সিপিএমকে আইসিইউতে পাঠিয়েছেন নেতৃত্বরাই, বোমা ফাটালেন খোয়াইয়ের প্রাক্তন বিধায়ক

নিজস্ব প্রতিনিধি, খোয়াই, ১৮ এপ্রিল৷৷ যাহা রটে তাহা কিছুটা হলেও বটে৷ সদ্য সমাপ্ত ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনে প্রাককালে খোয়াই বিধানসভা কেন্দ্রে বাম প্রার্থী বদল নিয়ে ঘটে যাওয়া নাটকীয় ঘটনার উপর থেকে পর্দা তুললেন প্রতারণার শিকার পার্টির খোয়াই জেলা কমিটির সম্পাদক তথা প্রাক্তন বিধায়ক বিশ্বজিৎ দত্ত৷ দীর্ঘ ৫৩ বছরের রাজনৈতিক জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে খোয়াইয়ের অন্যতম প্রবীণ পার্টি নেতৃত্ব, সিপিএম রাজ্য কমিটির সদস্য, খোয়াই জেলা সম্পাদক তথা প্রাক্তন বিধায়ক দল থেকে অব্যাহতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন৷ ক্ষোভ উগড়ে দিলেন সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দাসের বিরুদ্ধে৷ সেই সাথে দলের প্রতি অতিমাত্রায় ক্ষোভ এবং প্রবীণ পার্টি নেতৃত্বের প্রতি অবমাননাকর ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ২০১৮ বিধানসভার নির্বাচনে খোয়াই কেন্দ্র প্রার্থী বদল করার ঘটনাকে কটাক্ষ করে বুধবার দুপুরে নিজ বাসভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে সিপিএম দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন এই প্রবীণ সিপিএম নেতৃত্ব৷
সাংবাদিক সম্মেলনে নিজের প্রতি অবমাননাকর পরিস্থিতির কথা বলতে বিশ্বজিৎ দত্ত ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন৷ নিজেকে সামলে নেবার বরাবর চেষ্টা চালিয়ে যান তিনি৷ কিন্তু কম্পিত কণ্ঠেই ২৮ জানুয়ারি ২০১৭ থেকে টানা ৩ দিন চলা নাটকীয় ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ সংবাদ মাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন খোয়াইয়ের এই প্রাক্তন বিধায়ক৷ সমস্ত ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে তিনি বলেন, আমার রাজনৈতিক জীবনের বামপন্থী আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটতে চলেছে৷ সিপিমে চক্রান্ত করে তাঁকে প্রার্থী হতে দেয়নি৷ বিভিন্নভাবে তাকে অপমানিত করা হয়েছে৷ কিন্তু খোয়াইর জনগণ তাকে অনেক সম্মান ও ভালোবাসা দিয়েছে৷ তাই তিনি অনেক সম্মান কুড়িয়েছেন৷ কিন্তু বিগত কয়েক বছর যাবতই পার্টির মধ্যে একটা দুষ্ট চক্র তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে চলছিল বলে জানান তিনি৷ আরও বলেন, ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনের দোড়গোড়ায় এসে তাকে প্রার্থী করেও শেষ মুহুর্তে প্রার্থী বদল নিয়ে অনেক বাদানুবাদ হয়েছে৷ প্রথমে জিবি হাসাপাতলে এবং পরবর্তী সময় আইসিইউতে ভর্তি হওয়া নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছে৷ কিন্তু সাংবাদিক সম্মেলনে পার্টির এই প্রবীণ নেতৃত্ব সুখেন্দু বিকাশ দে’র প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ আষাঢ়ে গল্প ছাড়া আর কিছুই ছিল না৷ সিপিএম নেতৃত্ব গৌতম দাসকে একহাত নিয়ে তিনি বলেন, ২৮ জানুয়ারি ৩-৪ দিন নাকি বিশ্বজিৎবাবু অসুস্থ বলে মিথ্যাচার করেছেন তিনি৷ বিশ্বজিৎবাবু বাচাইবাড়িতে জনসভা করেন এবং সেদিন রাতেই আবার কর্মী সভাও করেন৷ শুধু তাই নয় নির্বাচনের পূর্বে নির্বাচন কমিশনের নিয়মানুযায়ী পরদিন রাজ্যকমিটির সদস্যদের নিয়ে রাজ্য কমিটির মিটিং ডাকা হয়েছিল৷ অথচ বিধানসভার সদস্য হলেও বিশ্বজিৎ দত্তকে এই মিটিং সম্পর্কে অবগত করা হয়নি৷ অথচ খোয়াই থেকে যথারীতি বিধানসভার সদস্য পদ্ম দেববর্মা, রানাবাহাদুর দেববর্মা এবং রঞ্জিত দেববর্মা ওই মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেন৷
বিশ্বজিৎবাবু প্রশ্ণ করেন, যদি আমি এতটাই অসুস্থ হতাম তবে এই সুহৃদয় ব্যক্তিরা প্রার্থী তালিকা ঘোষণার আগে ২৪, ২৫, ২৬ জানুয়ারি দিনগুলিতে কেন আমার খোঁজ খবর নিলেন না৷ আমার পাড়া প্রতিবেশী কেউ জানল না? মিডিয়াও জানল না৷ এদিকে ২৮ জানুয়ারি দুপুর ২ টায় পার্টির খোয়াই নেতৃত্ব সুখেন্দু বিকাশ দে এবং নির্মল বিশ্বাস ছুটে যান বিশ্বজিৎ দত্তের বাসভবনে এবং বলেন সিপিএম নেতৃত্ব গৌতম দাস বলেছেন উনাকে আগরতলায় চিকিৎসার বিষয়ে যাবার জন্য৷ প্রয়োজনে ২৯ জানুয়ারি মনোনয়ন জমা না দিয়ে ৩১ জানুয়ারি দেওয়ার কথা বলা হয়৷ তিনি গিয়ে দেখেন বেড থেকে শুরু করে যাবতীয় ব্যবস্থা শুরু হয়ে গেছে৷ কেবিনে শুধু রোগীর অপেক্ষা৷ যথারীতি চিকিৎসকরা তাকে এক্সরে করার কথা বলেন৷ কিন্তু এক্সরে রুমে গিয়ে দেখেন সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষমান রয়েছেন গৌতম দাস৷ কিন্তু, বিশ্বজিৎ বাবুর সাথে একটি কথাও খরচ করেননি৷ এদিকে পরদিন সকালে চিকিৎসকরা জানান বিশ্বজিবাবুকে তিনি সুস্থ আছেন৷ কিন্তু ছুটি দেয়া হয়নি৷ বরং তাকে আইসিইউতে ভর্ত্তি হবার পরামর্শ দেওয়া হয়৷
তবে গোটা ঘটনাব পিছনে যে একটা রহস্য রয়েছে তা রাজ্যের মানুষ, খোয়াইয়ের মানুষ তা ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন৷ তবে তিনি অবাক হলেন কিভাবে তার অনুমতি ছাড়া কে বা কারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একখানা ছবি তোলা হয়েছে এবং তা সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে দেওয়া হল৷ কে খকন এই ছবি তুলল তা্য তিনি বুঝে উঠতে পারেননি৷ চক্রান্ত করে গোপনীয়ভাবেই এই ছবি তোলা হয়েছে বলে জানালেন বিশ্বজিৎবাবু৷ সেই সাথে তিনি রাজ্যকমিটিতে অভিযোগ জানাতে পারতেন৷ কিন্তু রাজ্য কমিটি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে রেখেছিল বৈঠকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে৷ রাস্তা খোলা ছিল বিষয়টি নিয়ে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটি, হাইকোর্ট বা সুপ্রিমকোর্টে যাওয়ার৷ কিন্তু তিনি তা করতে চাননি৷ এদিকে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বিশ্বজিৎ বাবু বলেন প্রার্থী বদলের সিদ্ধান্তের পর আপত্তিকরভাবে কোথাও কোথাও লাথি মেরে তার প্রচার সজ্জা ফেলে দেয়া হয় এবং খবরও তার কাছে রয়েছে৷ পহরমুড়া, লালছড়া, অফিসটিলায় এমন ঘটনা ঘটেছে বলে ডজনখানেক মানুষ তাকে জানিয়েছিলেন৷ প্রচণ্ড ক্ষোভ ব্যক্ত করতে গিয়ে প্রাক্তন বিশ্বজিৎ দত্ত বলেন, ভাল কর্মীদের প্রতি যে ব্যবহার করা তা না করাতেই আজ এই অবস্থায় পৌঁছেছে সিপিএম দল৷ তিনি বলেন, জোট আমলেও কাজ করেছি৷ ১৯৬৪-৬৫ ইং থেকে ছাত্র আন্দোলন দুঃসময়ে কাজ করেছি৷ ১৮ নির্বাচনের গণনা শেষে পার্টি অফিসে গিয়েছি৷ কিন্তু এখনও চক্রান্ত থেমে নেই৷ মানুষ, পার্টি কর্মী এখনও ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে আছে৷ বাড়ি ঘর ছাড়া বহু কর্মী৷ এদের পেছনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে৷ তাই পথের কাটা সরানোর জন্য এবং যারা উচ্চাভিলাষী, ক্ষমতালোভী তাদের কাছেই দায়িত্ব থাকার কথা৷ কারোর কারোর মনে জেলা সম্পাদক হওয়ার চিন্তাভাবনা আছে৷ কিন্তু আমার সংসদীয় রাজনীতির কোনো মায়া নেই৷ সেইজন্য আমি সরে যাচ্ছি৷ খোয়াই জেলা সম্পাদক পদ, রাজ্য কমিটির সদস্যপদ এবং সিপিএম পার্টির সাধারণ সভ্য পদ থেকে পদত্যাগ করার চিন্তা করে নিয়েছি৷ বুধবার দুপুরে নিজ বাসভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে এভাবেই সিপিএম পার্টি থেকে পদত্যাগ করার বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দিলেন খোয়াই কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক তথা পার্টির প্রবীণ নেতৃত্ব বিশ্বজিৎ দত্ত৷ শেষে বলেন, জোট আমলের কালো দিনে মানুষের কাছে ছুটে যেতে সবাই আমাকে দেখেছেন৷ কিন্তু আমাকে আইসিইউতে পাঠানো কিংবা প্রার্থী বদল করা ইত্যাদি বিষয় মানুষ এখনও মেনে নিতে পারেনি৷ যেখানে ঘটনার পর বিধানসভা নির্বাচনেও তিনি প্রচারে ছিলেন তাই খোয়াই বাসীর কাছে নানান প্রশ্ণ ওকিঝুঁকি দিচ্ছে৷ উনার এই সিদ্ধান্ত নিতে কেন এত দেরী? যদি বামফ্রন্ট ক্ষমতায় ফিরত উনি কি এই সিদ্ধান্ত নিতেন? এমনটাই জিজ্ঞাসা খোয়াইবাসীর৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *