কলকাতা, ৩ আগস্ট (হি.স.): আজও এনআরসি ইস্যুতে উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গ | শিলচর বিমানবন্দরে থেকে সারা রাত অবস্থান ধর্ণার পর শুক্রবার সকালে কলকাতায় ফিরেলে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল ৷ ফিরেই বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন প্রতিনিধি দলে থাকা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম । আগামী দিনে দলনেত্রী নির্দেশ দিলে ফের অসমে যাবেন বলেও জানিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম । এদিকে অসমের ঘটনায় আগামী দু’দিন রাজ্যে কালা দিবসের ডাক দিল তৃণমূল কংগ্রেস | শুক্রবার তিলজলার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে একথা জানান, তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় । এদিকে, এনআরসি নিয়ে তৃণমূলের ভুমিকা নিয়ে আজও সরব হল বিজেপি নেতৃত্ব | বিজেপি-র সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, বিভ্রান্তি, ঘৃণা তৈরির চেষ্টা করতেই তৃণমূল কংগ্রেস আগামী শনি ও রবিবার কালা দিবসের ডাক দিয়েছে | এনআরসি-র উপযোগিতা বোঝাতে রাজ্যব্যাপী আন্দোলনে নামছে বিজেপি। তৃণমূল কংগ্রেসের পাগলামী রাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর স্পষ্ট দাবি, কোনও ভারতীয়র নাম অসমের নাগরিকপঞ্জী থেকে জোর করে বাদ দেওয়া হয় নি। অন্যদিকে, এনআরসি ইস্যুতে গত বুধবারের রেল অবরোধ নিয়ে মতুয়া সম্প্রদায়ের কিছু লোককে নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ করেন সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর ।
শিলচর বিমানবন্দরে থেকে সারা রাত ধর্ণার পর আজ সকালে কলকাতায় ফিরেন তৃণমূলের ৬ প্রতিনিধি ৷ ‘বিজেপি দাঙ্গাবাজ দল’ । শুক্রবার সকালে অসম থেকে কলকাতায় ফিরেই এই মন্তব্য করলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম । আগামী দিনে দলনেত্রী নির্দেশ দিলে ফের অসমে যাবেন বলেও জানিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম । গতকাল অসম সফরের উদ্যেশ্য শিলচর বিমানবন্দরে পৌঁছায় তৃণমূলের ৮ জনের একটি প্রতিনিধি দল ৷ বৃহস্পতিবার অসমের সার্বিক পরিস্থতি খতিয়ে দেখতে ওই রাজ্যে যায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিদলটি । আট জনের সেই দলে ছিলেন দুই বিধায়ক মহুয়া মৈত্র ও ফিরহাদ হাকিম । এছাড়া বাকি ৬ সাংসদ হলেন অর্পিতা ঘোষ, মমতা বালা ঠাকুর, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, রত্না দে নাগ, সুখেন্দু শেখর রায় এবং নাদিমুল হক । পরিকল্পনা ছিল নাগরিকপঞ্জি নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানাতে প্রথমে শিলচর ও পরে গুয়াহাটি যাবে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল । বৃহস্পতিবার তৃণমূলের ওই প্রতিনিধিদলের কাউকে শিলচর বিমানবন্দরের বাইরে যেতে দেওয়া হয়নি । সমস্ত সময় তাঁদের নজরবন্দি করে রাখা হয় । শুক্রবার সকালে কলকাতায় ফিরেই তোপ দেগেছেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম । তিনি বলেন, ‘দাঙ্গাবাজ দল হচ্ছে বিজেপি, ভারতবর্ষ সবার ভারতবর্ষের বিধায়করা সব জায়গায় যেতে পারে, অগনতান্ত্রিকভাবে বিজেপি সরকার আমাদেরকে মানুষের কাছে পৌঁছাতে দেয়নি’৷ তৃণমূলের ওই প্রতিনিধি দলের সদস্য তথা বারাসতের সাংসদ ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের অভিযোগ, ‘অসমের অভিজ্ঞতায় মনে হয়েছে, দেশে আইনের শাসন আছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে । যেন অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে’ ।
গতকাল শিলচরের ঘটনা ও এনআরসির প্রতিবাদে আগামী দু’দিন রাজ্যে কালাদিবস পালন করবে তৃণমূল | শুক্রবার তিলজলার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে একথা জানান, তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় । পার্থবাবু বলেন, ‘জেলায়, জেলায়, ব্লকে, ব্লকে তৃণমূল কর্মীরা আগামী ২ দিন কালাদিবস পালন করবে । স্লোগান তোলা হবে দানবিক সরকার আর নেই দরকার’।
এদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, একদিকে, অসমে নাগরিকপঞ্জি থেকে ৪০ লাখ বাঙালির নাম বাদ, অন্যদিকে শিলচর বিমানবন্দরে অসম পুলিশের হাতে তৃণমূল জনপ্রতিনিধিদের নিগ্রহ, এই দুয়ের প্রতিবাদেই কালাদিবস পালন করবে তৃণমূল কংগ্রেস । আজকের সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপি বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় । রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্যই অসমের বিজেপি সরকার একাজ করেছে বলে তোপ দাগেন তিনি । বলেন, শুধু বাঙালি নয় । অসমিয়া, বিহারের হিন্দিভাষী লোকদের নামও নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে । বাদ দেওয়া হয়েছে সাড়ে ১২ লাখ হিন্দুকে । শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ, সংখ্যালঘুদেরও নাগরিকপঞ্জি থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে । তিনি বলেন, অসমের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয় । সংবিধানে নাগরিকদের যে অধিকার আছে তা লঙ্ঘিত হচ্ছে। মানবিক দিক থেকে কোনও কিছু দেখা হচ্ছে না । অমর্যাদাকর কাজ করেছে । সেই কাজ যদি কেউ দেখতে যায় তাহলে জনপ্রতিনিধিদের উপর এরা আক্রোশ দেখাচ্ছে । তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা ও সত্য না জানতে দেওয়ার চেষ্টা করছে । এর প্রতিবাদে আমাদের কালাদিবস ।
অন্যদিকে আজও এনআরসি নিয়ে তৃণমূলের ভূমিকার সমালোচনা করে বিজেপি নেতৃত্ব | তারা শুক্রবার বিজেপি-র সম্পাদক সায়ন্তন বসু জানান, “এ রাজ্যের এমন কোনও থানা নেই, যেখানে আমাদের দলের কারও নামে এফআইআর হয়নি|”
এনআরসি-র উপযোগিতা বোঝাতে রাজ্যব্যাপী আন্দোলনে নামছে বিজেপি। আগামী ৯ আগস্ট বিভিন্ন জেলায় ডিএম অফিসে দলের তরফে এ ব্যাপারে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। শুক্রবার দলের দুই নেতা সায়ন্তন বসু এবং মোহিত রায় এ ব্যাপারে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। তৃণমূল কংগ্রেস আগামী শনি ও রবিবার যে কালা দিবসের ডাক দিয়েছে, তার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সায়ন্তন বসু বলেন, “ওদের মুখই তো কালো| এর পর আবার কালা দিবস? ভারতীয় মুসলিমরা আমাদের ভাই| তাঁরা সম্মানের সঙ্গে থাকবেন| বিভ্রান্তি, ঘৃণা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে|”
সায়ন্তন বসু বলেন, “১৯৭১ থেকে বাংলাদেশের আক্রান্ত সংখ্যালঘু এ দেশে এসেছেন, তাঁদের এক জনকেও ফেরত পাঠানো হবে না| এ কথা কেন্দ্রীয় সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে| এর জন্য় সিটিজেনস অ্যাক্ট সংশোধনের কাজ আটকে দিয়েছে বিরোধীরা | তারা চায় একই অধিকারে মুসলিমদেরও নাগরিকত্ব দিতে হবে|”
সায়ন্তনবাবু এ দিন বলেন, “২০১৪-র আগে পর্যন্ত যে সব হিন্দু এসেছেন এ দেশে, তাঁদের কোনও চিন্তা নেই| ২০১৫-র ৭ সেপ্টেম্বর পাসপোর্ট ও বিদেশী আইন সংশোধন করা হয়েছে| এর ভিত্তিতে ২০১৬-র ১৯ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং নাগরিকত্ব বিল এনেছেন|”
এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের পাগলামী রাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর স্পষ্ট দাবি, কারও নাম অসমের নাগরিকপঞ্জী থেকে জোর করে বাদ দেওয়া হয় নি। শুক্রবার দিলীপবাবু কলকাতায় বলেন, “পার্থ বাবুরা অসমের এনআরসি নিয়ে যে রাজনীতি করছেন, তা বাংলা, দেশ বা মানুষের স্বার্থে নয়। “ শনি-রবি তৃণমূল কংগ্রেসের ডাকা কালা দিবস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যাঁরা শিলচরে গিয়ে মুখ কালো করে এলেন তারা কি করে কালা দিবস পালন করবে? পাগলামী রাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত। কালা দিবসের কি আছে, ‘বুরি নজরবালা তেরা মুখ কালা।’
মমতার জিদে সব শেষ হয়ে যাবে। এ কথা জানিয়ে দিলীপবাবু বলেন, অসমে যে কেউ যান কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু ওখানে উত্তেজনার তৈরির উদ্দেশ্যে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা গিয়েছিলেন। তাই পুলিশ তাঁদের আটকিয়েছে। ওখানে যাঁরা তৃণমূলে ছিলেন তাঁরা পদত্যাগ করেছেন। আমার মনে হয় তারা বিজেপিতে যোগ দেবেন। ওখানে গিয়ে লাভ নেই। তৃণমূল ওখানে উঠে গেছে।”
এদিকে, এনআরসি ইস্যুতে গত বুধবারের রেল অবরোধ নিয়ে মতুয়া সম্প্রদায়ের কিছু লোককে নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ করেন সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর । শুক্রবার তিনি এবং সঙ্ঘের সভাপতি হরিদাস গোঁসাই কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা জানান। তাঁরা এ দিন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গেও কথা বলেন।
অসমে এনআরসি-র প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে উত্তর ২৪ পরগণার বিভিন্ন স্টেশনে রেল অবরোধ হয়| পূর্ব রেলের দাবি, এর জন্য় বাতিল করতে হয় ৫১ জোড়া ট্রেন | লক্ষ লক্ষ লোকের ভোগান্তি হয় | তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি ছিল, এই অবরোধ হয়েছে মূলত এনআরসি নিয়ে মতুয়াদের প্রতিবাদ হিসাবে| সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর এ দিন জানান, “আমরা ওই দিন রেল অবরোধে সামিল হইনি | সর্বভারতীয় মতুয়া মহাসঙ্ঘ-র ব্যানার সে দিন আন্দোলনকারীদের কাছে দেখা গিয়েছে| কিন্তু মতুয়াদের একটাই মাত্র রেজিস্টার্ড সংগঠন| সেটা আমাদেরই | মতুয়াদের দ্বিতীয় কোনও সংগঠন আছে কি না, জানা নেই |”
বড় মা কি আপনাদীর সঙ্গে? কোনও বিধায়ক-সংসদ কি আপনাদীর সঙ্গে আছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে শান্তনু ঠাকুর সাংবাদিকদের জানান, “বড় মা অবশ্যই আমাদের সঙ্গে জড়িত| আমাদের সদর দফতরও ঠাকুরবাড়িতে| ওই রকম ব্যানার নিয়ে রেল অবরোধে আমাদের মতুয়া ধর্মকে অপমান করা হয়েছে| এটা অত্যন্ত দুঃখের|”