কলকাতা, ৩১ জুলাই (হি.স.): কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্যের জন্য আর্থিক দাবি আদায়ে বিধানসভার কক্ষে তৃণমূলের সঙ্গে একজোট হচ্ছে বিরোধী কংগ্রেস ও বাম। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের উপরে একটি প্রস্তাব নিয়ে বিধানসভার অধিবেশনে আলোচনা হবে মঙ্গলবার। বামেদের প্রস্তাবিত ওই আলোচনার খসড়ায় প্রথমে কংগ্রেস এবং পরে তৃণমূলও সম্মতি দিয়েছে। যেহেতু প্রস্তাবের মনোভাব কেন্দ্র-বিরোধী, তাই বিজেপি ওই খসড়ায় সহমত জানায়নি। রাজ্যের ন্যায্য দাবি যাতে কেন্দ্র মিটিয়ে দেয়, তার জন্য মঙ্গলবার সরব হবেন তৃণমূল, বাম ও কংগ্রেস বিধায়কেরা।
কেন্দ্রীয় কর বাবদ সংগৃহীত অর্থের পঞ্চাশ শতাংশ রাজ্যগুলিকে দিতে হবে,একদা এই দাবিতে সরব হতো বামেরা। কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারের কাছেই এই নিয়ে দরবার করতেন বামফ্রন্ট নেতারা। বিরোধী আসনে বসেও সেই একই দাবি নিয়ে অর্থ কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। সরকারের প্রাপ্য আর্থিক সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে বঞ্চিত করা হচ্ছে। রাজ্যের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করছে না কেন্দ্র। রাজ্য এমনই দাবি করা হয়েছে তিন পক্ষের স্বাক্ষরিত ওই প্রস্তাবে।
এই সর্বদলীয় প্রস্তাবের সৌজন্যে এখন কংগ্রেসও শামিল হয়েছে। তৃণমূলও সরব হয়েছে। তবে ক্ষমতায় বসা থেকে তৃণমূল সরকার একই দাবি জানিয়ে আসছে। অর্থ কমিশনের রূপরেখা অনুসারে কর বাবদ সংগৃহীত অর্থ বন্টনের ক্ষেত্রে জনসংখ্যার ভিত্তি, ১৯৭১ এর পরিবর্তে ২০১১ ধার্য করা হয়েছে। যার ফলে পশ্চিমবঙ্গ সহ অনেক রাজ্য বহুলাংশে বঞ্চিত হচ্ছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ।
রাজ্যের স্বার্থে এমন প্রস্তাবের উপরে আলোচনায় অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকছেন না। চলতি অধিবেশনে অন্তত এক দিন যাতে তাদের দেওয়া কোনও একটি বেসরকারি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়, সেই দাবি তুলেছিল বিরোধীরা। শেষ পর্যন্ত অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে কার্য উপদেষ্টা (বি এ) কমিটির বৈঠকে ঠিক হয়েছে, অর্থ কমিশনের উপরে বিধানসভার কার্যবিধির নির্দিষ্ট ধারায় সরকারি প্রস্তাবই আসবে। বিধানসভায় এক অবসরে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন ওই আলোচনায় থাকার জন্য। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিনি সোমবারই দিল্লি চলে যাচ্ছেন।
একশো দিনের কাজ থেকে শুরু করে আবাসন— এমন নানা প্রকল্পে কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের ১৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি পাওনা রয়েছে বলে সরকারি সূত্রের বক্তব্য। রাজ্যের প্রতি ‘বঞ্চনা’ ছেড়ে কেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মেনে চলুক, এই মর্মে প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে ৩১ তারিখ। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের কথায়, ‘‘রাজনৈতিক মতভেদ সরিয়েই রাজ্যের বঞ্চনার প্রশ্নে আমরা কথা বলতে চাই।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘রাজ্য থেকে আদায় করা করের ৫০% রাজ্যকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক, এই দাবি আমাদের আছে অর্থ কমিশনের কাছে। সরকার কে চালাচ্ছে, বড় কথা নয়। এতে রাজ্যের উপকার হবে।’’
বি এ কমিটির যে বৈঠকে ওই সূচি ঠিক হয়েছে, সেখানে শাসকদলের পক্ষে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সরকারপক্ষের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ, উপ-মুখ্য সচেতক তাপস রায়,সুজিত বসু প্রমুখ হাজির থাকলেওপরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন না। বিএ কমিটির মিটিংয়ে পরিষদীয় মন্ত্রীর গরহাজিরা বেশ বিসদৃশ ঘটনা বলে মনে করেন শাসক এবং বিরোধী উভয় শিবিরের একাধিক প্রতিনিধি। বিরোধী দলের সচতেক মনোজ চক্রবর্তীর প্রশ্ন, ‘‘পরিষদীয় মন্ত্রীর চাপেই আগের দিন বিল পিছিয়ে গেল। আবার এ দিন তিনি বি এ কমিটিতেই এলেন না। তা হলে আর বৈঠকের কী গুরুত্ব থাকে?’’
বিরোধীদের আর্জির জের টেনেই সরকারপক্ষ ওই প্রস্তাবকে সর্বদলীয় ঐক্যের রূপ দিতে চায়। উল্লেখ্য, সম্প্রতি অর্থ কমিশনের কর্তাদের রাজ্য সফরের সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের হাতে আর্থিক বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানানো হয়। রাজ্যের স্বার্থের পক্ষে এই প্রশ্নে বাম ও কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও পঞ্চদশ কমিশনে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল। রাজ্যের সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দল পঞ্চদশ অর্থ কমিশনে দরবার করলেও রাজ্য বিজেপি সে বিষয়ে কোনও তৎপরতা দেখায়নি। বিএ কমিটির বৈঠকেও সর্বদলীয় প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেননি দলের বিধায়ক ও রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।