নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২০ জুন৷৷ প্রথা ভেঙে অধ্যক্ষকে না জানিয়ে বিরোধী দলনেতার বিধানসভায় অনুপস্থিতিকে কেন্দ্র করে বুধবার রাজ্য

বিধানসভায় তীব্র হই হট্টগোল হয়েছে৷ রাজ্য বিধানসভায় শাসকদলের সদস্যরা বিরোধী সিপিআইএমকে দেশদ্রোহী বলেও আখ্যায়িত করেন৷ সিপিএমকে দেশদ্রোহী বলা এবং বিরোধী দলনেতাকে উদ্দেশ্য করে শাসক দলের সদস্যদের ব্যক্তিগত আক্রমণের প্রতিবাদে এদিন বিরোধী দলের সদস্যরা অধিবেশনের প্রথমার্ধে ওয়াক আউট করেন৷ দ্বিতীয়ার্ধে অধিবেশন পুনরায় শুরু হলে বিধানসভার প্রসিডিংস থেকে সিপিএম দেশদ্রোহী শব্দটি বাতিলের দাবি জানান বিরোধী দলের সদস্যরা৷ অধ্যক্ষ বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে বিরোধী সদস্যদের আশ্বস্ত করেন৷
বিধানসভায় প্রথা অনুযায়ী বিরোধী দলনেতা কিংবা মুখ্যমন্ত্রী যদিও কোনও কারণে বিধানসভার অধিবেশন চলাকালীন সময়ে অনুপস্থিত থাকেন তা হলে সে সম্পর্কে বিধানসভার অধ্যক্ষকে আগাম জানাতে হয়৷ সেই সঙ্গে তাদের অনুপস্থিতে কে দায়িত্ব পালন করবেন তাও উল্লেখ করে অধ্যক্ষকে জানাতে হয়৷ কিন্তু প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার বুধবার বিধানসভায় অনুপস্থিতিত ছিলেন এবং সে সম্পর্কে অধ্যক্ষকে জানাননি৷ এমন কি এই গুরুদায়িত্বে অন্য কারোর নাম ঘোষণাও করা হয়নি৷ শাসকদলের তরফে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়৷ কিন্তু মানিক সরকারের পক্ষ অবলম্বন করে সিপিআইএম বিধায়ক বাদল চৌধুরী সওয়াল করতে থাকেন৷ এ নিয়ে তীব্র বাকবিতন্ডা শুরু হয়৷ এক সময় ক্ষুব্ধ হয়ে বিরোধী দলের সদস্যরা সভা থেকে ওয়াকআউট করেন৷ এরপরই অধ্যক্ষ মধ্যাহ্ণভোজের বিরতি ঘোষণা করেন৷ চলতি বিধানসভা অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন বুধবার মাকি সরকার বিধানসভা অধিবেশনে অনুপস্থিত ছিলেন৷ বিজেপি বিধায়ক ডাঃ দিলীপ দাস সএবং অরুণচন্দ্র ভৌমিক বিধানসভার স্পিকার রেবতীমোহন দাসের কাছে জানতে চান, বিরোধী দলনেতা বিধানসভা অধিবেশন চলাকালীন সময়ে জাতীয় সঙ্গীত শেষ হওয়ার পর সভায় প্রবেশ করেন৷ এমন কি অধ্যক্ষকে না জানিয়ে হাউসে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা চললেও তিনি অনুপস্থিত৷ তিনি তার অনুপস্থিতির কারণ স্পিকারকে জানিয়ে আগেই বার্তা পাঠানো উচিত ছিল৷
তাদের এই প্রশ্ণের প্রেক্ষিতে একসঙ্গে উঠে দাঁড়ান বিরোধী দলের তিন বিধায়ক বাদল চৌধুরী, রমেন্দ্রচন্দ্র দেবনাথ এবং তপন চক্রবর্তী৷ তারা বিজেপি বিধায়ক অরুণচন্দ্র ভৌমিকের প্রশ্ণের বিরোধিতা করে বলেন, ব্যক্তিগত কারমে একদিনের জন্য কোনও বিধায়ক অধিবেসনে উপস্থিত না ও থাকতে পারেন৷ এর জ্য অনুমতির প্রয়োজন নেই৷ কিন্তু শাসকদলের সদস্যরা অতীতের দৃষ্টান্ত তুলে দরে পদ্ধতিগত বিষয় তুলে ধরেন৷ কিন্তু বিরোধীরা এ সব মানতে নারাজ ছিলেন৷
তখন বিজেপি বিধায়ক অরুণচন্দ্র ভৌমিক টিপ্পনি করে বলেন, আসলে সিপিআইএম দেশদ্রোহী ও জাতীয় সঙ্গীতেরও বিরোধী৷ তাই তাদের নেতা এমন আচরণ করেন৷ এ কথা শুনে বিরোধী বিধায়করা একসঙ্গে প্রবল আপত্তি করেন৷ তখন বিজেপি বিধায়কদের তরফে বলা হয়, বিধায়কদের জীবনপঞ্জিতে সকলের ফোন নম্বর থাকলে মানিক সরকারের জীবনপঞ্জিতে ফোন নম্বর নেই৷ এতে মন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মন তার বক্তব্য সংযোজন করেন৷ যা ঘৃতাহুতির কাজ করে৷ তিনি বলেন, বিধায়কদের জীবনপঞ্জিতে তাদের বাবা মার নাম থাকলেও মানিক সরকারের ক্ষেত্রে তার উল্লেখ নেই৷ তখন বিরোধী বিধায়করা বলেন, সভায় ব্যক্তিগত আক্রমণ করে সময় নষ্ট করা হচ্ছে৷ এর প্রতিবাদে বিরোধীরা সভা থেকে ওয়াকআউট করেন৷ এরপর অধ্যক্ষ সভায় ভোজনাবকাশের বিরতি ঘোষণা করেন৷
এক ঘন্টা পর পুনরায় অধিবেশন শুরু হলে বাদল চৌধুরী আবার উঠে দাঁড়ান এবং তার দলের বিরুদ্ধে আনা দেশদ্রোহিতার অভিযোগ বিধানসভায় রেকর্ড বাতিল করার জন্য দাবি জানাতে থাকেন৷ তার মতে, ভারতের নির্বাচন কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত এই দল ত্রিপুরায় টানা ২৫ বছর ও তার আগে আরও ১০ বছর রাজ্যের শাসনক্ষমতায় ছিল এবং নির্বাচন কমিশনের দ্বারা স্বীকৃত দলকে কোনওভাবেই দেশদ্রোহী বলা যায় না৷ কিন্তু এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় সভায় বাকবিতন্ডা শুরু হয়৷ শাসকদলের সদস্যরা বিরোধীদের দাবি খন্ডন করেন৷ আইন তথা সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী রতন লাল নাথ এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুদীপ রায়বর্মন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিরোধীদের দাবি খণ্ডন করে বিধানসভার প্রসিডিং তুলে ধরে যুক্তির অবতারণা করেন৷ অবশেষে অধ্যক্ষ রেবতীমোহন দাস এই শব্দের বব্যহার নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত আগামীকাল বিচার বিশ্লেষণ করে দেখবেন বলে আশ্বস্ত করায় সভা আপাতত শান্ত হয়৷