলেটিনে জানিয়ে দেয়, তিনি আর নেই।
স্বাধীনতা সংগ্রামী, কবি, বিরোধী নেতা, দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান, কারগিল যুদ্ধের বিজয়ী দক্ষ প্রশাসকের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ সারা দেশ |

প্রয়াত অটলবিহারী বাজপেয়ীর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোশ্যাল মিডিয়া ট্যুইটবার্তায় রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ লেখেন, প্রাক্তন প্রধামন্ত্রী তথা ভারতীয় রাজনীতির মহান ব্যক্তিত্ব শ্রী অটল বাজপেয়ীর দেহাবসানের ফলে আমি গভীর ভাবে শোকাহত। বিচক্ষণ নেতৃত্ব, দূরদর্শিতা তথা অসাধারণ বাগ্মিতা ওনাকে এক বিরাট ও স্নেহময় ব্যক্তিত্ব প্রদান করেছে। তাঁর স্নেহময়তা ব্যক্তিত্ব আমাদের স্মৃতিতে থাকবে।
শোকে বিহ্বল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ট্যুইটবার্তায় লেখেন, আমি নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছি। শূন্যতার মধ্যে রয়েছে মন । মনের মধ্যে ভাবনার জোয়ার বইছে। আমাদের সবার শ্রদ্ধেয় অটলজি আর আমাদের মধ্যে নেই। নিজের জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত তিনি রাষ্ট্রের জন্য সমর্পিত করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে এক যুগের অবসান হল। অটলজি আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু তাঁর প্রেরণা, পথপ্রদর্শন, প্রত্যেক ভারতীয় তথা বিজেপিকর্মীরা পাবে। ভগবান তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করুক। ওম শান্তি।

প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ মুখ্যমন্ত্রীরা। শোকস্ত উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, ব্যক্তিস্বার্থের উর্দ্ধে উঠে জাতীয় স্বার্থ জন্য তিনি কাজ করে গিয়েছিলেন। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা তিনি দেশকে দিয়েছিলেন। তাঁর মহান ব্যক্তিত্বকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য উত্তরপ্রদেশের প্রতিটি নদীতে তাঁর চিতাভষ্ম ফেলা হবে।
মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান বলেছিলেন, তিনি একজন মহান রাজনীতিবিদ ছিলেন। দেশবাসী তাঁকে ভালবাসত। এটা ভাবাও খুব কঠিন আমাদের সবার প্রিয় অটলজি আর আমাদের মধ্যে নেই। এক রাজনৈতিক অধ্যায়ের শেষ হল। যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা কোনও পূরণ হবে না।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ বলেন, তিনি শারীরিক ভাবে আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু তাঁর দূরদর্শিতা আমাদের সঙ্গে থাকবে। যার দিকে আমরা তাকিয়ে থাকতাম। তাঁর অনুপস্থিতি ব্যক্তিগত ক্ষতি। তাঁর আদর্শ আমাদের অনুপ্রাণিত করবে।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেন, ভারতরত্ন অটলবিহারী বাজপেয়ীজির প্রয়াণে আমি গভীর ভাবে শোকাহত। এক অসাধারণ বাগ্মী, চিত্তাকর্ষক কবি, ব্যাতিক্রমী জনসেবক, বিশিষ্ট সাংসদ এবং মহান প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, খুব শোকের মধ্যে রয়েছি আমরা। কারণ অটলজি আর আমাদের মধ্যে নেই। নশ্বর দেহ তাঁর বাসভবনে নিয়ে আসা হবে। যেখানে সাধারণ মানুষ তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাবে। ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক বলেন, বাজপেয়ীজির প্রয়াণে আমি গভীর ভাবে শোকাহত। ভারত এক মহান নেতাকে আজ হারাল। সমাজবাদী পার্টি নেতার মুলায়ম সিং যাদব বলেন, দেশের জন্য এটা বড় ক্ষতি হয়ে গেল। বর্ষীয়ান নেতা হওয়া সত্বেও নিজের জীবনকে সাধারণ ভাবে যাপন করেছিলেন। তাঁর মধ্যে কোনও ঔদ্ধত্য ছিল না। বর্তমানের নেতাদের তাঁর থেকে শেখা উচিত। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী ট্যুইটবার্তায় লেখেন, আজ ভারত তাঁর মহান সন্তানকে হারাল। লক্ষ-কোটি দেশবাসী অটলবিহারী বাজপেয়ীজিকে শ্রদ্ধা করত। তাঁর পরিবারবর্গ এবং অনুরাগীদের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। আমরা তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ বলেন, ভারতীয় রাজনীতির শিখড় পুরুষ, ভারতরত্ন অটলবিহারী বাজপেয়ীজির প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি রইল। অটলজির স্মৃতিকে কুর্নিশ। অটলজিকে কোটি কোটি প্রণাম। ওজস্বী বক্তা, জনকবি। নিজের ব্যক্তিত্ব, কর্তৃত্বের মাধ্যমে মা ভারতীকে গৌরবান্বিত করেছেন।

সংসদের রাজ্যসভ্য চেয়ারম্যান ও লোকসভার অধ্যক্ষা শোকপ্রকাশ করেন। শোকবার্তায় রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তথা দেশের উপ-রাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু বলেন, কখনও ভাবিনি এত তাড়াতাড়ি সব কিছু শেষ হয়ে যাবে। তিনি একজন প্রকৃত ভারতীয় ছিলেন। তিনি হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কখনও দ্বিধা বোধ করেননি। স্বাধীনোত্তর ভারতের মহীরূহ নেতা ছিলেন তিনি। আধুনিক যুগে বাজপেয়ীজি অজাতশত্রু ছিলেন। কারণ তিনি সব সময় সম্মান এবং শালীনতার প্রতি শ্রদ্ধা ছিলেন। তাঁর আমলে দেশ প্রভূত উন্নতি করেছে। সড়ক যোগাযোগ, রেল, নদী যোগযোগে প্রভূত উন্নতি হয়েছে।
লোকসভার অধ্যক্ষা সুমিত্রা মহাজন বলেছেন, রাজনীতির আকাশের নক্ষত্র ছিলেন অটলজি। অন্যান্য সকলের তুলনায় সেই নক্ষত্র অনেক বেশ জ্বল জ্বল করেছিল। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার অদ্ভুত ক্ষমতা তাঁর ছিল। বিরোধীদের থেকেও তিনি মর্যাদা আদায় করেছিলেন।
বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তথা ভারতরত্ন অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ও উপ-রাষ্ট্রপতি মহম্মদ হামিদ আনসারি।
এদিন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকলেও আমি কখনও ভাবিনি এইভাবে সমস্ত কিছু শেষ হয়ে যাবে। নিয়তি আমাদের কাছে থেকে তাঁকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছে। দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে তিনি এগিয়ে গিয়েছেন। তাকে হারিয়ে দেশ আজ গরিব হয়ে গেল। ছয় দশক ধরে তিনি মহীরূহের মতো ছিলেন। ভাষার প্রতি তাঁর দক্ষতা ছিল। রসিক ছিলেন তিনি। ভারতের মহান সন্তানের প্রতি আমরা বিনম্র শ্রদ্ধা রইল।
প্রাক্তন উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি বলেন, প্রখ্যাত জননেতা ছিলেন তিনি। তিনি জ্ঞানী ও সংযমী ছিলেন। জনগণের সঙ্গে সংযোগ রাখার এক অভিনব পন্থা তিনি তৈরি করে ছিলেন। একটা বড় সময়ের ব্যবধানে এমন মহান ব্যক্তিত্ব আসে। বহুদিন পর্যন্ত মানুষ তাঁকে মনে রাখবে।
প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করলেন তাঁর অভিন্ন হৃদয়ে বন্ধু প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদবানি। পাশাপাশি এদিন অমিত শাহ বৃহস্পতিবার রাতে জানিয়েছেন ভারতের আকাশের এক নক্ষত্রের পতন হয়েছে।
লালকৃষ্ণ আদবানি বলেন, আমি বাক্য হারা হয়ে পড়েছি। দেশের সুমহান নেতার প্রয়াণে আমি শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছি। সহকর্মী ছাড়াও তিনি আমার বিগত ৬৫ বছর ধরে অভিন্ন হৃদয়ের বন্ধু ছিলেন। এদিন রাতে অমিত শাহ জানিয়েছেন, ভারতের আকাশে এক নক্ষত্রের পতন হল। ভারত এক মহান নেতাকে হারাল। বিজেপি তাঁর প্রথম জাতীয় সভাপতিকে হারাল। কয়েক কোটি যুবক তাদের অণুপ্রেরণাকে হারাল। বাজপেয়ীর শূন্যস্থান পূরণ করা সম্ভব নয়। শুক্রবার তাঁর মৃতদেহ সকাল ৯টা পর্যন্ত বিজেপির কার্যালয়ে রাখা থাকবে। দুপুর একটায় তাঁর শেষ যাত্রা শুরু হবে। বিকেল চারটে নাগাদ স্মৃতি স্থলে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যে আগামী সাতদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। অর্ধনমিত থাকবে দেশের পতাকা। অন্যদিকে বাজপেয়ীর প্রয়াণে ছুটি ঘোষণা করল রাজ্য সরকার। পঞ্জাব, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খন্ডে আগামীকাল ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
১৯২৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রে অটলবিহারী বাজপেয়ীর জন্ম হয়। তাঁর মাতা কৃষ্ণা দেবী এবং পিতা কৃষ্ণবিহারী বাজপেয়ী। কৃষ্ণবিহারী ছিলেন স্কুলশিক্ষক ও কবি। প্রথম জীবনে বাজপেয়ী সরস্বতী শিশু মন্দির স্কুলে পড়াশোনা করেন। পরে ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে স্নাতক হন। স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করেন কানপুরের ওয়াংলো-বেদিক কলেজে।
১৯৩৯ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘে যোগ দেন। ১৯৪৭ সালে সঙ্ঘের প্রচারক হন। রাষ্ট্রধর্ম নামে এক হিন্দি মাসিক পত্রিকা, সাপ্তাহিক পাঞ্চজন্য এবং স্বদেশ ও বীর অর্জুন নামে দুটি দৈনিক পত্রিকায় কাজ করতেন। কবিতা লিখতেন। তিনি হিন্দি ভাষার বিশিষ্ট কবি ছিলেন।
তিনি অকৃতদার ছিলেন। পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। একসময় শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভারতীয় জনসঙ্ঘে যোগ দেন। ১৯৫৭ সালে বলরামপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রথম লোকসভায় নির্বাচিত হন। শুরু থেকেই সংসদে সুবক্তা হিসাবে পরিচিত ছিলেন।
১৯৬৮ সালে হন জনসঙ্ঘের সভাপতি। তাঁর সঙ্গী ছিলেন নানাজি দেশমুখ, বলরাজ মাধোক, লালকৃষ্ণ আদবানি প্রমুখ।১৯৭৫ সালে জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে সার্বিক বিপ্লবে তিনি অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৭ সালে জনসঙ্ঘ জনতা পার্টির সঙ্গে মিশে যায়। সেই বছর লোকসভা ভোটে ইন্দিরা গান্ধীকে পরাস্ত করে জনতা পার্টি ক্ষমতায় আসে। মোরারজি দেশাই সরকারি বাজপেয়ী হন বিদেশমন্ত্রী। ভারতের প্রতিনিধি হিসাবে তিনি প্রথমবার রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সভায় হিন্দিতে ভাষণ দেন।মোরারজি দেশাই ইস্তফা দেওয়ার পরে তিনিও পদত্যাগ করেন।
কিছুদিন বাদে জনতা পার্টি সরকারের পতন ঘটে। বাজপেয়ী তাঁর আরএসএসের সহকর্মী লালকৃষ্ণ আদবানী, ভৈরোঁ সিং শেখাওয়াত এবং আরও কয়েকজনকে নিয়ে গড়ে তোলেন ভারতীয় জনতা পার্টি। তিনি ১৯৮৪ সালে অপারেশন ব্লু স্টারের বিরোধিতা করেছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী দুই দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হওয়ার পরে শিখ গণহত্যারও নিন্দা করেছিলেন কঠোর ভাষায়।
১৯৮৪-র লোকসভা ভোটে বিজেপি দুটি আসন পায়। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার পরে শোকপ্রকাশ করেন। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন। কিন্তু সংসদে গরিষ্ঠতা অর্জন করার জন্য অন্যান্য দলের সমর্থন আদায় করতে পারেননি। ১৩ দিনের মাথায় সরকারের পতন হয়।
১৯৯৮ সালে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ ফের ক্ষমতায় আসে। বাজপেয়ী ফের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন। সেবার পোখরানে ভারত পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করে। ১৯৯৯ সালে বাজপেয়ী পাকিস্তানের সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো করার উদ্যোগ নেন। দিল্লি-লাহোর বাসযাত্রা চালু করেন। কিন্তু কিছুদিন পরেই পাকিস্তানের সেনা গোপনে ভারতে ঢুকে পড়ে। কারগিল শহরের আশপাশের পাহাড় চূড়াগুলির দখল নিয়ে নেয়। ভারতীয় সেনা পরিচালনা করে অপারেশন বিজয়। পাকিস্তানি হানাদারেরা পালিয়ে যায়।
১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি ডিএমকে সমর্থন তুলে নিলে বাজপেয়ী সরকারের পতন ঘটে। কিন্তু অন্তর্বর্তী নির্বাচনে ফের জয়ী হয় এনডিএ। বাজপেয়ী ফের প্রধানমন্ত্রী হন। প্রথম অকংগ্রেসী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে পাঁচ বছর পূর্ণ করেন।
এই সময় দেশে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের জঙ্গি হানা ঘটে। ১৯৯৯ সালের শেষে আই সি ৮১৪ নামে একটি ভারতীয় বিমানকে জঙ্গিরা ছিনতাই করে। যাত্রীদের মুক্ত করার জন্য তিন জঙ্গিকে জেল থেকে মুক্তি দিতে হয়। ২০০১ সালে জঙ্গিরা সংসদ ভবনে আক্রমণ করে।
২০০০ সালে বাজপেয়ী আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে ‘ভিশন ডকুমেন্ট’ স্বাক্ষর করেন। তাতে ভারত আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মিত্র হয়ে ওঠে। পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশারফের সঙ্গে আগ্রায় শান্তি আলোচনায় বসেন। যদিও সেই বৈঠক ব্যর্থ হয়।
প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহ দিয়েছেন, বিদেশি বিনিয়োগে সাহায্য করেছেন। ২০০৪ সালে এনডিএ লোকসভা ভোটে পরাজিত হওয়ার পরে রাজনীতি থেকে অবসর নেন। পরে তাঁকে বিশেষ প্রকাশ্যে দেখা যেত না। ২০০৮ সাল থেকেই শরীর ভাল যাচ্ছিল না বাজপেয়ীর। তখনও লখনউয়ের সাংসদ তিনি। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে সংসদে আসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন বাজপেয়ী। তার পর ২০০৯ সালে একবার বড় রকমের হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। তখন থেকেই তিনি প্রায় কাউকেই আর চিনতে পারতেন না। ২০১৫ সালে বাড়ি গিয়ে তাঁকে ভারত রত্ন সম্মানে ভূষিত করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। এহেন বাজপেয়ীকে গত ১১ জুন হৃদরোগ ও কিডনির সমস্যায় এইমসে ভর্তি হয় । তখন থেকেই এইমসে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। ১৪ আগস্ট দুপুর থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। বুধবার বিকেলে ডাক্তাররা জানান, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। তার পর বৃহস্পতিবার সাড়ে বিকেল পাঁচটা পাঁচ নাগাদ এইমস কর্তৃপক্ষ মেডিকেল বুলেটিনে জানিয়ে দেয়, তিনি আর নেই। আগামীকাল শুক্রবার বিকেল ৫টায় দিল্লির স্মৃতিস্থলে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে অটলবিহারী বাজপেয়ীর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *