কেরলে এখনও পর্যন্ত ৩৭ জনের মৃত্যু, পরিদর্শনে হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী

তিরুবন্তপুরম, ১২ আগস্ট (হি.স.) : কেরলে ভারী বৃষ্টি, ধস এবং বন্যায় এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩৭ জনের। রবিবার আকাশপথে রাজ্যের বন্যাপরিস্থিতি পরিদর্শনে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। টুইটারে সেকথা জানিয়ে রাজনাথ লেখেন, ত্রাণ শিবিরগুলিও ঘুরে দেখবেন। তারপর ত্রাণ এবং বন্যা মোকাবিলা নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করবেন। ১৪টি জেলায় জারি হয়েছে হাই অ্যালার্ট। ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন ৩৫০০০ জন মানুষ। নষ্ট হয়ে গিয়েছে ১০৩১ হেক্টর শস্য। একথা জানিয়েছে, কেরল রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর বা কেএসডিএমএ। উদ্ধারে নেমেছে সেনাবাহিনীও। প্রতি কলামে ৪০টি দল মিলে ১০ কলাম সেনা উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে।

তবে রবিবার সকাল থেকে বৃষ্টির প্রকোপ কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছেন কেএসডিএমএ-র প্রধান পি এইচ কুরিয়েন। ইডুক্কি বাঁধের জলস্তর ২৪০০০ মিটারের নিচে নেমে গিয়েছে। ফলে আপাতত পাঁচটি ফ্লাডগেট বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাঁধ কর্তৃপক্ষ। এর্নাকুলাম এবং ত্রিশুর জেলার প্রশাসনও জানিয়েছে, রবিবার সকাল থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। পেরিয়ার নদীর জলস্তর অনেকটাই নেমে গিয়েছে। দুই জেলার ১০০০০ মানুষ ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন। এবার তাঁদের নিজেদের বাড়ি ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। যদিও স্বাধীনতা দিবস পর্যন্ত রাজ্যে ভারী বৃষ্টি এবং নিচু এলাকাগুলিতে বন্যার প্রকোপ বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। মত্স্যজীবীদের আরব সাগরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ইডুক্কি জেলায় ডুবতে থাকা একটি ব্রিজের উপর দিয়ে শিশু কোলে ছুটে যাওয়া এক এনডিআরএফ কর্মীর ছবি ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিহারের বাসিন্দা, কানহাইয়া কুমার নামে ওই এনডিআরএফ-এর কনস্টেবল জানালেন, তিনি আচমকা দেখতে পান, সরোষে বইতে থাকা পেরিয়ার নদীর উপর দিয়ে সন্তান কোলে ব্রিজ পেরতে ভয় পাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি।

এই কাজে ৬ বছরের অভিজ্ঞতা থাকায় তিনি তখন আর কিছু না ভেবে ছুটে গিয়ে ওই শিশুকে কোলে তুলে ব্রিজ পেরিয়ে যান। তাঁর পিছনেই ছুটে আসেন শিশুর বাবা। কানহাইয়ারা ব্রিজ পেরনোর কয়েক মুহূর্ত পরেই পুরো ব্রিজটি ডুবে যায়। এনডিআরএফ-এর চার নম্বর ব্যাটেলিয়নের কনস্টেবল কানহাইয়া তামিলনাড়ুর আরাক্কোনামে ডিপ ডাইভিং-এ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশে বহু বিপর্যয়ে উদ্ধারকাজ চালিয়েছেন তিনি। ৪৪টি নদী সম্বলিত কেরলে গত কয়েকদিনের ভারী বন্যার ফলে ১৯২৪ সালের পর এই প্রথম বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জলাধারের জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় ইদুক্কি বাঁধের লকগেট খুলে দেয় কর্তৃপক্ষ। ফলে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হয়ে ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন মৃতদের পরিবার পিছু এবং গৃহহীনদের চার লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ এবং যাঁরা দুইই হারিয়েছেন তাঁদের ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছেন।