নয়াদিল্লি, ৩ আগস্ট (হি.স.) : অসমে এনআরসি ইস্যু নিয়ে শুক্রবার রাজ্যসভায় প্রক্রিয়া দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং| এই মুহূর্তে এনআরসি ইস্যুতে উত্তাল জাতীয় রাজনীতি| এমতাবস্থায় এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জানালেন, ‘গত ৩০ জুলাই অসম এনআরসি-র যে খসড়া প্রকাশিত হয়েছে, তা চূড়ান্ত নয়|’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, অশান্তি বাধাতে কেউ কেউ ভুল তথ্য দিচ্ছেন|
শুক্রবার সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় অসম এনআরসি ইস্যুতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, ‘১৯৮৫ সালে এনআরসি প্রক্রিয়া শুরু হয়, সেই সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন প্রয়াত রাজীব গান্ধী| ২০০৫ সালে মনমোহন সিং সরকারের আমলে এই প্রক্রিয়া আপডেট করার সিদ্ধান্ত হয়|’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতেই অসম এনআরসি প্রক্রিয়া চলছে| আমি পুনরায় জানাতে চাই, ৩০ জুলাইয়ে এনআরসি খসড়া চূড়ান্ত নয়| প্রত্যেকেই পুনরায় আবেদন করার সুযোগ পাবেন| উপযুক্ত নথি থাকলে কারও নাম বাদ যাবে না| স্বচ্ছতার সঙ্গেই নাগরিকপঞ্জির তালিকা প্রকাশ করা হবে| উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, ‘এনআরসি নিয়ে কেউ কেউ ভুল তথ্য দিচ্ছেন| এতে দেশের অভ্যন্তরে অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে| মিথ্যাচার বন্ধ করার জন্য আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি আমি| দেশের সুরক্ষার কথাটি আপনারা ভাবুন|’
অসমের জাতীয় নাগরিকপঞ্জিকরণ (এনআরসি)-এর দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর চরম উত্কণ্ঠায় রয়েছেন প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ| এদিকে অসমের ওই সমস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে বৃহস্পতিবার অসমের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল| কিন্তু উত্তর-পূর্বের ছোট্ট শহর শিলচর-এর বিমানবন্দরে বৃহস্পতিবার যা হয়েছে, তা এক কথায় অকল্পনীয়| বেলা দু’টোর সামান্য আগে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল শিলচর বিমানবন্দরে নামতেই নিরাপত্তা বাহিনী তত্পর হয়ে ওঠে| শিলচর বিমানবন্দরেই আটকে দেওয়া হয় তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে| যদিও রাতভর শিলচর বিমানবন্দরে কাটানোর পর শুক্রবার সকালে কলকাতায় ফেরেন তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা|
এ প্রসঙ্গে শুক্রবার লোকসভায় বিবৃতি দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, ‘২ আগস্ট, সম্পূর্ণ প্রোটোকল অনুযায়ী শিলচর বিমানবন্দরে স্বাগত জানানো হয়েছিল তৃণমূল প্রতিনিধি দলকে| তাঁদের ফিরে যেতে বলা হয়েছিল| কিন্তু, তাঁরা বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন, এর ফলে দু’জন মহিলা নিরাপত্তা রক্ষী আহত হয়েছেন| বেশ কয়েকজন যাত্রীও অসুবিধার মধ্যে পড়েন|’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, ‘সিআরপিসি-র ১৫১ নম্বর ধারা অনুযায়ী প্রতিনিধি দলকে আটক করে পুলিশ| শিলচর বিমানবন্দরের কাছে গেস্ট হাউসে থাকার ব্যবস্থা করা হয়| আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পরিস্থিতি এমনভাবে পরিচালিত হয়|’
এদিন শিলচর বিমানবন্দরে তৃণমূল প্রতিনিধি দলকে হেনস্থার প্রতিবাদে লোকসভার অধিবেশনের শুরুতেই মুলতুবি প্রস্তাব পেশ করেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়৷ অাবার রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, কংগ্রেস অসমে এনআরসি জারির বিরুদ্ধে নয়, কিন্তু যেভাবে তা প্রয়োগ করা হচ্ছে, কংগ্রেস তার বিপক্ষে। তিনি এও বলেন নাগরিকপঞ্জি জারি করার আগে, রাজীব গান্ধীর আমলের কিছু নীতি মেনে চলা উচিত বিজেপির। আজাদ অারও বলেন, কোনও ভারতীয় যাতে হেনস্থা না হন, সেদিকে নজর রাখা উচিত সরকারের। বিজেপি গোটা বিষয়টি মেরুকরণ করছে। সরকারের উচিত সাধারণ মানুষ, যারা এনআরসি ইস্যুতে সমস্যায় পড়েছেন, তাদের আইনি সাহায্য করা। এছাড়াও মানুষকে আরও সময় দেওয়া উচিত যাতে তারা নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করার সুযোগ পেতে পারে। বিমানবন্দরে হেনস্থা করার অভিযোগে সংসদে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ ও প্রিভিলেজ মোশনের দাবির প্রতিক্রিয়া জানাল রাজ্য বিজেপি|
শিলচরের ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার লোকসভায় স্লোগান দিতে শুরু করেন তৃণমূল সাংসদরা। জিরো আওয়ারে অধ্যক্ষ সুমিত্রা মহাজনের কাজ চালিয়ে যাওয়ার মাঝেই বিক্ষোভ চলে। এছাড়া রাজ্যসভায় তৃণমূল প্রিভিলেজ মোশন নোটিশ দেয়। এর কয়েক ঘন্টার মধ্যে বিজেপি-র সম্পাদক সায়ন্তন বসু সাংবাদিকদের বলেন, “আসানসোলে এত কান্ড ঘটে গিয়েছিল| স্থানীয় সংসদ বাবুল সুপ্রিয়কে রাজ্য সরকার সেখানে ঢুকতে দেয়নি| আমরা যদি সেটা নিয়ে প্রিভিলেজ মোশন নোটিশ দিই?\”অন্যদিকে, অসমে তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিনিধিদলের অাচরণে এদিন দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, ‘অসমে নাগরিকপঞ্জির তালিকা প্রকাশ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল। এটা নেহাত গিমিক।’
গত সোমবার অসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশের পরই বিজেপির বিরুদ্ধে ‘বাঙালি খেদাও’ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি মঙ্গলবার দিল্লিতে গিয়ে এর জেরে গৃহযুদ্ধ বাঁধতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। বৃহস্পতিবার অসমের কাছাড় জেলায় প্রতিনিধিদল পাঠায় তৃণমূল। শিলচর বিমানবন্দরে অবতরণের পর আটকে দেওয়া হয় তৃণমূলের প্রতিনিধিদের।
শিলচরের ঘটনার প্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার এফআইআর দায়ের করে অসম পুলিশ। এর পাল্টা হিসেবে শুক্রবার কলকাতায় ফিরেই পদক্ষেপ নিল তৃণমূল৷ তৃণমূলের পক্ষ থেকে এবার অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়ালের বিরুদ্ধে এফআফআর দায়ের করা হয়৷ শিলচর বিমানবন্দরে হেনস্থার অভিযোগে বিধায়ক মহুয়া মৈত্র আলিপুর থানায় এদিন একটি পৃথক অভিযোগ দায়ের করেন৷ অন্যদিকে দুই সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার ও মমতা বালা ঠাকুর বিমানবন্দর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন৷
এদিকে অাগামীকাল শনিবার এনআরসি ইস্যুতে এক বৈঠকে বসবে কংগ্রেস। যেখানে এই ইস্যুতে দলের অবস্থান নিয়ে আলোচনা হবে। কারণ এই বিষয়ে দলের নেতারা এক এক জন, এক এক রকম সুরে কথা বলছেন। এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। শনিবারের বৈঠকে এনআরসি ইস্যুতে দলের অবস্থান স্থির করা হবে বলে কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে।